ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পের শহর ঢাকা ও চিত্রকলায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জীবনচিত্র

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৫ জুলাই ২০১৮

শিল্পের শহর ঢাকা ও চিত্রকলায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জীবনচিত্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চার শ’ বছরের ইতিহাস আশ্রিত শহর ঢাকা। তবে যানজট ও জনজটের কবলে শহর হারাচ্ছে তার ঐতিহ্য। হারিয়ে যাচ্ছে মানবিক আবেগ-অনুভূতি। সুন্দরের আহ্বানে মানবিক ও শৈল্পিক নগর গড়তে নয়া উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করে নেয়া হয়েছে শিল্পের শহর ঢাকা শীর্ষক কর্মসূচী। সাধারণ মানুষের সঙ্গে শিল্পের সংযোগ ঘটাতে’ একাডেমির তিন দিনের এই আয়োজনটি শুরু হচ্ছে কাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে। শহরবাসীর মন রাঙ্গাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পরিবেশিত হবে পারফরমেন্স আর্ট। সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য অষ্টাদশতম এশিয়ান আর্ট বিয়েনালের অংশ হিসেবে একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলীর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে উদ্যোগটি। এর মাধ্যমে দেশে নিউমিডিয়া চর্চার অন্যতম অংশ পারফরমেন্স আর্ট পাবে নতুন মাত্র। এ আয়োজনের পাশাপাশি নেয়া হয়েছে ‘চিত্রকলায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক জীবনচিত্র’ শীর্ষক কর্মসূচী। এই কর্মসূচীর মাধ্যমে ৫০ জন শিল্পী কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অঞ্চল পরিদর্শন করেছে। তারা বিভিন্ন ক্ষুদ্র-জাতিসত্তার তথ্য উপাত্ত, স্থিরচিত্র এবং ক্ষেত্র বিশেষ স্কেচ তৈরি করেছে। আগামী ২ থেকে ৪ আগস্ট একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় অনুষ্ঠিত হবে আর্ট ক্যাম্প। ক্যাম্পে আঁকা হবে ৫০টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক জীবনের ১৫০টি চিত্রকর্ম। চূড়ান্ত পর্যায়ে সেসব চিত্রকর্ম নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। এছাড়াও বর্ষামঙ্গল, কবি কায়কোবাদ স্মরণ এবং আগস্ট মাসজুড়ে থাকছে শোক দিবসের কর্মসূচী। মঙ্গলবার সকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এসময় উপস্থিত ছিলেন একাডেমির সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী, ‘শিল্পের শহর ঢাকা’ কর্মসূচীর কিউরেটর মাহবুবুর রহমান প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার সকালে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শিল্পের শহর ঢাকা নামের কর্মসূচীর উদ্বোধন হবে। উদ্বোধন করা হবে ‘শিল্পের শহর ঢাকা’। ২৮ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শিল্পীরা পারফর্মেন্স আর্ট পরিবেশন করবেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে শিল্পের সংযোগ ঘটাতে শহরজুড়ে ছড়ানো আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, পুরনো ঢাকা, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ও সংসদ ভবন এলাকায় শিল্পীদের পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হবে। আয়োজনটি প্রসঙ্গে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, শিল্পের শহর ঢাকা কর্মসূচীর অনুপ্রেরণায় রয়েছে এই শহরে ৪০০ বছরের ইতিহাস। আজ এই শহরের পরিচিতি মেগাসিটি হলেও নাগরিক নানা সংকটে এ শহরের ঐতিহ্য মানুষ ভুলতে বসেছে। যানজটের চাপে এখানে মানবিক আবেগগুলো অনেকখানিই উপেক্ষিত। সেই প্রেক্ষাপটে শহরবাসীকে তার পুরনো ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে এবং মানুষের মাঝে শিল্পের বোধ ছড়িয়ে দিতেই নেয়া হয়েছে এই কর্মসূচী। এছাড়াও ‘চিত্রকলায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক জীবনচিত্র’ কর্মসূচীর আওতায় ক্ষুদ্র-জাতিসত্তার তথ্য উপাত্ত, আলোকচিত্র এবং ক্ষেত্র বিশেষ স্কেচের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২ থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত। ২৯ জুলাই সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে ‘বৃষ্টির পদাবলি’ শীর্ষক বর্ষার গানের অনুষ্ঠান। সহযোগিতায় থাকবে সরকারী সঙ্গীত কলেজ। মহাকবি কায়কোবাদ স্মরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ জুলাই। শোকের মাস আগস্টের কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চিত্রকলা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, শিশুদের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর গান, বাউল শিল্পীদের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর গান, ‘মুজিব মানে মুক্তি’ নাটক মঞ্চায়ন, নৃত্যনাট্য ‘যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা যমুনা বহমান’ এবং কবিতায় বঙ্গবন্ধু শিরোনামে কবিতা পাঠের আসর। ‘ক্লাসের ফাঁকে বইমেলা’ ॥ মঙ্গলবার থেকে ঢাকা ইমপেরিয়াল কলেজ ক্যাম্পাসে শুরু হলো ‘ক্লাসের ফাঁকে বইমেলা-২০১৮’। মেলার উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও গবেষক জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন আহমদ পাবলিশিং হাউসের কর্ণধার মেছবাহউদ্দীন আহমদ। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান ও ঢাকা ইমপেরিয়াল কলেজ গবর্নিং বডির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ সাজাহান মিয়া। ড. হারুন-অর-রশিদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, বই হলো জ্ঞানের ভা-ার। বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। বেশি বেশি সৃজনশীল বই এবং মুক্তিযুদ্ধের বইপড়ার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। মেছবাহউদ্দিন আহমদ সৃজনশীল বইমেলার আয়োজনে সহযোগিতা করার জন্য ঢাকা ইমপেরিয়াল কলেজ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোঃ সাজাহান মিয়া ঢাকা ইমপেরিয়াল কলেজ ক্যাম্পাসে এ ধরনের সৃজনশীল বইমেলা আয়োজনে সহযোগিতার জন্য সৃজনশীল প্রকাশক ঐক্য পরিষদকে ধন্যবাদ জানান। বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কলেজ অধ্যক্ষ আরিফ আহমদ। তিনি কলেজ ক্যাম্পাসে এ বইমেলা আয়োজনের জন্য ঢাকা ইমপেরিয়াল কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং গবর্নিং বডির সদস্য ও অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলামকে ধন্যবাদ জানান। মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশকদের পক্ষ থেকে প্রধান অতিথির হাতে শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গনি। ‘ক্লাসের ফাঁকে বইমেলা’ চলবে ২৬ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বইমেলা সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বিশেষ ছাড়ে মেলায় বই কেনার সুযোগ থাকবে। সংবর্ধিত হলেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ॥ শিক্ষাবিদের পরিচয়ের পাশাপাশি তার নামের পাশে সবসময়ই লেখা হয় নজরুল গবেষক। জাতীয় অধ্যাপক হওয়ায় নজরুলের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত নজরুল ইন্সটিটিউটে মঙ্গলবার সংবর্ধিত হলেন রফিকুল ইসলাম। ইন্সটিটিউটের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ সংবর্ধনা গ্রহণ করে তিনি বললেন, নিজের সম্পর্কে তার কোনো মোহ, ধারণা বা হীনমন্যতা নেই। আমার মূল পরিচয়- শিক্ষক। এ পরিচয় নিয়েই বিদায় নিতে চাই। নজরুলের সাহিত্য সমগ্র উদ্ধার করতে পেরেছি। তার সঙ্গীত ও সুর অবিকৃতভাবে প্রকাশ করতে পারলেই জীবন সার্থক। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ছিল আলোচনা ও সঙ্গীতানুষ্ঠান। প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ নাসির উদ্দিন আহমেদ। ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক ভূঞার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। শুভেচ্ছা বক্তৃতা দেন কবি নজরুল ইসলামের নাতনী খিলখিল কাজী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইনস্টিটিউটের সচিব মোঃ আব্দুর রহিম। আরও বক্তব্য দেন শিল্পী খালিদ হোসেন, খায়রুল আনাম শাকিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বেগম আখতার কামাল প্রমুখ। নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনি জাতীয় অধ্যাপক হওয়ায় নজরুলের ভক্তরা ভীষণ আনন্দিত হয়েছেন। জাতীয় কবিকে নিয়ে রফিকুল ইসলামের গবেষণাগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। খিলখিল কাজী বলেন, রফিকুল ইসলামের লেখা নজরুলজীবনী উপহার দিয়েছিলাম ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীকে। তিনি ভীষণ আনন্দিত হয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন তাকে। বলেছিলেন, রফিকুল ইসলামের মতো মানুষকে পেয়েছ, এটা তোমাদের সৌভাগ্য। অনুষ্ঠানে নজরুলের গান করেন ফেরদৌস আরা, ইয়াকুব আলী খান, লীনা তাপসী খান সালাউদ্দিন আহমেদ। আবৃত্তি করেন সরদার কেরামত আলী ও লায়লা আফরোজ। ওয়ার্দা রিহাবের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করেন ইনস্টিটিউটের শিল্পীরা। পাবলিশার্স ই-প্লাটফর্মের বর্ষপূতিতে লেখক-প্রকাশকদের মতবিনিময় ॥ দেশের লেখক, প্রকাশক ও সৃজনশীল বইয়ের তথ্যসংবলিত অনলাইন তথ্যভা-ার ‘পাবলিশার্স ই-প্লাটফর্ম’। তিনটি ওয়েবসাইটের সমন্বয়ে করা হয়েছে এই প্লাটফর্ম। এর মধ্যে ঢ়ঁনষরংযবৎং.পড়স.নফ ওয়েবসাইটে প্রকাশক, ধঁঃযড়ৎং.পড়স.নফ ওয়েবসাইটে লেখক এবং নড়ড়শং.পড়স.নফ ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে নানা তথ্যবালী। সম্প্রতি এ অনলাইন ভিত্তিক প্লাটফর্মের প্রথম বর্ষপূতি হয়েছে। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার রাতে লেখক, প্রকাশকদের এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। ‘সময় প্রকাশন’-এর তত্ত্বাবধানে তিনটি ওয়েবসাইট নিয়ে প্লাটফর্মটি গত বছর যাত্রা শুরু করেছিল। যৌথভাবে এর পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে ঢাকাভিত্তিক ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান ‘সময় নেট’ ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান ‘আলফা নেট’। জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ। এতে প্রযুক্তির সম্প্রসারণ বিষয়ক বক্তব্য রাখেন তথ্য-প্রযুক্তিবিদ আলফা নেটের প্রতিষ্ঠাতা আবু সুফিয়ান হায়দার। মতবিনিময় সভায় আয়োজকেরা জানান, সৃজনশীল প্রকাশনা জগতের সমস্ত তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং ডিজিটাল ও সামাজিক মাধ্যমে পাঠক মহলে পৌঁছে দেয়া পাবলিশার্স ই-প্লাটফর্মের উদ্দেশ্য। সেই সঙ্গে রয়েছে প্রতিটি প্রকাশকের স্বতন্ত্র ওয়েবসাইট এবং বই বিক্রয়ের সুবিধা। বই, প্রকাশক এবং লেখকদের তথ্য ছাড়াও এতে সংরক্ষিত হচ্ছে সম্পাদক, প্রচ্ছদ শিল্পীসহ প্রকাশনা জগতের অন্যান্য কর্মীদের তথ্য। অনুষ্ঠানে ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘প্ল্যাটফর্মে এ মুহূর্তে ৩০ হাজারের অধিক বই, ৪ হাজারের অধিক লেখক এবং প্রায় দুইশত প্রকাশকের তথ্য রয়েছে। পৃথিবীর যে কোনপ্রান্ত থেকে তা দেখা যাবে। তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। অনলাইনের এ যুগে পাঠকদের কাছে বই ও লেখকদের তথ্য তুলে দেয়াই আমাদের উদ্দেশ্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘লেখক এবং প্রকাশকরা স্বাধীনভাবে ওয়েবসাইটে তাদের অংশটুকু পরিচালনা করতে পারবেন। নিজস্ব তথ্য আপডেট, পাঠক প্রতিক্রিয়া গ্রহণ এবং প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’ অনুষ্ঠানে লেখক, পাঠক এবং প্রকাশকরা নিজেদের মতামত প্রদান করেন। তারা জানান, ইন্টারনেট দুনিয়া পিছিয়ে রয়েছে আমাদের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য। সেই অভাব পূরণ করতে প্ল্যাটফর্মটি বিশেষভাবে সহযোগিতা করবে।
×