ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী একনেক সভায় উপস্থাপনের প্রস্তুতি

উত্তরের ছয় জেলায় ২০ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৭ জুলাই ২০১৮

 উত্তরের ছয় জেলায় ২০ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ

আনোয়ার রোজেন ॥ উত্তরাঞ্চলের ছয় জেলায় নতুন করে বিশটি বহুমুখী বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বন্যার সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হলেও বছরের অন্য সময়ে এসব কেন্দ্রের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র ও কমিউনিটি সেন্টার হিসেবেও ব্যবহৃত হবে। এছাড়া কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কমানো ও মোকাবেলার অংশ হিসেবে এসব কেন্দ্র থেকে আগাম সতর্কতা নিশ্চিত করাও সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়ে ‘অবকাঠামোগত দক্ষতা উন্নয়ন ও তথ্যের মাধ্যমে দুস্থ জনগোষ্ঠীর সহনশীলতা বৃদ্ধি প্রকল্প’ বা সংক্ষেপে ‘প্রভাতি’ নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ৭৫৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) এই অর্থ সহায়তা দেবে। প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপনের প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য এস এন সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা সংলগ্ন জেলাগুলো বন্যাপ্রবণ। এসব জেলার নির্বাচিত উপজেলাগুলোর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও স্থানীয় মানুষদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য এই কেন্দ্রগুলো নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর বিষয়ে গবেষণা ও আগাম সতর্কতা বার্তা দেয়া এবং জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো ও কমিউনিটি শেল্টার নির্মাণের মাধ্যমে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দারিদ্র্য বিমোচনে প্রকল্পটি ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রকল্পের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, যে জেলায় এসব আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে সেগুলো হলো ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ, সদর, দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ উপজেলা। রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা, ফুলছড়ি, সদর, সাদুল্লাপুর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা। কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর, চিলমারী, রৌমারী, উলিপুর, রাজারহাট, সদর, ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলা; রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলা; নীলফামারী জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলা এবং লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলা। সূত্র জানায়, একনেকের অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর এসব আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শেষ করবে। প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে দেশের শতকরা ৯০ ভাগ ভূমি নিম্নাঞ্চল, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০ মিটার বা তার কম উচ্চতায় অবস্থিত। ১৯৯৮ সালের বন্যায় দেশের প্রায় ৭০ ভাগ অঞ্চল বন্যার পানিতে ডুবে যায়। তাছাড়া প্রতিবছরই বন্যা, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই থাকে। দেশের মধ্য-উত্তরাঞ্চল মৌসুমি বন্যা, নদীভাঙ্গন ও তুলনামূলকভাবে রাস্তাঘাট কম থাকায় কৃষি পণ্য বাজারজাত করতে সমস্যা হয়, যাতে পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয় কৃষক। এ জন্য দেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চলের ছয়টি জেলায় ইফাদের আর্থিক সহযোগিতায় মোট ৭৫৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়। গত ৭ জুন প্রকল্পটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোট ৭৫৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে চলতি জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছেÑ বিশটি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, ৬১ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়ন, ২৩৫ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক উন্নয়ন, ২৫ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক উন্নয়ন আরসিসি, ১ হাজার ৬৮৮ মিটার কালভার্ট ও ক্রস ড্রেন নির্মাণ, ৬০ কিলোমিটার সড়ক পুনর্বাসন ইত্যাদি।
×