ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টিতে ৯ নদনদীর পানি বিপদসীমার ওপরে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৫ জুলাই ২০১৮

  বৃষ্টিতে ৯ নদনদীর পানি বিপদসীমার ওপরে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। এছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলেও আগামী সপ্তাহের মধ্যে বন্যার পূর্বাভাসও দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারা জানিয়েছে ইতোমধ্যে যমুনা নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় ইতোমধ্যে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভারি বৃষ্টিপাতের সতর্কতাও জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে বৃষ্টিপাতের কারণে এবং উজান থেকে নেমে আনা পানির কারণে যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী সপ্তাহের মধ্যে উত্তরাঞ্চলে স্বল্প মেয়াদী বন্যা দেখা দিতে পারে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সারাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু হঠাৎ করেই সক্রিয় অবস্থায় চলে এসেছে। এর ফলে সারাদেশেই কম বেশি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রামসহ পার্বত্য এলাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হয়েছে অনেক মানুষ। এ অবস্থায় আরও ভারি বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছে তারা। জানিয়েছে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টানাগাদ রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে দমকা হাওয়াসহ ভারি বৃষ্টি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অতি ভারি বর্ষণের কারণে এসব বিভাগের পাহাড়ী এলাকায় ভূমি ধসের আশঙ্কা করা হয়েছে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ী অববাহিকাসহ দেশের সব প্রধান নদ নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চলসহ পার্শ্ববর্তী ভারতীয় অংশেও ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতর। ইতোমধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ এলাকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত সুরমা, কুশিয়ারা সোমেশ্বরী নদী বিপদ সীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তারা জানায়, দেশের নদ নদীর সমতলে ৯৪টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৭৭টি স্টেশনের পানি বাড়ার খবর পাওয়া গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায় দেশের ৯ নদীর পানি এখন বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী সপ্তাহে দেশের উত্তরাঞ্চলে একটি স্বল্পস্থায়ী বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বৃষ্টিপাতের কারণে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া উজান থেকে পানি নেমে আসা পানির কারণেও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা অব্যাহত থাকলে উত্তরাঞ্চলে আগামী সপ্তাহে বন্যা দেখা দিতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে সুরমা কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে ওই এলাকায় ইতোমধ্যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়ার প্রবণতার মধ্যেই আগামী দুই থেকে তিন দিন উজানে ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস বন্যার আশঙ্কা জাগাচ্ছে। এরই মধ্যে সিলেট অঞ্চলে সুরমা, কুশিয়ারা, সোমেশ্বরীসহ কয়েকটি নদী বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। সুনামগঞ্জ শহরের নিচু এলাকায় পানি ওঠার খবর পাওয়া গেছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, সিলেটের কানাইঘাটে সুরমার পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বুধবার সকাল ৯টায় বিপদসীমার ১০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ নদীর পানি সিলেট সদরে বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জে ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। ওই সময় নেত্রকোনার কলমাকান্দায় সোমেশ্বরীর পানি বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, চট্টগ্রামের দোহাজারিতে সাঙ্গুর পানি ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়া সিলেটের সারিঘাটে সারিগোয়াইন নদী, সিলেট ও শেরপুরে কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জাদুকাটা নদী লরেরগড় পয়েন্টে বিপদসীমা স্পর্শ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উত্তরে ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ঘাঘট আর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সুরমা ও কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি আগামী দুই দিনে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির ধারা আরও তিন দিন এবং পদ্মায় আরও দুই দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে এখনো এসব নদ-নদী বিপদসীমায় পৌঁছেনি। আবহাওয়া অধিদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আগামী আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। পাশাপাশি এই মাসের মাঝামাঝিতে বর্ষার ভরা মৌসুমে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা করা হয়েছে। অধিদফরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের উজানে ভারি বৃষ্টির কারণে চলতি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে স্বল্প থেকে মধ্য মেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ সময় বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি মৌসুমি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে অন্তত একটি নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। এদিকে মৌসুমি বায়ু দেশজুড়ে সক্রিয় থাকায় মধ্য আষাঢ়ের পর মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ বিহার, হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে ভারতের আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে। এ অবস্থায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দম্কা হাওয়া ও বিজলি চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।
×