ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশাল সিটি নির্বাচন

আওয়ামী লীগের মাঠ গোছানো, ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২ জুলাই ২০১৮

 আওয়ামী লীগের মাঠ গোছানো, ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বিএনপি

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের আগেই অনেকটা আধাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী। ইতোমধ্যে ঘর গোছাতে তিনি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার সর্বশেষ শনিবার সকালেও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। অবশ্য আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগেই নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। এছাড়াও তিনি (সাদিক) দলের সকল পর্যায়ের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তি করে সবাইকে এককাতারে নিয়ে এসেছেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সাদিক আব্দুল্লাহ তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থক থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারদের মতামতের ভিত্তিতে নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী মাঠ গুছিয়ে রেখেছেন। দল থেকে সাদিক আব্দুল্লাহকেই নৌকার প্রার্থী করার ফলে ঘর গোছানোর কাজে এখন আর তাকে বেগ পেতে হচ্ছে না। তারপরও আচরণবিধি লঙ্ঘন যাতে না হয় সে লক্ষ্যে আজ ২ জুলাই নগরী সংলগ্ন বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর এলাকায় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অংশগ্রহণে সভার আয়োজন করা হয়েছে। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আজ ২ জুলাই নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ড সংলগ্ন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশের রহমতপুরে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। ওই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাসিম। সভায় সভাপতিত্ব করবেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর পিতা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি। সভায় জেলা ও মহানগরের সব সদস্য, ৩০ ওয়ার্ডের সভাপতি ও সম্পাদক, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানসহ দলের সব সহযোগী সংগঠনের নেতাদের উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচনে আচরণবিধি যাতে লঙ্ঘন না হয় সেজন্য অতি কৌশলে সিটি সংলগ্ন এলাকায় সভার আয়োজন করা হয়েছে। ওই সভার মূল এজেন্ডাই থাকবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল বলেন, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহ এখন নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। প্রতীক বরাদ্দের আগে তারা সতর্কভাবে কার্যক্রম চালাবেন। তিনি আরও বলেন, রহমতপুরে যে সভার আয়োজন করা হয়েছে তা কেবল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে। আচরণবিধি লক্ষ্য রেখেই তারা সিটির বাইরে এ সভার আয়োজন করেছেন। ওই সভার সঙ্গে সিটি নির্বাচনের প্রচারের কোন সম্পর্ক নেই। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পৌর মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান বলেন, রবিবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের প্রথমদিনেই আমাদের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর মনোয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এটা আমাদের প্রাথমিক বিজয়। আগামী ৩০ জুলাই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ইনশআল্লাহ নৌকা মার্কার চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করা হবে। জাতীয় পার্টির দুই মেয়র প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের প্রথমদিনে রবিবার জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। রবিবার বেলা ১২টায় বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার কার্যালয়ে মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন প্রধান রিটার্নিং অফিসার মোঃ মুজিবুর রহমান। আজ সোমবার পর্যন্ত মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে মেয়র পদের আটজন প্রার্থীর মধ্যে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের মনোনয়নপত্র ঋণ খেলাপীর দায়ে বাতিল করা হয়েছে। অপরদিকে ভুয়া ভোটারকে সমর্থনকারী করায় জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী বশির আহমেদ ঝুনুর প্রার্থীতাও বাতিল করা হয়েছে। নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং অফিসার মোঃ মুজিবুর রহমান বলেন, মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের কার্যক্রম সোমবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলবে। সূত্রমতে, সিটি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই পর্বের প্রথমদিনে (রবিবার) আটজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ছয়জনকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও রবিবার ১ থেকে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ১ থেকে ৫নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড এবং আগামীকাল ১৬ থেকে ৩০ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ড ও ৬ থেকে ১০ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়ন যাচাই-বাছাই করা হবে। বাছাইতে বৈধ ও অবৈধ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কিংবা পক্ষে আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপীল করা যাবে। পরবর্তী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে আপীল নিষ্পত্তি করবেন বিভাগীয় কমিশনার। ৯ জুলাই বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রার্থীরা স্বশরীরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির হয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবেন। ওইদিন বিকেলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তালিকা করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ১০ জুলাই প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ করার পর শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার। ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ। নবীন-প্রবীণের লড়াই ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে ১৪ জনই আগে নির্বাচন করেননি। অন্যদিকে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে বিএনপি অভিজ্ঞ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে এবার আওয়ামী লীগের নবীন প্রার্থীদের প্রতিপক্ষ হচ্ছেন বিএনপির অভিজ্ঞ প্রার্থীরা। এছাড়া আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ আগে কখনও নির্বাচন করেননি। অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র ও সাবেক সংসদ সদস্য। সূত্রমতে, আওয়ামী লীগ ২৫ জুন সিটি কর্পোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের ২৮টিতে দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। ২০ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুইজন কাউন্সিলর থাকলেও কৌশলগত কারণে ওই দুটি ওয়ার্ডে কোন প্রার্থীকে দলীয় সমর্থন দেয়া হয়নি। অন্যদিকে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও দলীয়ভাবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা না করলেও পুরনো কাউন্সিলরদের ওপরই তারা ভরসা রাখছে। এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, কাউন্সিলর পদে এখনও আমরা মনোনয়ন চূড়ান্ত করিনি। আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে বর্তমানে যারা দলীয় কাউন্সিলর রয়েছেন তারাই দলীয় সমর্থন পাবেন এটা অনেকটা নিশ্চিত। সূত্রমতে, ২০১৩ সালের ১৫ জুনের বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে বিএনপির ১৯, আওয়ামী লীগের পাঁচ, জামায়াতের এক, জাতীয় পার্টির দুই ও স্বতন্ত্র তিনজন প্রার্থী বিজয়ী হন। সূত্রে আরও জানা গেছে, নগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে টানা তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর বিএনপির জাকির হোসেন। এখানে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি লিয়াকত হোসেন খানকে। লিয়াকত হোসেন এর আগে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। ২১ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর যুবলীগের সদস্য শেখ সাঈদ আহমেদকে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ওই ওয়ার্ডে তার প্রতিদ্বন্দ্বী মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরপর তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর আলতাফ মাহামুদ সিকদার। ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে টানা তিনবার বিজয়ী হয়েছেন মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি একেএম মুরতজা আবেদীন। এখানে মুরতজার সঙ্গে ভোটযুদ্ধে আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন পেয়েছেন নিখোঁজ যুবলীগ নেতা মোনায়েমের ভাই আহসান উল্লাহ। একইভাবে ৮ নম্বর ওয়ার্ডেও টানা তিনবার নির্বাচিত কাউন্সিলর বিএনপি নেতা সেলিম হাওলাদারের বিপক্ষে প্রার্থী করা হয়েছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুরঞ্জিত দত্তকে। তিনিও এর আগে সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে একাধিকবার নির্বাচিত বিএনপির কাউন্সিলর হাবিবুর রহমানের বিপরীতে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন আকতারুজ্জামান। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে একাধিকবার নির্বাচিত বিএনপির কাউন্সিলর সৈয়দ আকবরের বিপরীতে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলামকে। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে একাধিকবার নির্বাচিত বিএনপির কাউন্সিলর মীর জাহিদের বিপরীতে সমর্থন দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের মোঃ কামরুজ্জামানকে। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে একাধিকবার নির্বাচিত কাউন্সিলর নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদারের বিপরীতে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছে এম সাইদুর রহমানকে। সমন্বয় কমিটির সভা ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে গঠিত সমন্বয় কমিটির সভা বিভাগীয় কমিশনারের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক গঠিত কমিটির সমন্বয়ক ও বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শহিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ শফিকুল ইসলাম, মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মাহফুজুর রহমান, জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান, নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং অফিসার মুজিবুর রহমান প্রমুখ। কমিটির সদস্য সচিব জেলা নির্বাচন অফিসার হেলাল উদ্দিন খান বলেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন থেকে গঠিত সমন্বয় কমিটির প্রথম সভায় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিদের্শনা ও কার্যপরিধিসহ সিটি নির্বাচনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
×