ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আসনের অতিরিক্ত ছাত্রী মনোনয়ন নিয়ে সঙ্কটে ভিকারুননিসা

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৯ জুন ২০১৮

আসনের অতিরিক্ত ছাত্রী মনোনয়ন নিয়ে সঙ্কটে ভিকারুননিসা

বিভাষ বাড়ৈ ॥ নতুন ভর্তি নীতিমালার বিভ্রান্তি, অসাধু চক্রের তৎপরতা আর ভর্তিতে অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায় নিয়ে জটিলতায় মুখে পড়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আসনের অতিরিক্ত শতাধিক ছাত্রীর মনোনয়নকে কেন্দ্র করে সঙ্কটে পড়েছে ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ। বৃহস্পতিবার দিনভর ছাত্রী-অভিভাবকদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ, শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ১৩৮ জনকে ভর্তি করে নিলেও জটিলতা কাটেনি। একাধিক কলেজে ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে ভর্তি বাণিজ্য করছে একটি চক্র। এছাড়া ভর্তিতে অতিরিক্ত টাকাও নিচ্ছে অনেক কলেজ। আগেই অভিযোগ উঠেছিল এবারের ভর্তি নীতিমালার একটি অংশ নিয়ে। নীতিমালায় এবার বলা হয়েছে কোন কোটা থাকবে না। মোট আসনের প্রতিটিতেই মেধাবীরা ভর্তি হবে। ভর্তির পর যদি কোটার কোন প্রার্থী ভর্তির জন্য আসেন তবে তাদেরও ভর্তি করে নেয়া হবে। তবে না এলে আসন খালি থাকবে। কেউ কেউ শুরুতেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, মোট আসনে সকলে ভর্তি হলে তো কোন শূন্য আসন থাকছে। তাহলে পরে কোটার কেউ এলে তাদের আসন আসবে কোথা থেকে? প্রতিষ্ঠান আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী সামাল দেবে কীভাবে? জানা গেছে, এমন সঙ্কটের কথা মাথায় রেখেই এবার ভর্তির জন্য আসে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান কোটার আসনগুলো বা দিয়েই শিক্ষা বোর্ডে তাদের আসনের তালিকা পাঠিয়েছে। সেই তালিকার সমান প্রার্থী শিক্ষা বোর্ডও মনোনীত করেছে। কিন্তু অনেকেই কোটার আসনসহ মোট শূন্য আসনের তালিকা পাঠিয়েছে শিক্ষা বোর্ডে। বোর্ড পুরো আসনের সঙ্গে কোটার প্রার্থী যুক্ত করে তালিকা পাঠানোর পর প্রতিষ্ঠান পড়েছে আসন সঙ্কটে। এমনই জটিলতার মুখে পড়েছে রাজধানীর নামী প্রতিষ্ঠান ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের সকল বিভাগে মোট আসন দুই হাজার। এর মধ্যে বিজ্ঞানে এক হাজার ৪০০। যেহেতু কোন কোটা এবার নেই তাই মোট আসন তালিকা আমরা বোর্ডে জমা দিয়েছি নিয়ম মেনেই। কিন্তু এখন মোট আসনের অতিরিক্ত ১৩৮ শিক্ষার্থীকে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, নীতিমালা অনুসারে মোট আসনের মধ্যেই হবে কোটার আসনগুলো। কিন্তু বোর্ড আমাদের বলছে, তাদের পাঠানো দুই হাজার আসনের বাইরে ১৩৮ জন হচ্ছে কোটার প্রার্থী। তাদের ভর্তি করতেই হবে। আমরা ক্লাসরুম সমস্যায় আছি। শিক্ষক সঙ্কট। এর মধ্যেই এই অবস্থা। বোর্ড বলছে, কোটার আসন হবে মোট আসনের বাইরে। এটাই নতুন ভর্তি নিয়ম। জানা গেছে, সকালে অতিরিক্ত ১৩৮ প্রার্থী ভর্তির জন্য আসার পর জটিলতায় পরে কর্তৃপক্ষ। তাদের প্রথমে জানানো হয়, মোট আসনের অতিরিক্ত তারা ভর্তি নেবে না। এটা বোর্ডের ভুল। তারা বুঝবে। এমন অবস্থায় ছাত্রী অভিভাবকরা প্রতিবাদ শুরু করেন। এক পর্যায়ে শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করেও রাখেন। তবে গবর্নিং বডির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার ও অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস কথা বলেন শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে। বোর্ড থেকে তাদের ভর্তির কথা বলে দেয়া হলেও অতিরিক্ত ছাত্রীদের জায়গা দেয়ার কথা চিন্তা করে আলোচনা চালিয়ে যায় কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিকেলে ছাত্রীদের ভর্তি গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেছেন, অতিরিক্ত ছাত্রীদের স্থান কোথা থেকে আসবে। আমরা বোর্ডের অনুরাধে ভর্তি করিয়ে নিচ্ছি। এখন আলোচনা করে দেখব কি করা যায়। বোর্ডের সঙ্গেও আলোচনা করব। কারণ ছাত্রী অভিভাবকদের তো কোন দোষ নেই। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব সাহেদুল খবীর চৌধুরী বলেছেন, এটা কলেজ কর্তৃপক্ষের নীতিমালা বোঝার ভুল। নিয়মই হচ্ছে মোট আসনের পরে কোটার প্রার্থীরা ভর্তি হবে। অতিরিক্ত ১৩৮ জন কোটার প্রার্থী। সব কলেজেই একইভাবে তালিকা পাঠানো হয়েছে। এটাকে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভুল বলছেন আরেক নামী প্রতিষ্ঠান মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম। তিনি বলছেন, আমরা তো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে কোটার আসন বাদ দিয়ে শূন্য আসনের তালিকা পাঠিয়েছি। আমাদের কোন সমস্যা হয়নি। পরে কোটা প্রার্থী দিলেও আমরা ভর্তি নিতে পারছি। কিন্তু ভিকারুন নিসার অধ্যক্ষ কেন বুঝলেন না। তারা কেন সকল আসনের তালিকা পাঠালেন, এখন তো সমস্যা হবেই? এদিকে রাজধানীর কবি নজরুল সরকারী কলেজে একাদশ শ্রেণীর ভর্তির সময় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে একটি গ্রুপ শিক্ষার্থীদের কাছ ২ হাজার করে টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভর্তি হতে যাওয়া শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা এই অভিযোগ করেছেন। কলেজের শিক্ষকদের ঘটনা জানানো হয়েছে। অবশ্য কবি নজরুল সরকারী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান ওরফে মোহন ইতোমধ্যেই বলেছেন, তার জানামতে কলেজের ভেতর ছাত্রলীগের কেউ অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে না। বাইরে কেউ নিয়ে থাকলে এবং প্রমাণ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার দাবি তিনি এ ধরনের কাজ করেন না, করতেও দেন না। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কলেজের অধ্যক্ষ আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য কমিটি করে দিচ্ছেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে জানা গেছে, এবার ভর্তির নীতিমালা অনলাইনে হওয়ায় কেউ চাইলেও টাকার বিনিময়ে ভর্তি হতে পারবেনান না। কেউ চাইলে ভর্তি করাতেও পারছে না। তারপরও একটি চক্র মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি নজরে এসেছে শিক্ষা বোর্ডের। সচিব সাহেদুল খবীর চৌধুরী বলছিলে, টাকা দিয়ে কারও ভর্তির সুযোগ নেই। কারণ পুরো ভর্তি অনলাইনে। কলেজে কারও তালিকার নাম অন্তর্ভুক্তিরই পথ নেই। একথা জেনেও কিছু অভিভাবক হয়ত ভাবেন যদি ভর্তি হওয়া যায় লোকজন ধরছে। এই আশায় থাকা লোকজনের কাছ থেকে কেউ কেউ টাকা নিতে পারে। ১০ জনের কাছ থেকে টাকা নিলে দেখা গেল একজনের এমনিতেই সেখানে চাঞ্চ হয়ে গেল। অন্যদিকে তিছু কলেজ ভর্তিতে বেশি টাকা নিচ্ছে। নীতিমালা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৯ হাজার টাকা নেয়ার কথা থাকলেও ২৭ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আন্ত শিক্ষা বোর্ড শিক্ষার্থীদের মনোনীত করে দিলেও রাজধানীর কিছু নামীদামী অনেক কলেজ তৃতীয় ধাপের শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিতে চাচ্ছে না।
×