সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী-এমপিরা বলেছেন, সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে যথাসময়ে সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হতে হবে। দুর্নীতির দায়ে হলুদ-লালকার্ড দেখা খালেদা জিয়া আর মাঠে নামতে পারবেন না, তাঁকে মাঠের বাইরেই থাকতে হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে ফের অগ্নিসন্ত্রাসের চেষ্টা করা হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করা হবে। ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত ভেঙ্গে দেয়া হবে। বিএনপি যাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন করেছে সেই তারেক রহমান বাংলাদেশেরই নাগরিক নন, দুর্নীতিবাজ দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। এই মহাদুর্নীতিবাজদের দেশের জনগণ আগামী নির্বাচনেও পরাজিত করে লালকার্ড দেখাবে।
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রবিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ সালের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার, সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা, সরকারী দলের এ কে এম রহমত উল্লাহ, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সুবিদ আলী ভূঁইয়া, গাজী আমজাদ হোসেন মিলন, মাহফুজুর রহমান, সিমিন হোসেন রিমি, শফিকুল ইসলাম শিমুল, ডাঃ হাবিবে মিল্লাত, মনিরুল ইসলাম, এম আবদুল লতিফ, শওকত আলী বাদশা, ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি, কাজী নাবিল আহমেদ, জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াছিন আলী, বিএনএফের এস এম আবুল কালাম আজাদ, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সালমা ইসলাম, নাসরিন জাহান রত্মা ও রওশন আরা মান্নান প্রমুখ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আগামী নির্বাচন সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির দৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলার তাগিদ দিয়ে বলেন, সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে যথাসময়ে নির্বাচন করতে হবে। জঙ্গী ও জঙ্গীর সহযোগী বিএনপি-জামায়াতকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে হবে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে দুর্নীতি করে প্রথমে হলুদ ও পরে লালকার্ড পেয়েছে। লালকার্ডধারী খালেদা জিয়া আর মাঠে নামতে পারবে না, তাঁকে মাঠের বাইরেই থাকতে হবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার কোন সক্ষমতা ছিল না, স্বপ্নও ছিল না। শুধুই ছিল ব্যর্থতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সক্ষমতা, স্বপ্ন ও ভিশন আছে বলেই দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে সর্বত্র। দেশের মানুষের হাতে হাতে এখন মোবাইল, ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট। গ্রামের মানুষের মুখে এখন স্বস্তির হাসি।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার খালেদা জিয়ার মতো হাওয়া ভবন বানায় না, দুর্নীতি করে না, বিদেশের ব্যাংকে লুটের টাকা ভরে না। বিএনপি-জামায়াত হচ্ছে অন্ধকারের অশান্তির শক্তি। অন্যদিকে শেখ হাসিনা হচ্ছে উন্নয়ন ও শান্তির দূত। দেশের জনগণকেই ঠিক করতে হবে তারা কোন শক্তির সঙ্গে থাকতে চান। তিনি বলেন, জঙ্গীকে যেমন দুর্নীতিবাজদের কোন ছাড় দিচ্ছি না, তেমনি দুর্নীতিবাজ-লুটেরাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে দমন করতে হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া ঠিক হবে না। যাতে ব্যাংকের টাকা আর লুটপাট না হয়, দুর্নীতি না হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল চলমান মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে বলেন, জিরো টলারেন্স নিয়ে আমরা জঙ্গী-সন্ত্রাসের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করেছি। এখন মাদকের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেমেছি। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ধ্বংসের নেশা থেকে যুব সমাজকে রক্ষায় অভিযান চলছে। গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে কারা মাদক ব্যবসায়ী, গডফাদার তা শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা কাউকে হত্যা করতে চাই না, যেখানে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, ধরতে গিয়ে সন্ত্রাসীরা ফায়ার ওপেন করছে- সেখানেই বন্দুকযুদ্ধের মতো কিছু ঘটনা ঘটছে। জনগণের শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তা ও মাদকের হাত থেকে রক্ষায় যা যা করার তা অবশ্যই আমরা করব।
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, উত্তরবঙ্গের মঙ্গাপীড়িত অঞ্চলে এখন সব মানুষের হাতে হাতে মোবাইল। ৫ শ’ থেকে এক হাজার টাকা খরচ করে মোবাইলে শুধু গল্প করার জন্য। এটা কোন রূপকথা নয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের আমলে দেশের উন্নয়নের বাস্তব চিত্র। ক্ষমতায় থাকতে বিএনপির নেতারা আমাদের মফিজ বলতেন। ওসব নেতাকে আমন্ত্রণ জানাই, আসুন দেখে যান, এখন প্রতিদিন সৈয়দপুর থেকে এগারোটি ফ্লাইট চলে। মফিজ-মঙ্গা এলাকা এখন সমৃদ্ধ এলাকায় পরিণত হয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, একাত্তরের ঘাতকরা জিয়া-মোশতাকের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে স্বাধীনতার মূল্যবোধকেই ধ্বংস করতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর খুনী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে দেশকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশকে বের করে এনেছি। দেশ যখন সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে তখন একটি মহল নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র করছে। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত করার চক্রান্ত চলছে। রাজনৈতিক নয়, এতিমের টাকা আত্মসাত করায় খালেদা জিয়া জেলে রয়েছেন। নির্বাচন সামনে রেখে ফের অগ্নিসন্ত্রাসের চেষ্টা করা হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করা হবে। ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত ভেঙ্গে দেয়া হবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আবারও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, লন্ডনে পলাতক থাকা দ-িত আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান তার বাংলাদেশী পাসপোর্ট স্যারেন্ডার করে নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন। এর প্রমাণ সংসদে তুলে ধরে তিনি বলেন, তারেক রহমান তার বাংলাদেশী নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন তার অনেক প্রমাণ রয়েছে। সম্প্রতি একটি ব্রিটিশ কোম্পানির ডিরেক্টর হিসেবে তার নাম উল্লেখ রয়েছে, সেখানে তার নাগরিকত্বের উল্লেখ করা হয়েছে ‘ব্রিটিশ’। যদিও ৪ মাস পরে তা তুলে বদল করে ‘বাংলাদেশী’ উল্লেখ করা হয়েছে। উইক্লিক্সসহ আরও বেশ কয়েকটি তদন্ত সংস্থা এটি প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, আমি যখন বললাম তারেক রহমান বাংলাদেশী নাগরিকত্ব বর্জন করেছে, তখন বিএনপির পক্ষ থেকে আমাকে আইনী নোটিস দেয়া হয়। আমি তাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে প্রমাণ করে দিয়েছি সত্যি তারেক রহমান আর বাংলাদেশী নাগরিক নয়, তিনি পাসপোর্ট স্যারেন্ডার করে নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। তার ব্রিটিশ পাসপোর্টও থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপি এখন এমন একজন মানুষকে দলের প্রধান বানিয়ে রাজনীতি করছে, তার নির্দেশ-উপদেশে দল চলছে। যিনি এ দেশেরই নাগরিকই নন। তিনি কিভাবে একটি রাজনৈতিক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনের দায়িত্বে থাকেন, দলের কি অন্য কেউ নেই?
জাতীয় পার্টির সালমা ইসলাম বলেন, ব্যাংক ডাকাতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো পুরস্কৃত করা হয়েছে। এই ব্যাংক ডাকাতদের হাত কী সরকারের থেকেও শক্তিশালী? ব্যাংক ডাকাতদের মুখোশ শুধু উন্মোচন নয়, এদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদেরও শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে এজন্য সরকারকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে।
বিএনএফের এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বর্জনের নামে সারাদেশে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমার দল বিএনএফ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। এ কারণে দেশ সাংবিধানিক সঙ্কট থেকে রক্ষা পেয়েছে, দেশের এত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে প্রয়োজন পড়বে তাকে নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করবেন।
ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াছিন আলী বলেন, বাজেটে এমপিওভুক্তি নিয়ে বরাদ্দ পর্যাপ্ত না থাকায় আমরা সবাই হতাশ। বেসরকারী শিক্ষকরা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। চাহিদা অনুযায়ী এমপিওভুক্ত করা না গেলে আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, দেশের সর্বত্র উন্নয়ন হয়েছে এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। যারা উন্নয়ন, সফলতা দেখে না অন্তরের দিক থেকে অন্ধ। দেশের যুব সমাজকে রক্ষায় মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। এ অভিযানকালে কিছু ঘটনা ঘটছে তা বৃহত্তর স্বার্থে মেনে নিতে হবে। বোমা-গ্রেনেড-অগ্নিসন্ত্রাস করে জনগণের মন জয় করা যায় না। ক্ষমতায় আসতে গেলে নির্বাচনেই আসতে হবে, অন্য কোন পথে নয়।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: