ফিরোজ মান্না ॥ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নিয়মিত বার্তা ও ইমেজ পাঠাতে শুরু করেছে। কক্ষপথে স্থাপন হওয়ার পর থেকেই গাজীপুর ও বেতবুনিয়া গ্রাউন্ড স্টেশনে এ বার্তা ও ইমেজ ধারণ করা হচ্ছে। আর এখান থেকেই স্যাটেলাইটকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার কাজও চলছে। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালাস এ্যালেনিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ২২ জন তরুণ প্রকৌশলী স্যাটেলাইটি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করছেন। বিটিআরসির সঙ্গে থ্যালাস এ্যালেনিয়ার প্রকৌশলীরা স্যাটেলাইট পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য তিন বছরের চুক্তি রয়েছে। তবে থ্যালাস থাকলেও মূল কাজ করছে বাংলাদেশের প্রকৌশলীরাই। তারা মহাকাশ ও স্যাটেলাইট বিদ্যায় চার বছর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা দক্ষতা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। স্যাটেলাইট থেকে পাঠানো সব ধরনের বার্তা, সঙ্কেত ও ইমেজ সবই বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা রিসিভ করছেন। বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) এমডি সাইফুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিসিএসসিএল এমডি জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বার্তা পাঠানো শুরু করেছে। মোট কথা স্যাটেলাইটের যা কাজ তাই করে যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক অবস্থায় আসেনি। বাণিজ্যিক অবস্থায় না এলেও আমরা বাণিজ্যিক বিপণের কাজ শুরু করেছি। বছরে ৫ কোটি মার্কিন ডলার আয়ের টার্গেট নিয়ে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাকিস্তান এবং উজবেকিস্তানের সঙ্গে বিসিএসসিএল যোগাযোগ করছে। ওই সব দেশের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। পুরোদমে স্যাটেলাইট ‘ফাংশন’ শুরু হওয়ার আগেই দু’ একটি দেশের সঙ্গে চুক্তি হতে পারে। চুক্তি হলে আমরা যখন থেকে স্যাটেলাইট থেকে সুবিধা পাব সংশ্লিষ্ট দেশগুলোও তখন থেকে সুবিধা পেতে শুরু করবে। দেশের জন্য ২০টি ট্রান্সপন্ডার ও বিদেশে বিক্রির জন্য ২০ ট্রান্সপন্ডার রয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশনে পুরোদমে বার্তা পাঠাতে শুরু করতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে। এই সময়ের মধ্যে বিদেশে স্যাটেলাইটের বাজার তৈরি করা হবে। এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি দেশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাকিস্তান এবং উজবেকিস্তানে আমাদের স্যাটেলাইটের বড় বাজার রয়েছে। এ সব দেশের অনেক দেশেরই কোন স্যাটেলাইট নেই। তাদের টেলিকম ও কেবল টিভির জন্য আমাদের স্যাটেলাইটের প্রয়োজন হবে। আমরা এখন থেকেই চেষ্টা করব ওই সব দেশে ‘মার্কেটিং’ করার। উল্লেখিত দেশগুলোতে মার্কেটিং করাতে পারলে বছরে দেশের আয় হবে ৫ কোটি মার্কিন ডলার।
এমডি সাইফুল ইসলাম বলেন, দেশের টেলিযোগাযোগ ও স্যাটেলাইট টিভির ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাই বড় ভূমিকার পাশাপাশি দেশের জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতি সাধন করবে। বাংলাদেশ কিন্তু দু’টি বিষয় মাথায় রেখে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। একটি দেশের টেলিযোগাযোগ সুবিধা ও জ্ঞান বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়া অন্যটি বাণিজ্যিক দিক। বাণিজ্যিক দিক নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। তাদের কাছে স্যাটেলাইটের ২০টি ট্রান্সপন্ডার ভাড়া দিয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। আমরা স্যাটেলাইটকে টাকার অঙ্ক দিয়ে বিচার করছি না। এটা বাংলাদেশের মর্যাদার একটি বিষয়। মর্যাদা কখনও টাকা দিয়ে কেনা যায় না। পৃথিবীর ৫৭টি দেশের কাতারে এখন বাংলাদেশ। আমরা এখন স্যাটেলাইট ক্লাবের সদস্যপদ লাভ করেছি।
স্যাটেলাইট পরিচালনায় নিয়ন্ত্রণে থাকা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পের জন্য রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশ অরবিটাল স্লট লিজ নেয়া হয়। নির্দিষ্ট ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রীতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ স্থাপন হয়েছে। স্যাটেলাইটটি নিজস্ব কক্ষপথে স্থাপন হয়েই গাজীপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া গ্রাউন্ড স্টেশনে বার্তা পাঠাতে শুরু করছে। বার্তাগুলো এখন কোন কাজে না এলেও অল্প দিনের মধ্যে কাজে লাগতে শুরু করবে।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। ২০টি ট্রান্সপন্ডার দেশের জন্য ব্যবহার হবে-বাকি ২০ ট্রান্সপন্ডার বিদেশে ভাড়া দেয়া বর্তমানে বিদেশী স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ভাড়া দিতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট চালু হলে এই বিপুল অঙ্কের টাকা ভাড়া দিতে হবে না। দেশের টাকা দেশেই থেকে যাবে। ফলে দেশ দুই দিক থেকেই লাভবান হবে।