ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের কেনাকাটা

ইসলামপুরের থ্রিপিসসহ বিভিন্ন পোশাক যাচ্ছে বিদেশেও

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২৩ মে ২০১৮

ইসলামপুরের থ্রিপিসসহ বিভিন্ন পোশাক যাচ্ছে বিদেশেও

রহিম শেখ ॥ পাঁচ রোজা পেরিয়ে জমে উঠেছে পুরান ঢাকার ইসলামপুরে দেশের বৃহত্তম পাইকারি কাপড়ের বাজার। সালোয়ার-কামিজ, শার্ট-প্যান্ট-পাঞ্জাবি, শাড়ি-লুঙ্গি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের থান ও গজ কাপড়ের বৃহৎ সম্ভার রয়েছে এখানে। মিলছে বিদেশের খ্যাত-অখ্যাত ব্র্যান্ডের কাপড়ও। তাই ঈদ-উল-ফিতর সামনে রেখে ইসলামপুর এখন জমজমাট। কাপড়ের গজ মাপা, খাতায় পরিমাণ তোলা, টাকা গুণতি, মাল বোঝাই করে ট্র্যাক-কাভার্ড ভ্যান, লঞ্চ কিংবা ঠেলাগাড়ি করে রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া প্রতিদিনকার দৃশ্য। নতুন পোশাক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়ার কাজে মহাব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই। তবে মাঝে মধ্যেই বৃষ্টির কারণে ছন্দ পতন ঘটছে বেচা-বিক্রিতে। জানা গেছে, ইসলামপুরে বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির নিবন্ধন করা ছোট-বড় দোকান রয়েছে প্রায় চার হাজার। এর বাইরে আরও অন্তত ছয় হাজার ছোট ও মাঝারি দোকান রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন টং মার্কেট, হাজি শরফুদ্দিন ম্যানশন, হাজি ইউসুফ ম্যানশন, আমানউলাহ কমপ্লেক্স, হাজি কে হাবিবুল্লাহ কমপ্লেক্স মার্কেট, লতিফ টাওয়ার, আহসান মঞ্জিল (মিউ.) সুপার মার্কেট, এ মাবুদ রাইন টাওয়ার, লায়ন টাওয়ার, মদিনা ভবন, হাজি শামসুদ্দিন ম্যানশন, ২৪ নম্বর মসজিদ মার্কেট নুরজাহান ম্যানশন, হালিম প্লাজা, সোনার বাংলা মার্কেটসহ আশপাশের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি দোকান বাহারি পোশাকে সুসজ্জিত। বেচাকেনা চলছে। মোড়ে মোড়ে মালপত্র ওঠানো-নামানো হচ্ছে। ভিড় সামাল দিতে বৃষ্টির মধ্যেও গলদঘর্ম পরিশ্রম করছেন শত শত শ্রমিক। ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তা নিতে ব্যস্ত নিরাপত্তাকর্মীরাও। একাধিক ব্যবসায়ী বললেন, রমজানের শুরুতেই এবারের কেনাকাটায় যে মন্দাভাব ছিল, তা কেটে গিয়ে দুই দিন ধরে ব্যবসাটা একটু চাঙ্গা হয়েছে। পাইকার ও খুচরা দুই পর্যায়ের ক্রেতা এখন ভিড় করছেন। চাঁদ রাত পর্যন্ত চলবে ধুম বেচাকেনা। এ বিষয়ে ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শামসুল হক সবজ্জল জনকণ্ঠকে বলেন, রমজান শুরুর দুই মাস আগে থেকে ইসলামপুরে সাধারণত বেচা-বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু এবার বেচা-বিক্রি শুরু হয়েছে দুই সপ্তাহ আগে। ‘ধুম বিক্রি’ বলতে যেটা বোঝায়, সেটা এখনও শুরু হয়নি। তবে আশা করছি দুই একদিনেই শুরু হবে। হাবিবুল্লাহ কমপ্লেক্স মার্কেটের ব্যবসায়ী আলাল হোসেন জানান, রাজধানীর গাউসিয়া থেকে শুরু করে নিউমার্কেট, বিভিন্ন বুটিক, ফ্যাশন হাউসসহ দেশের সব প্রান্তে যাচ্ছে ইসলামপুরের থ্রিপিসসহ বিভিন্ন পোশাক। যাচ্ছে বিদেশেও। নবাববাড়ি এলাকার আল-আমিন স্টোরের বিক্রেতা আবদুল ওদুদ বলেন, এখন বেশি বিক্রি হচ্ছে থ্রিপিস ও পাঞ্জাবি। ইসলামপুরের পোশাকের দোকানগুলোতে মান ও কাজ ভেদে ৬৫০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকায় মিলছে দেশি থ্রিপিস। সেলাই ছাড়া থ্রিপিস মিলছে ৫৫০ থেকে ১৫০০ টাকা। নানা কারুকাজ ও রঙের পাঞ্জাবি মিলছে ৩৫০ থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত। মিম ফ্যাশনের বিক্রেতা কামরুল হাসান বলেন, ভারত, পাকিস্তানের সুপার মডেল আর জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রীদের পরনে যে পোশাক দেখা যায়, হুবহু সেই থ্রিপিস এখানকার মার্কেটে পাওয়া যায়। রঙ ও ডিজাইন দেখে দুটি পোশাকের মধ্যে পার্থক্য বোঝার উপায় নেই। ব্যবসায়ীরা জানান, দেশি কাপড়ে ডিজাইনার ও কারিগররা এসব থ্রিপিস তৈরি করেন। দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় ভারত-পাকিস্তানের থ্রিপিসের চেয়ে এখানকার থ্রিপিসের চাহিদা বেশি। ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা জানান, নরসিংদীর মাধবদী ও বাবুরহাট, ঢাকার সাভার, কুমিল্লার দাউদকান্দি এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মিল থেকে শাড়ি ও লুঙ্গি তৈরি করিয়ে এনেছেন তারা। রাজধানীসহ রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, রংপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের আগমনে মুখরিত ইসলামপুরের মার্কেটগুলো। ইসলামপুর রোডের প্যারাডাইস ভবনের নিচ তলায় কথা হয় কিশোরগঞ্জের ব্যবসায়ী ইলিয়াস মোল্লা ও আলফু মিয়ার সঙ্গে। দোকানের জন্য রোজার আগেই দু’বার ইসলাপুরের এসেছিলেন এই দুই ব্যবসায়ী। তারা জনকণ্ঠকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার পাইকারিতে দাম একটু বেশি। ফলে ঈদে খুচরা বাজারে পোশাকের দাম একটু বাড়বে বলে জানান তারা। মঙ্গলবার সিলেটের আল হামরা শপিং সেন্টারের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান দোকানের কর্মচারীদের নিয়ে কাপড় কিনতে এসেছিলেন ইসলামপুরে। তিনি জানালেন, মূলত দেশী পোশাকই তিনি এখান থেকে কিনে থাকেন। ইন্ডিয়ান পোশাকের জন্য আলাদা সাপ্লাইয়ার রয়েছে। এবার বাচ্চাদের ও নারীদের পোশাকে বৈচিত্র্য এসেছে বেশ। এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, এক সময় বিদেশ থেকে আমদানি করা কাপড়ের পাইকারি বাজার ছিল ইসলামপুরে। এখন আর সে রকম নেই, চিত্র পাল্টে গেছে। ইসলামপুরের কাপড়ের ব্যবসার বড় অংশই এখন দেশী কাপড়ের দখলে। পাকিজা ফেব্রিক্স কালেকশনের সহকারী ম্যানেজার দীপক চন্দ্র ভৌমিক জনকণ্ঠকে বলেন, ইসলামপুরে তাদের মোট ছয়টি শোরুম রয়েছে। মূলত শবেবরাতের পর থেকে দশ রমজান পর্যন্ত তাদের বেচাবিক্রি হয়। এ পর্যন্ত আশানুরূপ ভাল বিক্রি হয়েছে বলে তিনি জানান। ইতোমধ্যে বেশিরভাগই বেচা শেষ। তারা মূলত থ্রিপিস, লুঙ্গি, বিছানার চাদর, শাড়ি ইত্যাদি বিক্রি করে থাকেন। থ্রিপিস বিক্রি করছেন ৪৫০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। ফেব্রিক্স ফ্যাশনের আজিজুর রহমান জানালেন, ৪০-৮০ টাকা দামে লেডিস আইটেমের গজ কাপড় বিক্রি করছেন তারা। মূলত নিম্নবিত্তদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে তারা কাপড় সরবরাহ করেন। এখান থেকে নিয়ে কাপড় যান টেইলার্স ব্যবসায়ীরা। তারা সেলাই করে আবার দোকানিদের কাছে বিক্রি করেন। এজন্য তাদের ঈদ ব্যবসা শুরু হয় শবেবরাতের আগেই। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভাল থাকায় এবার ব্যবসা ভাল বলে জানান তিনি। দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ভাল থাকায় ব্যবসা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেন অনেক ব্যবসায়ী। তবে রাস্তা খারাপ ও যানজটের কারণে খোভ প্রকাশ করলেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে বিদেশী পোশাকের বাজার দখল নিয়ে চিন্তিত এখানকার অধিকাংশ ব্যবসায়ী। ইসলাপমপুরের পাশাপাশি উর্দু রোডেও চলছে জমজমাট বেচাকেনা। বেচাকেনায় ব্যতিব্যস্ত ব্যবসায়ীদের দম ফেলার যেন ফুরসত নেই। ইসলামপুর ও উর্দু রোডের দোকানি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার ঈদ উপলক্ষে দেশী মিনি থ্রিপিস ৪২০-৮০০ টাকা, থ্রিপিস ৩৫০-৩৫০০ টাকা, লুঙ্গি ২০০ থেকে ৭০০ টাকা, পাঞ্জাবি ছোটদের ২৫০-২৮০০ টাকা, বড়দের পাঞ্জাবি ৪০০-৮০০০ টাকা ও থান কাপড়ের প্রিন্টের থ্রিপিস ৪৫০-৯৫০ টাকা।
×