ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

৫৪ চিকিৎসকের মধ্যে ৪২টি পদই শূন্য

বরিশালের দুটি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়েছে

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২০ মে ২০১৮

বরিশালের দুটি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ জেলার মুলাদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দুটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও বাড়েনি স্বাস্থ্য সেবার মান। দুটি হাসপাতালেই চিকিৎসক সঙ্কটের কারণে মারাত্মকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ফলে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামের সাধারণ রোগীদের। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে একাধিকবার জানিয়েও কোন সুফল মেলেনি। সূত্র মতে, মুলাদী উপজেলার মানুষ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জের কাজিরহাটের বিশাল একাংশের মানুষ মুলাদী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসলেও এখানে প্রায় তিন লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য ডাক্তার রয়েছেন মাত্র দুইজন। ডাক্তারের ২৮টি পদের মধ্যে ২২টি শূন্য এবং স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দাফতরিক কাজে ব্যস্ত থাকায় পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে চিকিৎসা সেবা। হাসপাতালে ২৪ জন নার্সের স্থলে ১৩ জন নার্স ভর্তিকৃত রোগীদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। এ ছাড়া হাসপাতালের স্টোর কিপার, পরিসংখ্যানবিদ, এক্সরে টেকনিশিয়ান, ল্যাব টেকনিশিয়ান, সিকিউরিটি গার্ড, বাবুর্চিসহ বেশ কয়েকটি পদে লোক না থাকায় হাসপাতালে বিভিন্ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে প্যাথলজি ল্যাবসহ সকল প্রকার ডায়াগনস্টিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে রোগীরা বাধ্য হয়ে বাহিরে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে গিয়ে একদিকে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত অন্যদিকে নিয়মিতভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। একারণেই হাসপাতালের সামনে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা গ্রামের সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন টেস্টের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মুলাদী হাসপাতালটি ২০১৬ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হয়। ৫০ শয্যা হাসপাতালের ২৮ জন ডাক্তারের স্থলে কাগজ-কলমে ছয়জন ডাক্তার থাকলেও বাস্তবে চিকিৎসা দিতে পারছেন মাত্র দুইজন চিকিৎসক। কাগজ-কলমের ছয়জন ডাক্তারের মধ্যে ডাঃ প্রসেনজিৎ সাহা শুভ প্রায় তিন মাস ধরে ছুটিতে রয়েছেন। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে ডাঃ আফজাল করিম বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ডেপুটেশনে যান। তার ডেপুটেশন শেষ না হওয়ায় মুলাদী হাসপাতালে যোগদান করছেন না। গত ৫ মে সকালে ডাঃ শাকিল খান যোগদান করলেও তিনি কতদিন থাকবেন তা নিয়ে সংশয় দেয়া দিয়েছে। বর্তমানে শুধুমাত্র ডাঃ মেহেদী হাসান খান এবং কনসালটেন্ট ডাঃ সুব্রত সাহা নিয়মিত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সাইয়েদুর রহমান জানান, দুইজন ডাক্তার দিয়ে মুলাদী, হিজলা ও কাজিরহাট এলাকার প্রায় তিন লাখ মানুষের চিকিৎসা দেয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। অপরদিকে উপজেলার দুইটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার না থাকায় স্বাস্থ্য সহকারীদের দিয়ে কোনমতে চলছে ওইসব কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা। কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারগণ কোনদিন আসবেন তা জানে না কেউ। তাই উপজেলাবাসী ন্যূনতম চিকিৎসা সেবার জন্য হাসপাতালে ডাক্তার বৃদ্ধি এবং উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সচল করার জোর দাবি করেছেন। আগৈলঝাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ॥ ২০০৪ সালে ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। উপজেলার ৫০ শয্যার এ হাসপাতালের আওতায় পাঁচটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রসহ (সাব সেন্টার) চিকিৎসকদের ২৬টি পদ রয়েছে। এসব পদের মধ্যে ২০ জন চিকিৎসকের পদ দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে শূন্য রয়েছে। ফলে চিকিৎসক সঙ্কটের কারণে তিন লাখেরও বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত আগৈলঝাড়া উপজেলা ও পার্শ^বর্তী গৌরনদী উপজেলার পশ্চিমাংশ, উজিরপুরের উপজেলার উত্তরাংশ এবং কোটালীপাড়া উপজেলার পূর্বাংশের কমপক্ষে পাঁচ লাখ জনগণ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একদিকে হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট অন্যদিকে চিকিৎসকদের দলাদলি আর সার্টিফিকেট বাণিজ্যের কারণে ভেঙ্গে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা। সূত্র মতে, হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর দলাদলির কারণেও কাক্সিক্ষত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। একজন চিকিৎসকের অধীনে জরুরী বিভাগে ভর্তিকৃত রোগী হাসপাতালের বেডে পড়ে থাকলেও অন্য চিকিৎসক ওই রোগীকে দেখেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের দ্বন্দ্ব আর কোন্দলের কারণে চিকিৎসাযোগ্য রোগীদের উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি না করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে রেফার করছেন চিকিৎসকরা। ফলে অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের অর্থ সঙ্কটে পড়তে হয়। হাসপাতালে ডাক্তারদের শূন্য পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থপেডিকস), জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়েট্রিক), জুনিয়র কনসালটেন্টসহ (চর্ম/যৌন) ২০ জন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আলতাফ হোসেন বলেন, শূন্য পদের বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
×