ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২০ মে ২০১৮

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ ইবাদত বন্দেগি ও বিশেষ নিয়মে আল্লাহকে ডাকার মাস রমজানুল মোবারকের আজ তৃতীয় দিবস। ইবাদত মানে নিজের চিন্তা-চেতনা, কথাবার্তা ও কাজকর্ম সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার রিজামন্দিকে প্রাধান্য দেয়া। মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ পাক বলেন : আমি জিন এবং ইনসান জাতিকে একমাত্র ইবাদত এবং অন্য কোন কারণে সৃষ্টি করিনি।’ কিন্তু দুুুনিয়ার ব্যস্ততায় মানুষ ভুলে বসে তার সৃষ্টিকর্তার হুকুম। এক্ষেত্রে মুসলমানদের কাছে রমজান এমন এক মাস যখন তারা সবচেয়ে বেশি পরিমাণে মনোযোগী হয়, সংকল্প করে প্রভুর রেজামন্দি হাসিলে এবং তারই আনুগত্য প্রদর্শনে। বস্তুত রমজান শুধু কোন ব্যক্তি মুসলমানের জন্য নয়, গোটা উম্মাহর জন্য ইবাদত বন্দেগির এক বিশ্ব মৌসুম। এদিনগুলোতে সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান মহামহিম খোদা তায়ালার রহমত বরকত ও মাগফিরাতের শামিয়ানায় ঠাঁই নিয়ে থাকে এক বুক আশা নিয়ে। কুরআন হাদিস ও পূর্ববর্তী মুসলিম মহামনীষীদের জীবনালেখ্য থেকে রমজানুল মোবারকের ব্যাপক তাৎপর্য ও মর্যাদার শিক্ষা পাওয়া যায়। এ মাসের ইবাদত বন্দেগি ও ধর্মকর্মের পুণ্য পুরস্কারের কথা বিঘোষিত হয়েছে পবিত্র গ্রন্থসমূহে। এ মাসকে বলা হয়েছে : শাহরুম মুবারক বা মহান আল্লাহ পাকের অবারিত করুণার মাস। কোন কোন মনীষী বলেছেন : রজব হলো পুণ্যের বীজ বপন করার, শাবান হচ্ছে ক্ষেতে পানি সিঞ্চনের আর রমজান হলো ইবাদতের ফসল ঘরে তোলার মাস। এ মাসে ইবাদত বন্দেগিতে উৎসাহ পাওয়ার পেছনে রয়েছে হযরত রাসূলে কারীম (স) এর একটি বিখ্যাত হাদিস। এতে তিনি ইরশাদ করেছেন : কেউ যদি এ মাসে একটি মাত্র নফল ইবাদত করে নৈকট্য লাভের অভিলাষী হয়, তা অন্য মাসে একটি ফরজ (ইবাদত) আদায়ের সমতুল্য। আর কেউ যদি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল অন্য মাসের তুলনায় তার সওয়াব বৃদ্ধি করা হয় ৭০ গুণ। তাই এই মাস অধিক পরিমাণে ইবাদতের, এ মাস অধিক পরিমাণে তিলাওয়াত ও তসবিহ পাঠের। এ পবিত্র মাসে ফরজ ইবাদতগুলোর নিয়মিত করার আর নফল ইবাদতসমূহে অভ্যস্ত হবার। এ মাসে শারীরিক ইবাদতের সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক ইবাদতেও মানুষ আন্তরিকতার সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা অংশ নেয় যাকাত সদকা এবং ফিতরা দানে। হাদিসে এ মাস উপলক্ষে মহানবী (স)-এর দানের অভ্যাসকে মুষলধারা বৃষ্টির সঙ্গে তুলনা দেয়া হয়েছে। হযরত (স) স্বয়ং বলেছেন : যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে তার জন্য রয়েছে রোজার সমপরিমাণ নেকি। এক ঢোক দুধ, একটি খেজুর, একটু পানি প্রদানেও উত্তম সওয়াব রয়েছে। আমরা যেন এ মাসে সর্বপ্রকার ইবাদত বন্দেগি আঞ্জাম দিয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ হাসিল করি। আজকে আমাদের সমাজে ধনী-গরিব বৈষম্য, গ্রামীন শহুরে মানুষের জীবনযাত্রায় ফের তারতম্য দেখা যাচ্ছে। এক শ্রেণীর মানুষ খানাপিনা ও ইফতারের নামে মেতে ওঠে অপচয়ের প্রতিযোগিতায়। পাশাপাশি আরেক প্রকারের রোজাদার হয়ত পানাহারের ন্যূনতম উপাদানগুলোও জোগাড় করতে পারছে না। এমনিতেই রোজা উপলক্ষে আমাদের দেশের কালচার হলো ব্যবসায়ীরা সব পণ্যের দাম অযাচিত বৃদ্ধি করে দেয়। রোজার মাসে এক শ্রেণীর ভোগে উন্মত্ত ব্যবসায়ীর এহেন মানসিকতা রোজার মাস ও সিয়াম সাধকদের জন্য একটা বড় ধরনের পরিহাস। কয়েকটি দেশে তাদের জাতীয় কোন দিবস ও মৌসুমে জনগণের জীবনযাত্রাকে সহজতর করার জন্য সরকারী বেসরকারী উদ্যোগ আয়োজনের কমতি থাকে না। কোন কোন সময় ভর্তুকিও দেয়। আর আমাদের দেশে ঘাপটি মেরে বসে থাকে কিভাবে এ মাসে সাধারণ মানুষের চাহিদাকে পুঁজি করে একটি শ্রেণী দিনে দিনে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হতে পারে। এটি কোন ধরনের সভ্যতায় পড়ে না। সিয়ামের মাসে আল্লাহর অবারিত রহমতের ফোঁটা থেকে এসব হীন মানসিকতার লোকজন মুসলমানরা বঞ্চিত হয়। বাহ্যত তারা মুনাফাখোর হিসেবে প্রমাণ করতে পারলেও এ মুনাফা কখনও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে প্রোজ্জ্বল কল্যাণময় করতে পারে না। প্রাকৃতিকভাবে বছর ঘুরিয়ে আসা বরকতময় আল্লাহর নিদর্শনগুলোকে সম্মান করার মধ্যেই আমাদের চিরস্থায়ী দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিহিত।
×