ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

হবিগঞ্জের আ’লীগ নেতাসহ দুই আসামির বিরুদ্ধে ফর্মাল চার্জ দাখিল

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ১৪ মে ২০১৮

হবিগঞ্জের আ’লীগ নেতাসহ দুই আসামির বিরুদ্ধে ফর্মাল চার্জ দাখিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় গজানাইপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপ মিয়াসহ (৬৬) দুই আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে ফর্মাল চার্জ দাখিল করেছে প্রসিকিউশন পক্ষ। অভিযোগ আমলে নেয়ার জন্য ৭ আগস্ট দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেন। এর আগে তদন্ত সংস্থা ৮ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে। প্রসিকিউটর রিজিয়া সুলতানা চমন জনকণ্ঠকে বলেন, এ মামলার অন্য আসামি হলেন, মোঃ জামাল উদ্দিন আহম্মদ ওরফে মোঃ জামাল উদ্দিন (৬৫)। দুই আসামির মধ্যে গোলাপ মিয়াকে গত বছরের ১২ এপ্রিল এবং ২৩ নবেম্বর বিএনপি সমর্থক জামাল উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ মামলাটির তদন্ত শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ এলাকায় গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জনকে হত্যা, ৬ নারীকে ধর্ষণ, ২৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ৩০ জনকে অপহরণ-নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। প্রথম অভিযোগ: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ৯ নবেম্বর ভোর ৫টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত আসামি আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া ও মোঃ জামাল উদ্দিন আহম্মেদ ২০/২৫ জন পাকিস্তানী আর্মি নিয়ে নবীগঞ্জ থানার মামদপুর হিন্দুপাড়া ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিন বাবু রায়কে হত্যা করেন। এ দিন আসামিরা গৌরী রানীসহ মোট ১০জন লোককে আটক ও অপহরণ করে দিনারপুর আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে। এর মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বী চারজনকে হত্যা করা হয়। দ্বিতীয় অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১০ নবেম্বর ভোর ৫টায় আসামি আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া অন্যান্য রাজাকার ও কয়েকজন পাকিস্তানী আর্মি নিয়ে নবীগঞ্জের কান্দিরগাঁও গ্রামে অভিযান চালিয়ে দরছ মিয়াকে তার বাড়ি থেকে অপহরণ করে দিনারপুর আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেন। তৃতীয় অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১০ নবেম্বর সকাল ৮টার দিকে আসামি আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া অন্যান্য রাজাকার ও কয়েকজন পাকিস্তানী আর্মিকে সঙ্গে নিয়ে নবীগঞ্জের দেওপাড়া গ্রামে হিন্দুপাড়ায় অভিযান চালিয়ে নিরাই নমশুদ্রসহ হিন্দু ধর্মাবলম্বী তিনজনকে অপহরণ করে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করেন। চতুর্থ অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১১ নবেম্বর ভোর ৫টার দিকে আসামি শেখ গিয়াসউদ্দীন আহমদ অন্যান্য রাজাকার ও কয়েকজন পাকিস্তানী আর্মি নিয়ে নবীগঞ্জের বনগাঁও গ্রামে অভিযান চালিয়ে জহুর উদ্দিন, জনূ উল্লাহ ও দেওয়ান মামুন চৌধুরীকে অপহরণ আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে। পরে অর্থের বিনিময়ে জহুর উদ্দিন ও দেওয়ান মামুন চৌধুরী মুক্তি পেলেও জনূ উল্লাহকে আসামি আবুল খায়ের গোলাপ গুলি করে হত্যা করে। পঞ্চম অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১২ নবেম্বর বিকেল ৪টার দিকে আসামি আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া ও মোঃ জামাল উদ্দিন আহম্মেদ একদল পাকিস্তানী আর্মি নিয়ে নবীগঞ্জের লোগাঁও গ্রামে অভিযান চালিয়ে দুই নারীকে ধর্ষণ করে এবং অগ্নিসংযোগ করে কয়েকটি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়।
×