ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুর আবার সরব, দুই প্রার্থীর সমর্থকরা উজ্জীবিত

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১২ মে ২০১৮

গাজীপুর আবার  সরব, দুই প্রার্থীর সমর্থকরা  উজ্জীবিত

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, গাজীপুর ও নুরুল ইসলাম, টঙ্গী ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের স্থগিতাদেশের বাধা বৃহস্পতিবার সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে বাধা দূর হয়ে যাওয়ার পর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা আবারও নির্বাচনী মাঠে নামতে শুরু করেছেন। নির্বাচনের তারিখ নির্বাচন কমিশন থেকে ঘোষণা করা না হলেও প্রার্থীরা বসে নেই তাদের নির্বাচনী প্রচার থেকে। বিভিন্ন কৌশলে গণসংযোগ করছেন এবং নিজেদেরকে ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন ভোট পাওয়ার আশায়। শুক্রবার প্রার্থীগণ ব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন। জুমাবার হওয়ায় এদিন প্রার্থীরা তাদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। এ সময় তারা মুসল্লিদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেছেন এবং ভোট ও দোয়া চেয়েছেন। অনেক প্রার্থী ভোটারদের বাড়ি, শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভিড় জমিয়েছেন এবং নানা আশার বাণী শুনিয়ে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থী তাদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাত করে এদিনটি ব্যস্ত কাটিয়েছেন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন গত ৬ মে আদালতে স্থগিতাদেশ ঘোষণার প্রেক্ষিতে নগরীর সর্বত্র নিস্তব্ধতা চলে আসে। প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকসহ স্থানীয়রা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। চারদিন নিস্তব্ধতার পর বৃহস্পতিবার (১০ মে) উচ্চ আদালতে ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে ২৮ আগস্টের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করার আদেশ দেয়া হয়। আদালতের এ আদেশ জানতে পেরে নির্বাচনে সকল প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠে। ভোটারদের মাঝেও আনন্দ দেখা দেয়। চারদিনের হতাশা কাটিয়ে উজ্জীবিত হয়ে উঠে গাজীপুর সিটি’র নির্বাচনী পরিবেশ। সরব হয়ে উঠে পুরো গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকা ও ভোটাররা। নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীগণসহ তাদের কর্মী-সমর্থক ও নগরবাসীর মধ্যে উদ্দীপনা ফিরে আসে। উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর রবিবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নতুন নির্বাচনী তারিখ ঘোষণা করবেন নির্বাচন কমিশন। শুক্রবার আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম শুক্রবার তার নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন অপর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের বাড়ির পাশে টঙ্গী সরকারী কলেজ মসজিদে জুমা নামাজ আাদায় করতে। অপরদিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বরাবরের মতো জুমা নামাজ আদায় করেন টঙ্গীর বড় দেওড়ার মৃত্তিবাড়ি রোডে তার প্রতিষ্ঠিত আহসানউল্লাহ সরকার মাদ্রাসা কমপ্লেক্স মসজিদে। উভয় প্রার্থীই মুসল্লিদের কাছে দোয়া কামনা করেন। এদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলহাজ মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের ছয়দানা এলাকার বাসভবনে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাকর্মীরা শুক্রবার সকাল থেকে এসে ভিড় জমাতে শুরু করেন। এ সময় মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম নেতাকর্মীদের সঙ্গে আদালতের নির্দেশনানুযায়ী ঘোষিত সময়ে নির্বাচনের জন্য খোলামেলা মতবিনিময় করেন। তিনি নতুন উদ্যোমে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকার বিজয়কে সুনিশ্চিত করতে নেতাকর্মীদের আবেদন জানান। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে যাতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আর কেউ বাধাগ্রস্ত করতে না পারে সেদিকে সজাগ থাকার জন্য আহ্বান জানান নেতাকর্মীদের প্রতি। তিনি উচ্চ আদালতের ১০ মে’র রায়কে স্বাগত জানিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সকলের সুবিধাজনক সময়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সু-সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। এদিকে শুক্রবার সকালে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলহাজ হাসান উদ্দিন সরকারের টঙ্গীর বাসভবনে আগত বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে উচ্চ আদালতের নির্দেশনামতে ঘোষিত তারিখ ২৮ আগস্টের মধ্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় তিনি আদালতে আইনী লড়াইয়ের প্রথম ধাপে তিনি বিজয়ী হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি ধানের শীষ প্রতীকে ভোটের লড়াইয়েও বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ সময় তিনি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যাতে সবাই ভোট দিতে পারে সে বিবেচনায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানান নির্বাচন কমিশনের কাছে। শ্রমিকদের স্বার্থে ২৬ কিংবা ২৭ জুন ভোট চান হাসান উদ্দিন সরকার ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার আগামী ২৬ অথবা ২৭ তারিখ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। তিনি শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে সাংবাদিকদের কাছে সাক্ষাতকার দেয়ার সময় এ দাবি জানান। এ সময় তিনি বলেন, গাজীপুর শিল্প সমৃদ্ধ এলাকা। এখানে বহু শ্রমিক এবং ভাসমান ভোটারের বসবাস। ঈদের ছুটিতে এসব ভোটার গ্রামের বাড়িতে যান এবং তাদের ফিরতে কয়েকদিন লেগে যায়। বিপুল সংখ্যক এসব ভোটার যেন নির্বাচনী উৎসবে অংশ নিতে পারেন সেজন্য ২৬ কিংবা ২৭ জুন ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠান হলে ভাল হয়। এর আগে তিনি জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন। এ সময় তার সঙ্গে গাজীপুর মহানগর লেবার পার্টির সভাপতি আহসান হাবীব ইমরোজ, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল্লাহ আল-মামুন, টঙ্গী সচেতন নাগরিক পরিষদের সভাপতি শাহাব উদ্দিন সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদসহ ২০ দলীয় জোটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
×