ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এনইসি সভায় অনুমোদন

এবার ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার এডিপি

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১১ মে ২০১৮

এবার ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার এডিপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচনের বছরে শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে রেকর্ড আকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) অনুমোদন দিল সরকার। আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের অনুমোদিত এডিপি বা উন্নয়ন বাজেট হচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকার। এটি বর্তমান সরকারের টানা দুই মেয়াদের শেষ এডিপি, যার শুরু হয়েছিল ২০০৯-১০ অর্থবছরে। ওই বছর এডিপির আকার ছিল ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় নতুন এডিপির অনুমোদন দেয়া হয়। শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সভায় প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সভার বিস্তারিত তথ্য ব্রিফিং করেন। মন্ত্রী জানান, অনুমোদিত মূল এডিপির আকার হচ্ছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ও বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর বাইরে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে ৭ হাজার ৮৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এডিপি হচ্ছে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লাইফ লাইন। তাই আমরা পরিকল্পিতভাবে এগুচ্ছি। যতটুকু বাস্তবায়ন সম্ভব, এডিপির আকার তার মধ্যেই সীমিত রাখা হচ্ছে। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বলে কিছু নাই, থাকবে না। নির্বাচনের কারণে এডিপি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে এই ধারণা থেকেও আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। গত ১০ বছরে আমাদের সক্ষমতা আমরা বাড়িয়েছি। এটা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ’৪১ সালে উন্নত দেশের কাতারে যাওয়া। ২০৩০ সাল মেয়াদী এসডিজির হাত ধরে আমরা সেখানে পৌঁছাতে চাই। মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া নিয়ে সরকারের নিজের মধ্যে এক ধরনের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মধ্য আয়ের দেশ বলতে আসলে কিছু নেই। অর্থনৈতিক সক্ষমতা অনুযায়ী জাতিসংঘ ও বিশ্ব ব্যাংকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্যাটাগরি করে থাকে। বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব মতে, আমরা নিম্নআয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ হয়েছি। আর জাতিসংঘের মানদ-ে আমরা স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে আছি। ভারত, ব্রাজিল, চীন, মালয়েশিয়া এই দেশগুলোও আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ। ’২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার যে লক্ষ্য আমরা ঠিক করেছিলাম, তা আসলে এরই মধ্যে অর্জিত হয়ে গেছে। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া। এজন্য আমাদের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ কমপক্ষে ৪ হাজার ১২৫ ডলারে নিয়ে যেতে হবে। এ সময়ের মধ্যে এটা অর্জন সম্ভব। মন্ত্রী বলেন, ২০০৮ এর নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর চারটি বিষয়ে কথা দিয়েছিলেন। এগুলো হচ্ছে সবার স্কুলে উপস্থিতি, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়া, ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুত সুবিধা নিশ্চিত করা। ইতোমধ্যেই এগুলো পূরণ হয়েছে এবং পূরণের পথে রয়েছে। অনুমোদিত এডিপির বিভিন্ন দিক ॥ আগামী এডিপিতে সরকারের প্রতিশ্রুত মেগা প্রকল্পে অর্থ সরবরাহ করে যতদূর সম্ভব প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান করার চেষ্টা থাকছে। এজন্য স্বপ্নের পদ্মা সেতু, পদ্মা রেল সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, মাতারবাড়ি, মেট্রো রেলসহ বড় বড় প্রকল্পগুলোয় বড় অঙ্কের বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। খসড়া এডিপিতে মোট প্রকল্প সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৫১। ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম বলেন, একটি প্রকল্প বাদ পড়েছিল। অনুমোদিত এডিপিতে সেটা যুক্ত করা হয়েছে। প্রায় দেড় হাজার প্রকল্পের মধ্যে সরকারের বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প রয়েছে। সড়ক, রেল ও বিদ্যুত খাতের এসব প্রকল্পের আটটিতেই আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ থাকছে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ॥ সর্বোচ্চ বরাদ্দ স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুকূলে ২৩ হাজার ৪৩৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ বিদ্যুত বিভাগের অনুকূলে ২২ হাজার ৮৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অনুকূলে ২০ হাজার ৮১৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর পর পর্যায়ক্রমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১১ হাজার ৭২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১১ হাজার ১৫৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা, সেতু বিভাগে ৯ হাজার ১১২ কোটি ১৫ লাখ টাকা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে ৯ হাজার ৪০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৮ হাজার ৩১২ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে ৬ হাজার ৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে ৫ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। রূপপুর বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্প ॥ অর্থ বরাদ্দের দিক থেকে এবার সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্প। নতুন এডিপিতে প্রকল্পটিতে বরাদ্দ থাকছে ১১ হাজার ৯৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা। প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকার এ প্রকল্পে চলতি অর্থবছর বরাদ্দ ছিল ৮ হাজার ৯০৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। সে হিসেবে আগামী অর্থবছরের জন্য ২ হাজার ১৯১ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ খাতে ক্রমপুঞ্জীভূত ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ৪৭ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু প্রকল্প ॥ স্বপ্নের ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পে আগামী এডিপিতে ৪ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে সেতুটির চারটি পিলারের ওপর তিনটি স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে এটি দৃশ্যমান হয়েছে। তবে নির্বাচনের আগে এই সেতুর কাজ শেষ হচ্ছে না, সেটি নিশ্চিত করেই বলা যায়। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের কোন তাড়াহুড়ো নাই। সেতুর কাজ যথাসময়ে শেষ হবে। জানা গেছে, নির্বাচনের আগে আরও কয়েকটি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে বড় অংশ দৃশ্যমান করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। সম্পূর্ণ দেশী অর্থায়নে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার এ প্রকল্পে চলতি বছর বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে ১৫ হাজার ২৮ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প ॥ নির্মিতব্য পদ্মা সেতুর পাশাপাশি রেললাইন স্থাপনে জন্য পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ আছে ৫ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার এ প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। সম্প্রতি চীনের সঙ্গে ঋণ চুক্তি হওয়ায় এর কাজে গতি আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। ঢাকায় মেট্রোরেল ॥ রাজধানীর যানজট নিরসনে নেয়া ‘ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ এর কাজ ২০১৬ সালের জুনে উদ্বোধন করা হয়। এতে আগামী এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩ হাজার ৯০২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এমআরটি বা মেট্রোরেলের এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা টাকা। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জীভূত ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্র ॥ এ প্রকল্পে আগামী এডিপিতে বরাদ্দ থাকছে ২ হাজার ১৭১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকার এ প্রকল্পে এ বছর বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পটিতে ক্রমপুঞ্জীভূত ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা। এছাড়াও কর্ণফুলী টানেল, পায়রা বন্দর ও কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পে বড় অঙ্কের বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
×