ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

যৌতুক নিয়ে মিথ্যা মামলা করলে জেল-জরিমানা

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৮ মে ২০১৮

যৌতুক নিয়ে মিথ্যা মামলা করলে জেল-জরিমানা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ যৌতুক নিয়ে মিথ্যা মামলা করলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল বা ৫০ হাজার টাকার জরিমানার বিধান রেখে ‘যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ ছাড়া মন্ত্রিসভা বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী বিমসটেকভুক্ত ৭টি দেশের মধ্যে নৌপথে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সহজ করতে চুক্তির খসড়া অনুমোদন করেছে। পাশাপাশি ‘দ্য গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ’ এ্যাওয়ার্ড পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সব অনুমোদন দেয়া হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের একথা বলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নতুন একটি বিধান রয়েছে খসড়া আইনে। মিথ্যা মামলা করলে শাস্তি হবে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদ- বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। আগে মিথ্যা মামলার জন্য আইনে কোন বিধান ছিল না। এতে মিথ্যা মামলা-সংক্রান্ত শাস্তির ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতি সাধনের অভিপ্রায়ে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অধীনে মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান তা হলে তিনি বা তারা অনধিক ৫ বছর মেয়াদের কারাদ- বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। শফিউল আলম বলেন, মূল আইনটি একটি অর্ডিন্যান্স ছিল- ‘দ্য ডাউরি প্রহিবিশন অর্ডিন্যান্স’। প্রথমে ১৯৮০ সালে একটি আইন করা হয়। সেটা ১৯৮২ সালে একটি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে সংশোধন করা হয়। এরপর ১৯৮৪, ১৯৮৬ সালে সংশোধন করা হয় অর্ডিন্যান্স দিয়ে। এটাকে হালনাগাদ করার জন্য নতুন করে আইন করা হয়েছে। আগের আইনের ধারাগুলো নতুন আইনে মোটামুটি একই রকম আছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সামান্য একটু পরিবর্তন করে এটাকে আনা হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধের মূল দ- আগের মতোই আছে। তবে জরিমানার ক্ষেত্রে একটু পরিবর্তন আনা হয়েছে। তিনি বলেন, যৌতুক দাবি করার দ- আগে ছিল এক থেকে ৫ বছরের কারাদ- বা জরিমানা। এখন দ- আগের মতোই তবে জরিমানা ফিক্সড করে দেয়া হয়েছে- সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা। যৌতুক দেয়া বা নেয়ার শাস্তি ছিল এক থেকে পাঁচ বছর কারাদ- বা জরিমানা। তবে জরিমানা নির্দিষ্ট করা ছিল না। নতুন আইনে কারাদ- ঠিক রাখা হয়েছে। তবে জরিমানা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা। শাস্তির ক্ষেত্রে যেখানে জরিমানার কথা বলা ছিল নতুন আইনে সেখানে পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সেটা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। শাস্তির ক্ষেত্রে জেল বা জরিমানা বা উভয় দ- হতে পারে। বিমসটেক দেশগুলোর মধ্যে নৌপথে পণ্য পরিবহনে চুক্তি হচ্ছে ॥ বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী বিমসটেকভুক্ত ৭টি দেশের মধ্যে নৌপথে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সহজ করতে চুক্তির খসড়া অনুমোদন করেছে সরকার। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘বিমসটেক (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিকাল এ্যান্ড ইকনোমিক কো-অপারেশন) সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সম্পাদনের লক্ষ্যে এগ্রিমেন্ট অন কোস্টাল শিপিং’ এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বিমসটেক সদস্যভুক্ত ৭টি দেশের মধ্যে স্বাক্ষরের জন্য একটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন নেয়া হয়েছে। এটা হলে এই ৭ দেশের মধ্যে নৌ যোগাযোগ, বিশেষ করে পণ্য সামগ্রী নৌপথে বহন সহজতর হবে। শফিউল আলম বলেন, এটি খুবই ছোট চুক্তি। ৭টি দেশই এই খসড়ায় একমত হয়েছে। বাংলাদেশ এটাতে সম্মতি জ্ঞাপন করেছে। ১৯৯৭ সালের ৬ জুন এই জোট গঠিত হয়। বর্তমানে এর সদস্যরা হলো- বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভুটান ও নেপাল। প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রিসভার অভিনন্দন ‘দ্য গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ’ এ্যাওয়ার্ড পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের শুরুতে এই অভিনন্দন জানানো হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোঃ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান। গত ২৭ এপ্রিল ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ড’ পান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নারী নেতৃত্বে সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি এই সম্মানজনক এ্যাওয়ার্ড পান। বাংলাদেশসহ এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নারী শিক্ষা ও ব্যবসায়িক উদ্যোগের বিষয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল সামিট অব উইমেন এই পুরস্কার দেয়। কবি বেলাল চৌধুরীর মৃত্যুতে মন্ত্রিসভার শোক ॥ কবি বেলাল চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভা বৈঠকের শুরুতেই এই কবির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়। ‘বেলাল চৌধুরী একাধারে কবিতা, গল্প, উপন্যাস রচনা করেছেন। প্রবন্ধ, কলাম, ফিচার, গল্প, ভ্রমণ কাহিনী, শিশু সাহিত্য, কথাসাহিত্যসহ সাহিত্যের প্রায় সব অঙ্গনে তার পদচারণা ছিল। বেলাল চৌধুরী ফারসি, জার্মানি, স্পেনিস, পর্তুগীজ ও জাপানী কবি-লেখকদের ছোট গল্প ও কবিতা বাংলার অনুবাদ করেন। এছাড়া তিনি ভাষা ও সাহিত্যে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের জন্য ২০১৪ সালে একুশে পদক পান। বাংলা একাডেমি, নিহারঞ্জন, জাতীয় কবিতা পুরস্কারসহ বহু সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮০ বছর বয়সী বেলাল চৌধুরী গত ২৪ এপ্রিল মারা যান। তিনি কিডনি জটিলতা, রক্তশূন্যতা ও থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছিলেন। কোটা সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়নি মন্ত্রিসভায় ॥ কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন স্থগিতের সময়সীমা সোমবার শেষ হলেও কোটা বাতিল বা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়ে কোন অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তবে কোটার বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে শীঘ্রই কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোটা নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কি-না বা কোটার প্রজ্ঞাপন জারির অগ্রগতি কতদূর- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোটা নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি, কোন অগ্রগতিও নেই। যে অবস্থায় ছিল, তাই। শিক্ষার্থীরা ৭ মে’র মধ্যে কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির সময় বেঁধে দিয়ে ওই পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচী প্রত্যাহার করেছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের কাছে এখনও কমিটি গঠনের আদেশ পৌঁছেনি। আনুষ্ঠানিকভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বলেছি এটার অগ্রগতি আমাদের জানানোর জন্য- আমাদের কী করণীয়। কোটা নিয়ে আপনারা কোন বৈঠক করেছেন কি-না এ বিষয়ে তিনি বলেন, না, কোন বৈঠক হয়নি। তবে কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির প্রক্রিয়াটা কি হবে- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জনপ্রশাসন থেকে একটা প্রজ্ঞাপন (কমিটি গঠনের) জারি হলে আমাদের কাছে আসবে, আমরা তখন কমিটি নিয়ে বসব। কত দিনের মধ্যে সেই কমিটি হবে তার কোন সময়সীমা নির্ধারণ করা নেই বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। প্রজ্ঞাপন শীঘ্রই জারি হবে কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে ছিলেন। কাজেই ওই বিষয়ে খুব বেশি কাজ আগায়নি। আমরা এখনও প্রধানমন্ত্রীর কোন অনুশাসন বা নির্দেশনা পাইনি। কমিটি গঠন হবে, বসবে। আলোচনা করে যেটা ভাল হয় সেটা করা হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কমিটি নিশ্চিত করবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে কমিটি হবে। কমিটির বাকি সদস্য কারা হবে সেটা জনপ্রশাসন ঠিক করবে। বর্তমানে সরকারী চাকরিতে সংরক্ষিত কোটার পরিমাণ ৫৬ শতাংশ। চাকরিতে বাকি ৪৪ শতাংশ নেয়া হয় মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে। বিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০ ও উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা আছে। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে। এই কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করছিলেন তারা। কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল বুধবার জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোন কোটারই দরকার নেই। যারা প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেব। কিন্তু এরপর প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য অনুযায়ী কোটা নিয়ে কোন আদেশ জারি করা না হলে ফের সোচ্চার হন শিক্ষার্থীরা। এই অবস্থায় গত ২৭ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানকের সঙ্গে বৈঠক করেন। অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে- এই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বেঠকে ৭ মে পর্যন্ত কোটাবিরোধী আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
×