ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনায় উৎসব আমেজ, গাজীপুরে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে দুই প্রার্থী

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৬ মে ২০১৮

খুলনায় উৎসব আমেজ, গাজীপুরে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে দুই প্রার্থী

অমল সাহা, খুলনা অফিস, মোস্তাফিজুর রহমান টিটু গাজীপুর ও নুরুল ইসলাম টঙ্গী থেকে ॥ খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের আর মাত্র ৮ দিন বাকি। ইতোমধ্যে প্রচারে মুখর সমগ্র নগরী। প্রার্থী, কর্মী ও নেতাদের গণসংযোগ, প্রচার, ভোটারসহ দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাওয়ায় উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। ভোটার, ভোটার নন নগরীতে বসবাসকারী সকলেই যেন এই ভোট উৎসবে মেতে উঠেছেন। নির্বাচনী প্রচার প্রচারে ঢেউ আছড়ে পড়ছে রূপসা-ভৈরব পাড়ের শিল্প নগরী খুলনায়। আর গাজীপুরে পুরো নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন দুই মেয়র প্রার্থী। খুলনা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদের প্রার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ওযার্ডের প্রার্থী কর্মীরা ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। সবকিছু ছাপিয়ে মেয়র পদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের ‘নৌকা’ ও বিএনপি মনোনীত ২০ দলীয় জোট সমর্থিত নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রচার প্রচারণায় জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। প্রচারে কেন্দ্রীয় নেতারাও অংশ গ্রহণ করছেন। কাক ডাকা ভোর থেকে গণসংযোগ করছেন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই মেয়র প্রার্থী। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই অনেকটাই উৎসবমুখর পরিবেশেই খুলনা সিটির নির্বাচনের প্রচার এগিয়ে চলেছে। প্রার্থীরা গণসংযোগে গিয়ে নির্বাচিত হলে কী কী করবেন সে অঙ্গীকারও করছেন। এ দিকে সংসদ সদস্য ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকায় নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারে নামতে পারছেন না আওয়ামী লীগের অনেক বড় নেতা। তবে নির্বাচন জমে ওঠার পূর্বে খুলনা সফর করে গেছেন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, আ’লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজসেবা সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাউসারসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। এ ছাড়া বর্তমানে খুলনায় প্রচারমুখর যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও বিসিবির পরিচালক বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ সোহেল। অনেকদিন আগে থেকেই খুলনায় অবস্থান করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনার সমন্বয় করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন। কেন্দ্রীয় নেতারা আসা যাওয়ার মাধ্যমে প্রচারে অংশ নিলেও স্থানীয় পর্যায়ের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা এবার এক্কাট্টা হয়ে নেমেছে। এ নির্বাচনকে তারা এক চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। একই ভোটারের কাছে বারবার কর্মীরা হ্যান্ডবিল নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন। অপরদিকে বিএনপির ধানের শীষের প্রচার করে ২০ দলীয় জোটের (কেসিসির) প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকায় গেছেন। বর্তমানে খুলনায় প্রচারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন ফারুক, রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, শামসুজ্জামান দুদু, মশিউর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বরিশালের সাবেক মেয়র মুজিবুর রহমান সারোয়ার, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা রহমান প্রমুখ। সঙ্গে রয়েছেন বিভাগীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় নেতারাও। এই প্রার্থীর নেতাকর্মীরাও ভোটারদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন, প্রার্থীও হ্যান্ডবিল হাতে তুলে দিয়ে ভোট চাইছেন। মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর সমর্থনে জোটভুক্ত দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা ছাড়াও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শিল্পী, ব্যবসায়িক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারাও অংশ নিচ্ছেন। আধুনিক খুলনা গড়তে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান খালেকের ॥ খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আলহাজ তালুকদার আব্দুল খালেক শনিবার সকালে নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে নৌকা প্রতীকের পক্ষে গণসংযোগ করেন। সকাল ৯ টায় তিনি আমতলা মোড় থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। এর আগে তিনি সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকা-২ এ কল্যাণ সমিতির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় ও পরে ইয়ং বয়েজ ক্লাবে মতবিনিময় করেন। এ ছাড়া সোনাডাঙ্গায় অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে গিয়ে সহমর্তিতা প্রকাশ করেন। গণসংযোগ ও মতবিনিময়কালে তালুকদার আব্দুল খালেক বলেছেন, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের অন্য সিটি কর্পোরেশন এলাকার উন্নয়ন হলেও বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে খুলনার উন্নয়ন কর্মকা-। বর্তমান মেয়র সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকায় বিভিন্ন প্রকল্প থেকে বিদেশী সংস্থা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিক। উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী তাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছেন। খুলনাকে আধুনিক, পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রদানের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। গণসংযোগকালে উপস্থিত ছিলেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ হায়দার আলী, জাসদ খুলনা মহানগর সভাপতি রফিকুল ইসলাম খোকন, বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র ও বিসিবি পরিচালক শেখ সোহেল, নগর আওয়ামী লীগ নেতা মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ, জাহাঙ্গীর হোসেন, সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক তসলিম আহমেদ আশা, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কাউন্সিলর প্রার্থী শেখ আব্দুল আজিজ, সাধারণ সম্পাদক শেখ রুহুল আমিন, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মোঃ রবিউল ইসলাম, যুবলীগ নেতা কাজী ফয়েজ মাহমুদ, এস এম হাফিজুর রহমান, শওকত হোসেন, রেজাউল করিম রেজা প্রমুখ। বিকেলে তিনি ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের অবশিষ্ট অংশ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। বাজারঘাটের উন্নয়ন ও ব্যবসায়ীদের কল্যাণে কাজ করার অঙ্গীকার মঞ্জুর ॥ কেসিসি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ও ২০ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু শনিবার সকাল সাড়ে ৭ টা থেকে নগরীর ৩০ নং ওয়ার্ডের রূপসা নদীর তীরে পাইকারি মাছ বাজার, রূপসা ফেরিঘাট, রূপসা স্ট্যান্ড রোড, রূপসা শ্মশান রোড বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। তিনি বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে নগরীর বাজারঘাটের উন্নয়ন ও ব্যবসায়ীদের কল্যাণে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, শাসক দলের প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বেপরোয়া আচরণ করছে। এই সরকারের দুঃশাসন ও লুটপাটের জবাব দিতে হবে। এই সরকারকে জনগণ আর দেখতে চায় না। ১৫ মে হবে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার ও গণতন্ত্রের বিজয়ের দিন উল্লেখ করে মঞ্জু বলেন, ব্যালটের মাধ্যমে আওয়ামী দুঃশাসনের জবাব দেবে জনগণ। তিনি ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন এ্যাডভোকেট বজলার রহমান, মোল্লা আবুল কাশেম, সিরাজুল ইসলাম, জামায়াতের নেতা এ্যাডভোকেট আব্দুল ওয়াদুদ, বিজেপি সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন সেন্টু, জামায়াত নেতা এ্যাডভোকেট শাহ আলম, বিএনপি নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী আমানউল্লাহ আমান, এহতেশামুল হক শাওন, হাসানুর রশিদ মিরাজ প্রমুখ। পরে তিনি সোনাডাঙ্গায় অগ্নিকা- কবলিত মানুষের কাছে গিয়ে সমবেদনা জানান। এর পর তিনি ২২ নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। কেসিসির তহবিলে ৭০০ কোটি টাকা ছিল নাÑ মেয়র মনি ॥ খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি বলেন, ২০১৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সময়ে কেসিসির নিজস্ব তহবিলে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ব্যাংক হিসাবে ৯৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা পেয়েছেন। কিন্তু সাবেক মেয়র আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠিতব্য কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক নগরবাসীর নিকট প্রচার করছেন তিনি ৭০০ কোটি টাকা রেখে গিয়েছিলেন। তার দেয়া এ তথ্য মিথ্যা। একজন দায়িত্বশীল রাজনীতিকের এমন বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার অনভিপ্রেত। তিনি বলেন, কেসিসির উন্নয়নে অর্থবরাদ্দের ক্ষেত্রে বৈষম্যেরও শিকার হয়েছি। তারপরও নির্বাচিত মেয়র হিসেবে নগরীবাসীর জীবনমান উন্নয়নে সাধ্যমতো কাজ করেছি। নগরীর জলাবদ্ধতা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নয়ন করা হয়েছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় নগর ভবনের সভা কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র মনিরুজ্জামান মনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মিথ্যা তথ্য দেইনি-খালেক ॥ তবে এ বিষয়ে সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি বর্তমান মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, আমি যখন মেয়রের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করি তখন ৭০০ কোটি টাকা রেখে আসি। এরপর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র দায়িত্ব পালন করেছেন। সে টাকা কীভাবে খরচ হয়েছে সেটা আমার জানার কথা নয়। বর্তমান মেয়র দায়িত্ব বুঝে নেয়ার সময়ে কত টাকা পেয়েছেন সেটা তার বিষয়। আমি যে টাকা রেখে এসেছিলাম সেই টাকার কথা বলেছি। মিথ্যা বলা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়ার কিছু নেই। তালুকদার খালেক বলেন, শীঘ্রই তিনি তার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে সকলের উদ্দেশে জানাবেন। সিইসির মতবিনিময় আজ ॥ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা আজ (৬ মে) রবিবার বিকেল তিনটায় খুলনা মহানগরীর বয়রাস্থ সরকারী মহিলা কলেজ অডিটোরিয়ামে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগদান করবেন। সভায় বিশেষ অতিথি থাকবেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। পিআইডির এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। গাজীপুর ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (জিসিসি) এবারের নির্বাচনের প্রার্থীরা বিজয়ী হতে ক্রমেই মরিয়া হয়ে উঠছেন। তারা এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে প্রার্থীরা প্রতিদিনই ভোটারদের খোঁজে নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের বিভিন্ন এলাকায় ছুটছেন। নিজ প্রার্থীর সমর্থনে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও দল বেঁধে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্বাচনী প্রচার ও গণসংযোগ করছেন। নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ৭ জন প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াই হবে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মনোনীত দুই প্রার্থীর মধ্যে। এ দুই মেয়র প্রার্থীর মধ্যে একজন ১৪ দলীয় জোটের আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। বয়সের দিক থেকে তরুণ মেয়র এ প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের গত নির্বাচনেরও তিনি মেয়র পদে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু তার বদলে দলীয় মনোনয়ন পান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান। অপরজন ২০ দলীয় জোটের বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। বয়সের দিক থেকে বেশ প্রবীণ এ মেয়র প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সত্তরোর্ধ্ব এ রাজনীতিবিদকে চলাফেরা লাঠি বা অন্য কিছুর সহযোগিতা নিয়ে। তিনি টঙ্গী পৌরসভার প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে দুই মেয়াদে চেয়ারম্যান ছিলেন। এ ছাড়া তিনি দুই বার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন। ইতোমধ্যেই নবীন ও প্রবীণের মধ্যকার এ ভোটযুদ্ধ জমে উঠেছে। বিজয় ছিনিয়ে আনতে দু’জনই মরিয়া হয়ে গণসংযোগ ও প্রচারের মাধ্যমে নির্বাচনী মাঠকে সরগরম করে তুলেছেন। দু’জনই সর্বশক্তি নিয়োগ করে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। তারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নাগরিক সেবা ও উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। সবার দৃষ্টিই এখন এ দুই মেয়র প্রার্থীর দিকে। রাজনৈতিক ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল মহলেই জোর আলোচনা চলছে এ দুজন প্রার্থীকে ঘিরে। নির্বাচনে এ দুই প্রার্থীর মধ্য থেকে একজন বিজয়ের মালা গলায় পড়বেন বলে স্থানীয়দের অভিমত। অপরদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আবারও তার পক্ষে প্রচার ও গণসংযোগে অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মী-সমর্থকদের পুলিশ গ্রেফতার ও হয়রানি করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি নির্বাচনে ধরপাকড় বন্ধ করে সকল প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানান। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শনিবার দুই জোটের হেভিওয়েট দুই মেয়র প্রার্থীর একজন নৌকা প্রতীক নিয়ে মহানগরের পূর্বদক্ষিণ প্রান্ত পুবাইলে এবং অপরজন ধানের শীষ নিয়ে উত্তর পশ্চিমপ্রান্ত কোনাবাড়ি এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগ ও প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। এ সময় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম উন্নয়ন ও নাগরিক সেবার জন্য তারুণ্য এবং প্রযুক্তিকে প্রধান্য দিয়ে ভোটের প্রচার চালান। অপরদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার শিক্ষা মাদক সন্ত্রাসকে প্রাধান্য দিয়ে গণসংযোগ করেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ॥ ১৪ দলীয় জোটের আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা) শনিবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের সুকুন্দিরবাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পথসভার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। তিনি কর্মী সমর্থকদের নিয়ে শূটিং পাড়া হিসেবে খ্যাত পুবাইল এলাকার ৩৯, ৪০, ৪১ এবং ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে দিনভর গণসংযোগ করেন। এতে মহাজোটের শরীকদলের নেতা কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণের শিক্ষক কর্মচারী, মসজিদের ইমাম এবং সাধারণ ভোটারগণ ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে যোগ দেন। গণসংযোগ কালে তিনি হায়দরাবাদ, মেঘডুবি, তালুটিয়া, হারবাইদ মোড়, হারবাইদ নন্দিবাড়ি, মাজুখান, কুদাব, বিন্দান, পুবাইল উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ, নওগাঁ, পুবাইল মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত পৃথক পথসভায় বক্তব্য দেন। গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য মোঃ আখতারুজ্জামান এ সময় বক্তব্য রাখেন। পথসভায় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি কাজ পছন্দ করি। বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে একটি স্বচ্ছল সমাজ গঠন করতে চাই। আমি নির্বাচিত হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মাদকমুক্ত সমাজ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দেব। আপনারা আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন, আমি আপনাদের একটি পরিকল্পিত নগর উপহার দিব।’ এ সময় বহু নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির প্রার্থী ॥ ২০ দলীয় জোটের বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার (ধানের শীষ) শনিবার সকাল ৯ টায় মহানগরের কোনাবাড়ি এলাকার রাজাবাড়ি থেকে প্রচার শুরু করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও মিডিয়া সেলের প্রধান ডাঃ মাজহারুল আলম জানান, ধানের শীষের প্রাথী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার শনিবার সকাল ৯ টা হতে সাবেক কোনাবাড়ি ইউনিয়নের কাদের মার্কেট, কুদ্দসনগর, কেয়া স্পিনিং মিল, মেডিটেক্স, জেলখানা গেট, মাহবুব মার্কেট, কলেজ গেট, বাঘিয়া পুকুরপাড়, নাছের মার্কেট, মিতালী ক্লাব, আমবাগ, তেঁতুল তলা, বিসিক গেট এলাকায় গণসংযোগ ও নির্বচনী প্রচারের কাজ করেন। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহম্মেদ, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক একেএম ফজলুল হক মিলন, সদস্য সচিব কেন্দ্রীয় নেতা কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আজম খান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা প্রফেসর আমিনুল ইসলাম, জাসাস কেন্দ্রীয় নেতা সায়লা, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মুফতী নাসির উদ্দিন, জেলা বিএনপির কুতুব উদ্দিন চেয়ারম্যান, আব্দুস সালাম, সৈয়দ হাসান সোহেল, লাবলু, বাবলু, কাপাসিয়া থানা বিএনপির সেক্রেটারি সাখাওয়াত হোসেন সেলিম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে নগরীর ৪২নং ওয়ার্ডের নারায়ণপুর করমতলা হিন্দু এবং খ্রীস্টান অধ্যুষিত এলাকায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও পেশাজীবী নেতা ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন এর উপদেষ্টা ডাঃ এম এ কুদ্দুস, যুবদলের সাবেক সভাপতি এলবার্ট পি কস্তা, সহস্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক আলমগীর হোসেন, পেশাজীবী গাজীপুর জেলার সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমীন আকন্দ, ডাঃ শাহজাহান সিরাজ, ডাঃ মোস্তফা কামাল, ২৭ নং ওয়ার্ডে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, নাজিম উদ্দিন আলম, তুহিন, ২৫ নং ওয়ার্ডে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শহিদুল্লা তালুকদার, ২৮ ওয়ার্ডে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, এসএম জিলানী, পেশাজীবী নেতা এ্যাড নুরুল কবীর শরীফ, আসাদুজ্জামান সোহেল, অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, হাসিবুর রহমান মুন্না, ২৯ নং ওয়ার্ডে কেন্দ্রীয় নেতা শাহ শহীদ সারোয়ার, ৩২নং ওয়ার্ডে সেলিম রেজা হাবিব, ছাত্রদলের আনিছুর রহমান, ৫৬,৫৭,৫৮ নং ওয়ার্ডে কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা মোস্তাজুল করিম বাদরু, নুরুল ইসলাম, বশির, হাবিবুর রহমান হাবিব, ১৮ নং ওয়ার্ডে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, ভিপি হারুনুর রশিদ, মশিউর রহমান বিপ্লব, শাহানা আক্তার, আব্দুল খালেক হাওলাদার, ওয়ার্ড সমন্বয়কারী হযরত আলী, ৩১ নং ওয়ার্ডে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, ১৭ নং ওয়ার্ডে কেন্দ্রীয় নেতা মীর নাসির উদ্দিন, সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুরুজ আহম্মেদ, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা মনির হোসেন, ২৫ নং ওয়ার্ডে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য একরামুল হক বিপ্লব, সালাউদ্দিন ভুঁইয়া, বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা কামাল আনোয়ার, ভিপি ইব্রাহিম, ছাত্রনেতা টিটু, তন্ময় হাসান, ৪১নং ওয়ার্ডে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলসহ প্রমুখ নেতাকর্মী গণসংযোগ করেন এবং ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চান। ধানের শীষের প্রচারে বাধা ও জোটের নেতাকর্মীকে আটকের অভিযোগ ॥ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিসহ ২০দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন অজুহাতে আটক ও ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে প্রচারে বাধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ধানের শীষ প্রতীকের মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী ডাঃ মাজহারুল আলম এ খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টায় গাজীপুর মহানগর জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আফজাল হোসাইনকে টঙ্গীর চেরাগ আলী মার্কেটের নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আটক করা হয়। এসময় ৮-১০ জনের সাদা পোশাকধারী পুলিশ আফজাল হোসাইনকে একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে যায়। গাজীপুর জেলা ছাত্রদল নেতা উজ্জল ও গাজীপুর জেলা জিয়া পরিষদের আহ্বায়ক আশরাফ হোসেন টুলুকে শুক্রবার সন্ধ্যায় জয়দেবপুর এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। শনিবার সকালে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবুল কালাম সিদ্দিকীকে কাশিমপুর এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেন বিএনপি প্রার্থীর মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী ডাঃ মাজহারুল। বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে অবিলম্বে ধরপাকড় বন্ধ করার দাবি জানান। ভয়-ভীতি দেখিয়ে কোন লাভ হবে না। কোন অবস্থাতেই আওয়ামী লীগকে খালি মাঠে গোল দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে না। এ বিষয়ে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) তোফাজ্জল হোসেন জানান, কাউকে আটক ও গ্রেফতারের বিষয়ে তার কাছে কোন তথ্য নেই। প্রথমবারের মতো নির্বাচনী এজেন্ট ও পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ ॥ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে দেশে প্রথমবারের মতো নির্বাচনী এজেন্ট ও পোলিং এজেন্টদের মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। শনিবার সকালে শহরের শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন ম-ল। পরে নির্বাচনী এজেন্ট ও পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুক ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহমেদ খান। রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন ম-ল জানান, এ প্রশিক্ষণে প্রতি মেয়র প্রার্থীর পক্ষে চারজন, সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে দুই জন ও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলদের পক্ষ থেকে একজন করে মোট ৪৫০জন নির্বাচনী ও পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তিনি আরো জানান, বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম কোন নির্বাচনের পূর্বে নির্বাচনী এজেন্ট ও পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
×