ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘বিশ্ব নেতৃত্ব দেয়ার প্রস্তুতি নিন’

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

‘বিশ্ব নেতৃত্ব দেয়ার প্রস্তুতি নিন’

বিশেষ প্রতিনিধি, লন্ডন থেকে ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তিপূর্ণ, উন্নত ও স্থিতিশীল এশিয়া গঠনে পারস্পরিক সেতুবন্ধন, যোগাযোগ বৃদ্ধি, জনগণের মতবিনিময় ও বোঝাপড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে এ অঞ্চলের নেতাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এশিয়ার দেশগুলো বিশ্বকে আরও নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যত দেখাতে পারে, যেখানে অর্থনীতি হবে আরও স্থিতিশীল ও বিকাশমান। বুধবার যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের গিল্ড হলে স্থানীয় সময় বিকেলে কমনওয়েলথ বিজনেস ফোরাম আয়েজিত ‘এশীয় নেতাদের গোলটেবিল বৈঠক : এশিয়া কী তার অগ্রগতি ধরে রাখতে পারবে?’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এশিয়া দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের প্রতি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে ভবিষ্যতে তিনি এশিয়াকে কীভাবে দেখতে চান এবং আগামীতে এশিয়া দেশগুলোই যে গোটা বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে- এ লক্ষ্যে এশীয় নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেন। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় সাফল্যে-অগ্রগতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের নজর কেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কারণে সমৃদ্ধ ও শান্তিময় এশিয়া গঠনে প্রধানমন্ত্রী যখন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন তখন বৈঠকে থাকা এশীয় নেতৃবৃন্দ টেবিল চাপড়িয়ে তার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। এদিকে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন ঘিরে রাজধানী লন্ডনে গড়ে তোলা হয়েছে নিñিদ্র নিরাপত্তা। দেশটির রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্মদিন উপলক্ষে বাকিংহাম প্যালেসসহ লন্ডনের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-দ্বীপসমূহ সাজানো হয়েছে বর্ণাঢ্য সাজে। প্রধানমন্ত্রী এই গোলটেবিল অনুষ্ঠানে যোগদান ছাড়াও রাতে লন্ডনের স্কাই গার্ডেনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে আয়োজিত স্বাগত অভ্যর্থনা ও নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন। সফরের অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল দশটায় কমনওয়েলথ সরকার প্রধান সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং দুপুরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ও কমওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রেসিয়া স্কটল্যান্ড কর্তৃক আয়োজিত অফিসিয়াল অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লন্ডনের গিল্ড হলে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন ভারতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের প্রধান নির্বাহী জারিন দারুওয়ালা। এতে এশিয়া অঞ্চল থেকে কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে লন্ডনে আসা দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে এশিয়ান নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, এশিয়ার দেশগুলোর আরও ব্যাপক প্রবৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। কেননা শুধু একটা দেশের মধ্যে নয়, বরং গোটা এশিয়া অঞ্চলে এটি প্রয়োজন। ভৌগোলিক সীমারেখার বাইরের এই সমৃদ্ধি ও সমতা প্রবৃদ্ধি আনবে, যেটি স্থিতিশীলতা অর্জনে এশিয়ার ভবিষ্যতের চাবিকাঠি হিসেবে পরিগণিত হবে। এশিয়া অঞ্চলের বিশাল শ্রমশক্তি, বাজার, প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছে এশিয়া, ভবিষ্যতেও এই এশিয়াই বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। কারণ এশিয়ার মানুষগুলোর আছে সহিষ্ণুতা, কঠোর পরিশ্রম করার ক্ষমতা, মেধা আর দৃঢ় আশাবাদ। তিনি বলেন, গত সাত বছরে এশিয়ার অর্জন অনেক। বিশ্বের অনেক বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ এবং প-িত এশিয়ার এই অর্থনৈতিক সফলতাকে ‘মিরাকল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এশিয়ার দেশগুলো বিশ্বকে আরও নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যত দেখাতে পারে, যেখানে অর্থনীতি হবে আরও স্থিতিশীল এবং দ্রুত বিকাশমান। তাই এশিয়ার দেশগুলোকে সতর্ক আশাবাদী হতে হবে। এশিয়াকে তার নিজস্ব চেতনা ধরে রাখতে হবে। কেননা বিশ্বায়নের ক্রমবর্ধমান পরিবর্তন, ডিজিটাল ও সোশ্যাল মিডিয়া মানুষকে যে রকম কাছে টেনে আনে, একইভাবে কিছু মানুষকে বিচ্ছিন্ন করেও দেয়। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সমৃদ্ধি নিয়ে আসে। এটি বৈষম্যও সৃষ্টি করে। আর সন্ত্রাস, সংঘাত, পুঁজিবাদ এবং অন্যান্য চ্যালেঞ্জ স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ। যেখানে আমাদের পথে পথে বাধা ও বিপদ রয়েছে। তরুণ, নারীসহ সব নাগরিকের জন্য বেশি করে বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমাদের চেতনা ও সমন্বিত মেধা দিয়ে এশিয়ার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি ভবিষ্যতের এশিয়াকে পরিচালনা করতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণের ওপরেও গুরুত্বারোপ করেন। অনুষ্ঠানে ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং উদ্ভাবনী সহযোগিতা বিষয়ে কমনওয়েলথের ভূমিকা’ শীর্ষক অন্য একটি অংশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ সংস্থাটিকে অবশ্যই আন্তঃকমনওয়েলথ বাণিজ্য, বিনিয়োগ বাড়াতে এবং বিপুলসংখ্যক যুব জনশক্তির সৃজনশীল শক্তিকে কাজে লাগাতে সক্ষম হতে হবে। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে ৩০ বছরের কম ৬০ শতাংশ জনশক্তিকে বিশাল সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিশাল সম্পদকে কাজে লাগানো, শ্রম বাজার সৃষ্টি, বাণিজ্য বাজার উন্মুক্ত রাখা, স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্বারোপ করার আহ্বান জানান এশিয়ার নেতাদের প্রতি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃবাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনী সহযোগিতা বাড়াতে বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে কমনওয়েলথ সদস্যভুক্ত দেশগুলোর খাতভিত্তিক ও শিল্পায়নের সম্ভাবনা ও উৎপাদনশীলতা, বিনিয়োগ নীতি এবং কৌশল, বিনিয়োগ সুবিধার ওপর সমীক্ষা ও পুনর্মূল্যায়ন করাও প্রস্তাব দেন তিনি। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্য উপকরণ ও সুবিধা উন্নতকরণ এবং অশুল্ক বাধা হ্রাস, অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধি, মুক্তবাজার সেবা এবং যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তি, সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা, ক্ষুদ্র ঋণ এবং ব্লু-ইকোনমির উন্নয়নে একটা ফান্ড গঠনের জন্যও এশীয় নেতৃবৃন্দের সামনে প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
×