ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

শূটার বাকির রৌপ্য জয়ের হাসি

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৯ এপ্রিল ২০১৮

শূটার বাকির রৌপ্য জয়ের হাসি

জাহিদুল আলম জয় ॥ বিদেশে আরও একবার বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন আব্দুল্লাহ হেল বাকি। তারকা এই শূটারের হাত ধরে অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্টে চলমান ২১তম কমনওয়েলথ গেমসে প্রথম পদক জিতেছে বাংলাদেশ। রবিবার শূটিংয়ে পুরুষদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে ২৪৪.৭ স্কোর করে রৌপ্য জিতেছেন ২৮ বছর বয়সী বাকি। এই ইভেন্টে স্বর্ণপদক জিতেছেন স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার ডেইন স্যাম্পসন (২৪৫.০ স্কোর)। আর ব্রোঞ্জপদক জিতেছেন ভারতের রবি কুমার (২২৪.১)। ২০১৪ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে রৌপ্যপদক জয় করেছিলেন বাকি। চার বছর পর পদকটি অক্ষুণœ রেখেছেন তিনি। গতবার স্বর্ণজয়ী ভারতের অভিনব বিন্দ্রার সঙ্গে অনেক ফারাক থাকলেও এবার স্বর্ণজয়ী স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার ডেইন স্যাম্পসনের কাছে ন্যূনতম ব্যবধানে হেরে দ্বিতীয় হয়েছেন। আর তাই বাকির পাশাপাশি আপসোসে ভাসছে পুরো বাংলাদেশ। ভাগ্য সহায় হলে কমনওয়েলথ গেমসে তৃতীয় সোনার পদকটি পেয়ে যেত লাল-সবুজের দেশ। সেটি না হলেও বাকির এই কীর্তিতে গর্বিত পুরো দেশ, জাতি। অসাধারণ সাফল্যের পর প্রশংসায় ভাসছেন নিপাট এই ভদ্রলোক। সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ অর্থপুরস্কারও পাচ্ছেন। বাংলাদেশ শূটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকার অর্থ পুরস্কার পাবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) পক্ষ থেকে আরও ৫ লাখ টাকার অর্থ পুরস্কার দেয়া হবে। সবমিলিয়ে ১২ লাখ টাকার অর্থ পুরস্কার পাচ্ছেন বাকি। রৌপ্য জিতলেও অর্জনটা হতে পারতো আরও বড়। মাত্র ০.৪ পয়েন্ট বেশি স্কোর করতে পারলে স্বর্ণপদক জিততে পারতেন বাকি। কিন্তু তাকে হতাশ করে রেকর্ড ২৪৫.০ স্কোর করে স্বর্ণ জয় করেন স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার স্যাম্পসন। যেখানে বাকির স্কোর ২৪৪.৭। এই ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছেন ভারতের রবি কুমার। তার স্কোর ২২৪.১। মজার বিষয় হচ্ছে কোয়ালিফাইং রাউন্ডে দ্বিতীয় ছিলেন রবি। আর শীর্ষে ছিলেন তার স্বদেশী দীপক কুমার। স্যাম্পসন ছিলেন তৃতীয়। আর বাংলাদেশের বাকি ছিলেন ৬ষ্ঠ স্থানে। কিন্তু ফাইনাল রাউন্ডে ঘুরে দাঁড়ান স্বপ্ন জয়ের নায়ক বাকি। আরেকটু মনোযোগী হলে হয়তো শীর্ষ স্থানটি দখলে নিতে পারতেন। অবশ্য এ নিয়ে তার কোন আক্ষেপ নেই। কারণ তার এই ইভেন্টে অংশ নেয়ারই কথা ছিল না। শেষ পর্যন্ত প্রিয় ইভেন্টেই সুযোগ পান, আর তাতেই করেছেন বাজিমাত। অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে বেলমন্ট শূটিং সেন্টারে ৬০ শটের বাছাইপর্বে ষষ্ঠ হলেও পদক লড়াইয়ে বাকি শুরুটা করেন দুর্দান্ত। অস্ট্রেলিয়ান ও ভারতীয় প্রতিযোগীর বিরুদ্ধে পারফর্ম করতে থাকেন সমানতালে। ৫০.৫, ১০১.৪, ১১২.৪, ১৪৩.০, ১৬৩.৪, ১৮৩.৫, ২০৪.৮ ও ২২৪.৬ স্কোর করে শেষ পর্যন্ত রৌপ্য জয় করেন। এর মধ্যে যে কোন একটিতে মাত্র ০.৪ পয়েন্ট বেশি স্কোর করতে পারলে বেলমন্ট শূটিং সেন্টারে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বেজে উঠত। তা না হলেও বাকি দেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন। স্বর্ণ জিততে না পারার আপসোস থাকলেও এই অর্জনে সন্তোষ প্রকাশ করে বাকি বলেন, ‘আমি খুশি এই অর্জনে। গ্লাসগো গেমসে আমার সঙ্গে অভিনব বিন্দ্রার তফাত অনেক ছিল। কিন্তু এবার খুবই কাছে ছিলাম। আরেকটু হলে স্বর্ণও পেতে পারতাম। আমার পাশে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’ এই নিয়ে কমনওয়েলথ গেমসের ইতিহাসে সবমিলিয়ে সপ্তম পদক জিতেছে বাংলাদেশ। আগের ছয়টি পদকও শূটিং থেকে এসেছে। যার মধ্যে স্বর্ণপদক দু’টি। ১৯৯০ সালে অকল্যান্ডের আসরে প্রথমবারের মতো স্বর্ণপদক জিতেছিল বাংলাদেশ। আতিকুর রহমান ও আব্দুস সাত্তার নিনির হাত ধরে এসেছিল ১০ মিটার এয়ার পিস্তলের দলগত সেরার পদকটি। এরপর ২০০২ সালে ম্যানচেস্টারের আসর থেকে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় স্বর্ণপদক এনে দিয়েছিলেন আসিফ হোসেন খান। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের সেরা হয়েছিলেন তিনি। বাকি দেশকে সাফল্যে ভাসালেও অন্যান্য ইভেন্টে হতাশ করছেন বাংলাদেশী প্রতিযোগীরা। সাঁতারে মোঃ আরিফুল ইসলাম ৫০ মি. ব্রেস্টস্ট্রোকে হিটে ৩০.৩৭ সেকেন্ড সময় নিয়ে অংশগ্রহণকারী ৩৫ খেলোয়াড়ের মধ্যে ২৩তম হয়েছেন। অর্থাৎ হিটেই বাদ আরিফুল। মোঃ মাহমুদুন নবী নাহিদ ১০০ মি. বাটারফ্লাই ইভেন্টে হিটে ৫৬.৯৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে অংশগ্রহণকারী ২৯ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে ২১তম হয়ে বাদ পড়েছেন। ভারোত্তোলনে বাংলাদেশর জোহুরা খাতুন নিশা ৭৫ কেজি ওজন শ্রেণী স্নেচে ৬৫ কেজি এবং ক্লিন এ্যান্ড জার্কে ৯০ কেজি মোট ১৫৫ কেজি উত্তোলন করেন। তার অবস্থান ১২ জনের মধ্যে ১২তম।
×