ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জাফর ইকবালকে হত্যাচেষ্টা ॥ তাকে পালাতে কারা অপেক্ষা করছিল তাদের খোঁজা হচ্ছে

ফয়জুর আনসারুল্লাহ জঙ্গী- নিশ্চিত গোয়েন্দা সংস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৩ মার্চ ২০১৮

 ফয়জুর আনসারুল্লাহ জঙ্গী- নিশ্চিত গোয়েন্দা সংস্থা

শংকর কুমার দে ॥ বিশিষ্ট লেখক ও সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালকে হত্যার চেষ্টাকারী ফয়জুরের সঙ্গে ছিল মোটরসাইকেলে আসা দুই সহযোগী। জাফর ইকবালকে হামলার পর ফয়জুরকে নিয়েই তাদের পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সে ছাত্র-শিক্ষকের হাতে ধরা পড়ে যাওয়ায় তাকে ফেলেই অপর দুই সহযোগী মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে গেছে। তদন্তকারীদের কাছে এই কথা বলেছে পুলিশ হেফাজতে দশ দিনের রিমান্ডে থাকা হামলাকারী ফয়জুল হাসান ওরফে ফয়জুর। জাফর ইকবালকে হত্যা চেষ্টার রহস্য উন্মোচনের তদন্ত করছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পাশাপাশি, র‌্যাব, সিআইডি, পিবিআই এবং ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, ফয়জুরে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, ট্যাব পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সে জঙ্গীদের টেলিগ্রাম এ্যাপস, কোড ইত্যাদি ব্যবহার করত যা সে নিজে থেকে না বললে কারও বোঝার সাধ্য নেই। তবে সে যে আনসার আল ইসলামের সদস্য এবং কারও নির্দেশে হামলা করেছে এটা প্রায় নিশ্চিত হয়েছে তদন্তকারীরা। ফয়জুরের পাশাপাশি তার ভাই এনামুল, বাবা শফিকুর রহমান, মামা ফজলুর রহমান, মা মিনারা বেগমকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ। গোটা পরিবারটিই জঙ্গী কিনা এই বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, পরিবারের যাদের বিরুদ্ধে জঙ্গী সম্পৃক্ততার সন্দেহ আছে যেমন ভাই, মা, বাবা, মামাকে রিমান্ডে নিয়ে বিষয়টি অনুসন্ধান করা হচ্ছে। তবে তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে, যা তদন্তের স্বার্থে এখনই বলা সম্ভব নয়। তদন্ত সূত্র জানায়, হামলাকারী ফয়জুরের বাবা, মা, মামা ও ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, মাঝে মধ্যেই ফয়জুর উধাও হয়ে কোথায় যেত এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে ফয়জুর। আর তার বাবা, মা, ভাই ফয়জুর যেখানে যেত তার সঠিক কোন তথ্য এখনও দিতে পারছেন না। এতে প্রমাণ পাওয়া যায় ফয়জুরের সঙ্গে কোন না কোন জঙ্গীগোষ্ঠীর যোগাযোগ রয়েছে এবং জঙ্গীগোষ্ঠীর নির্দেশেই জাফর ইকবালের ওপর হামলা করেছে ফয়জুর। জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্যরা সংগঠনের স্লিপার সেলের সদস্যদের সঙ্গে গোপন বৈঠকে মিলিত হতো, জঙ্গী সংগঠনটির কাছে মারকাজ বলে অভিহিত। মাঝে মধ্যেই মারকাজে গিয়ে অর্থাৎ গোপন স্থানে গিয়ে জঙ্গী সংগঠনের স্লিপার সেলের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হতো। স্লিপার সেলের সদস্যরা একে অন্যের নাম পরিচয় জানে না, যা তারা জানে তা ছদ্মনাম ও ছদ্মপরিচয়। জিজ্ঞাসাবাদে হামলাকারী ফয়জুর তার সহযোগীদের সম্পর্কে এই ছদ্মনাম ও ছদ্মপরিচয়ের ব্যক্তিদের কথাই বলছে, যাদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ফয়জুর বলেছে, টেলিগ্রাম এ্যাপসের মাধ্যমে তার সঙ্গে কোন আনসার আল ইসলাম নামের জঙ্গী সংগঠনের সংগঠিত গ্রুপের যোগাযোগ রয়েছে। সে যেভাবে জাফর ইকবালের ওপর হামলা করেছে তার সঙ্গে আনসার আল ইসলামের স্লিপার সেলের সদস্যদের হামলার ধরন, ফয়জুরের আচরণ এবং জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের মিলে যাচ্ছে। ফয়জুরকে আনসার আল ইসলামের কোন একটি স্লিপার সেলের সদস্য হিসেবেই জাফর ইকবালের ওপর হামলা করেছে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রায় নিশ্চিত হয়েছে তদন্ত কর্তৃপক্ষ। ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলছেন, জাফর ইকবালকে হত্যাচেষ্টার উদ্দেশ্যে ফয়জুরকে এমনভাবে মোটিভেটেড করা হয়েছিল, হামলার সময় মৃত্যুর জন্যও প্রস্তুত ছিল সে। আর যদি বেঁচে যায় তাহলে সে যেন সহযোগীদের সঙ্গে পালিয়ে আসতে পারে। এ জন্য মোটরসাইকেলযোগে তার দুই সহযোগী অপেক্ষা করছিল ঘটনাস্থলের অদূরেই। কিন্তু ফয়জুর ধরা পড়ে যাওয়ায় পালাতে পারেনি। কিন্তু তার কাছ থেকে হামলার পেছনে আর কারা রয়েছে, পেছনের নির্দেশদাতা কে বা কারা সেই বিষয়ে তথ্য পাওয়া কষ্টকর হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে উত্তর দেয়ার সময়ে মুখ খোলার বিষয়ে কৌশলী হয় ফয়জুর। বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে সে। জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলামের স্লিপার সেলের সদস্য জঙ্গী যারা তারা ধরা পড়লেও তাদের কাছ থেকে তথ্য আদায় করতে অনেক সময় নেয়, ফয়জুরের ক্ষেত্রেও তা-ই হচ্ছে।
×