ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষোভ

নাটোরে কর্মসৃজন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৭:০২, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নাটোরে কর্মসৃজন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর, ১৭ ফেব্রুয়ারি ॥ বড়াইগ্রামে ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ না করেই সরকারী অর্থ তস্বরুপের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের কাজে তালিকাভুক্ত শ্রমিকদের এক তৃতীয়াংশ শ্রমিক কাজে অনুপস্থিত থেকেই তাদের মজুরির টাকা নেয়া হয়েছে। আর প্রকল্পের খোদ কর্তাব্যক্তি ও প্রভাবশালীদের যোগসাজশেই সরকারী অর্থ লুটপাট চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সচেতন মহল ও স্থানীয়রা। সম্প্রতি অভিযোগের ভিত্তিতে প্রকল্পের কাজে অনিয়ম ধরা পড়লেও কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। এদিকে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী। তবে, প্রকল্পের কাজে যে সকল অনিয়ম পাওয়া গেছে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার পারভেজ। আনোয়ার পারভেজ জানান, প্রকল্পের ধরণ অনুযায়ী শ্রমিকের নামের তালিকা ছোট বড় হয়ে থাকে। তবে অভিযোগের ভিত্তিতে যেসব স্থানে প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে শ্রমিকের উপস্থিত ছিল না তাদের নাম কেটে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বাস্তবে শ্রমিকদের মজুরির দাম সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত মজুরির চাইতে বেশি। শ্রমিকের উপস্থিতির হার কমার এটাও একটা অন্যতম কারণ। সূত্রে জানা গেছে, সরকারী বরাদ্দে জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর, জোয়াড়ী ও মাঝগাঁ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের অধীনে রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে। প্রকল্প পাশের সময় দায়িত্বরত চেয়ারম্যান না থাকায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়া হয়। এর মধ্যে উপজেলার জোয়াড়ী ইউনিয়নের কুমরুল, কাচুটিয়া, আটঘরিয়ায় প্রকল্পের কাজ না করেই প্রকল্পের কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে মজুরির টাকা উত্তোলনের অভিযোগ চরমে ওঠে। এর মধ্যে নগর ইউনিয়নের প্রকল্পের অনিয়মের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। গত ফেব্রুয়ারি জোয়াড়ী ইউনিয়নের মেম্বার ফেরদৌস উল আলম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজকে সরকারী অর্থ তছরুপ ও প্রকল্পের অন্যান্য বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান। পরিদর্শনকালে তিনি প্রকল্পে ৪৩ জন শ্রমিকের পরিবর্তে ২৮ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখেন। এছাড়া বিভিন্নস্থানে শ্রমিক উপস্থিতির অনিয়ম খুঁজে পান তিনি। সে সময় তিনি অনুপস্থিত শ্রমিকদের তালিকা থেকে নাম কেটে দেন এবং তারা যাতে ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে টাকা তুলতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেন। সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রকল্পের কাজে হতদরিদ্র, অবহেলিতদের জায়গায় অনেক দলীয় লোকজন শ্রমিকদের খাতায় নাম। অনেক সচ্ছল ব্যক্তিরা এই প্রকল্পে নাম মাত্র শ্রমিক সেজে সরকারী টাকা লুটপাট করছেন। আর এতে প্রকল্পের খোদ কর্তা ব্যক্তিদের হাত রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। প্রকল্পের কাজে পুরুষ শ্রমিকের চাইতে নারী শ্রমিকরা বেশি উপস্থিত থাকে। পুরুষরা উপস্থিত থাকে না বললেই চলে। পুরুষ শ্রমিকরা শ্রমিক সর্দারকে ম্যানেজ করে প্রকল্পের কাজে ফাঁকি দিয়ে অন্য কাজে চলে যায়। জোয়াড়ী ইউনিয়নের মেম্বার মোঃ ফেরদৌস উল আলম বলেন, প্রকল্পের কর্তাব্যক্তি ও প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে অবৈধভাবে সরকারী টাকা আত্মসাত করা হচ্ছে। অথচ এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়ে কোন কাজ হচ্ছে না। এছাড়া অনেক সচ্ছল লোক এই প্রকল্পে বিশেষ ব্যবস্থায় শ্রমিক সেজে অর্থ লোপাট করছে। এই জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি। শ্রমিক সর্দার রেজাউল জানান, অনুপস্থিত থাকা শ্রমিকদের টাকার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে, প্রকল্পের কাজে অনুপস্থিত শ্রমিকরা প্রকল্পের কাজ না করে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে। অনিয়ম তদন্তে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসার পরে শ্রমিকদের সংখ্যা বেড়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, গোলাম রাব্বানী বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, যে সকল শ্রমিকরা অনুপস্থিত থাকেন তাদের নাম কেটে দেয়া হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের জন্য তৃণমূল পর্যায়ে অনেক প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের উন্নতি সাধন করছেন। আমরা সকলেই চাই যে নেত্রী দেশের উন্নয়নে যে বরাদ্দ দেন সেগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন। যারা এই ধরনের প্রকল্পের দুর্নীতির সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছেন তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা উচিত।
×