ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

উগ্র মতবাদের বই উদ্ধার

সারোয়ার-তামিম গ্রুপের দুই জঙ্গী গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭

সারোয়ার-তামিম গ্রুপের দুই জঙ্গী গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর খিলগাঁওয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, শায়খ আরিফ হোসেন (৪১) ও মোঃ রমিজ উদ্দিন ভূঁইয়া ওরফে বাবু (৩৪)। এ সময় তাদের কাছে কিছু উগ্র মতবাদের বই পাওয়া গেছে। র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান জানান, শনিবার রাতে তাকে খিলগাঁও স্টাফ কোয়ার্টার ও রমিজকে মুগদা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। আরিফ জেএমবির কেন্দ্রীয় দাওয়াতবিষয়ক শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর পূর্বাঞ্চলের দাওয়াতি আমির। রমিজ জেএমবির কেন্দ্রীয় দাওয়াতবিষয়ক শূরা সদস্য। লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল জানান, আরিফ ২০০১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে বাংলা বিষয়ে এমএ পাস করে। ২০০৪ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করার পর ২০০৬ সাল থেকে পুরনো ঢাকার বংশালের একটি স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ইংরেজি বিভাগে শিক্ষকতা করছিল। ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে শায়খ আরিফ হোসেন তার এক নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে মোহাম্মদপুরের বছিলায় জসিমউদ্দিন রাহমানীর মসজিদে যাতায়াত শুরু করে। একাধিকবার ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে জসিমউদ্দিন রাহমানীর অনুসারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে শায়খ আরিফ হোসেন রাজধানীর নন্দীপাড়ার কোরআন-সুন্নাহ একাডেমী মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে আবির্ভূত হয়। এ সময় থেকেই তার উগ্রবাদী বক্তব্য বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের সদস্যদের আকৃষ্ট করতে থাকে। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত প্রায় ৩৫০-৪০০ জন সদস্যকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে পরিচালনা করেছে। নেতৃত্বের কারণে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে জেএমবির আরেক ধর্মীয় গুরু মাওলানা আব্দুল হাকিম এবং জসিমউদ্দিন রাহমানীর একান্ত সহযোগী ও উপদেষ্টা হাফেজ মোঃ ইসহাকের সঙ্গে তার অন্তর্কোন্দল শুরু হয়। ২০১৫ সালের শেষদিকে জেএমবির তৎকালীন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা মোঃ তারিকুল ইসলাম ওরফে তারেক ওরফে সাকিব (৩৩) এর কাছ থেকে সে জেএমবিতে যোগদানের দাওয়াত পায়। সেই দাওয়াত গ্রহণ করে। পরবর্তী ২০১৬ সালে জেএমবির দাওয়াতি শাখার শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর পশ্চিমের দাওয়াতি আমির ইমরান আহমেদের (৩৭) সঙ্গে শায়খ আরিফ যুগপৎভাবে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। ইতঃপূর্বে র‌্যাব-১১ ইমরানকে গ্রেফতার করা হয়েছে র‌্যাব অধিনায়ক জানান। ওই বছরের মাঝামাঝি সময়ে মাওলানা আব্দুল হাকিম গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে জেএমবির ধর্মীয় গুরু হিসেবে আবির্ভূত হয় শায়খ আরিফ হোসেন। এরপর থেকে জেএমবির তৎকালীন আমির তার একজন মুখপাত্রের মাধ্যমে শায়খ আরিফের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করত। সংগঠনের কার্যক্রম সংক্রান্ত বিভিন্ন দিকনির্দেশনা আদান-প্রদান করত। এসময় শায়খ আরিফ সংগঠনের ধর্মীয়গুরু হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি পুরোপুরিভাবে ঢাকা মহানগর পূর্ব অঞ্চলের দাওয়াতি আমির হিসেবে কাজ করতে থাকে। শায়খ আরিফ হোসেন দাওয়াতি কাজের জন্য ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও রাজশাহী, বগুড়া, লালমনিরহাট, জামালপুর, চাঁদপুর ও বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ভ্রমণ করে সংগঠনের সদস্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সিলেটের আতিয়া মহলে অভিযানের পর শায়খ আরিফ, ইমরান আহমেদ, সাজিদ ওরফে সানজিদ, মোঃ তাওহিদুল ইসলাম ওরফে জুয়ায়ের ওরফে জুনায়েদসহ সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় আরও কয়েকজন মিলে ইমরান আহমেদ এর বাসায় গোপন বৈঠকে মিলিত হয়। তাদের পরবর্তী কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করে। সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অধিকাংশই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার বা নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করতে দাওয়াতি কার্যক্রম বৃদ্ধি করার বিষয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। এই প্রেক্ষিতে শায়খ আরিফ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সমমনা দলগুলোর সাথে যোগাযোগ শুরু করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রাথমিকভাবে সমমনা দল বা গোষ্ঠীকে ইসলামের দাওয়াতি কাজের ব্যানারে একত্র করা। ধীরে ধীরে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। সাম্প্রতিক সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের প্রেক্ষিতে বেশকিছু দিন যাবত জেএমবির দাওয়াতি শাখার শীর্ষ এই নেতা আত্মগোপনে ছিল।
×