ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতির প্রতিবাদ

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির প্রতিবাদে দেশজুড়ে ক্ষোভে ফুসছে ইসলামী দলগুলো। জেরুজালেমে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া প্রতিবাদের পরদিন শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে হেফাজত, ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামী ছাত্রসেনা, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনসহ বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন। জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতির প্রতিবাদে আগামী বুধবার ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছে হেফাজত। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সৌদি আরবসহ মার্কিন ও ইসরাইলের মিত্রদের বিষয়ে মুসলিম সম্প্রদায়কে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশ আমেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছে, তাদের সজাগ হওয়ার এখনই সময়। কারণ হায়েনার সাথে বন্ধুত্ব করার পরিণাম হবে ভয়াবহ। মুসলিম দেশসমূহকে আমেরিকার এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে সম্ভব সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বের মুসলমানগণ আমেরিকার পদলেহী সরকারগুলোকে ক্ষমা করবে না। ফিলিস্তিনের শান্তি কামনায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজের পর মোনাজাত করা হয়। জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতী মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী এটি পরিচালনা করেন। এখানে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত ইউসেফ এস ওয়াই রামাদান ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুরসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে। মার্কিন ও ইসরাইলবিরোধী এসব বিক্ষোভ থেকে কঠোর হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছে। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ডাকে বাদ জুমা বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। হেফাজত ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে রাজধানীতে বায়তুল মোকাররমের উত্তরগেটে সমাবেশ করেছেন নেতাকর্মীরা। নামাজের পরপরই বায়তুল মোকাররমের আশপাশে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে জড়ো হতে দেখা যায়। কর্মসূচি থেকে বুধবার বেলা ১১টায় ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ঘেরাও করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনের ঢাকা মহানগরের আমীর নূর হোসেন কাসেমি। বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটের ভেতরে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়। কাসেমি বলেন, যতদিন পর্যন্ত রাজধানীর (জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতি) এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হবে, আমাদের সংগ্রাম চলবেই। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করেন। মুসলমানদের প্রথম কেবলা বায়তুল মুকাদ্দস তথা জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের নেতাকর্মীরা বায়তুল মুকাররমের উত্তর গেট ও পল্টন মোড়ে বিক্ষোভ করেছেন। মিছিলে দখলদারি ইসরাইল ও তার মুরব্বি আমেরিকার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে হলেও বিশ্বের দুই’শ কোটি মুসলমান তা মেনে নেবে না। সংগঠনের ঢাকা মহানগরীর আমির মোস্তফা বশীরুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনের আমির ড. মওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী। আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জয়েন্ট সেক্রেটারী অধ্যাপক মোস্তফা তারেকুল হাসান, অফিস সম্পাদক মওলানা আবু বকর সিদ্দিক, বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার সভাপতি মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান ও ছাত্রনেতা ওমর ফারুক। নেতাকর্মীরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রু। মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশ আমেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছে, তাদের সজাগ হওয়ার এখনই সময়। কারণ হায়েনার সাথে বন্ধুত্ব করার পরিণাম হবে ভয়াবহ। তারা আরও বলেন, মুসলিম দেশসমূহকে আমেরিকার এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে সম্ভব সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বের মুসলমানগণ আমেরিকার পদলেহী সরকারগুলোকে ক্ষমা করবে না। অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাল মাদানি বলেন, ‘জেরুজালেমকে যারা ইসরাইলের রাজধানী করতে চায়, এটা আমরা করতে দেব না। মুসলমানদের এক বিন্দু রক্ত থাকতে জেরুজালেম ইহুদিদের রাজধানী করতে দেব না।’ বায়তুল মোকাররমের উত্তরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী। বাদ জুমা নেতাকর্মীদের একটি মিছিল পল্টন ও তার আশপাশে প্রদক্ষিণ করে। পুণ্যভূমি জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার প্রতিবাদে দেশব্যাপী বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় পরিষদ ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও ইসলামী ছাত্রসেনা। জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে শাহেদুল আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মিছিল সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, ট্রাম্পের এ ঘোষণা জাতিকে বিভক্ত করবে। শান্তিময় এ পৃথিবীকে অশান্ত করার হীন মন-মানসিকতার বহির্প্রকাশ তার এ ঘোষণা। প্রিয় নবীর মিরাজের স্মৃতিবিজড়িত বায়তুল মোকাদ্দাসকে ধ্বংস করার নীল-নক্সা বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে ট্রাম্প। তার এহেন ষড়যন্ত্র কখনও সফল হতে দেয়া হবে না মর্মে নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন এবং তার বিরুদ্ধে মুসলিম জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনমত গড়ে তোলার জোর দাবি জানান। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সিনিয়র যুগ্ম সাংগঠনিক সচিব সৈয়দ মুজাফ্ফর আহমদ। আরও ছিলেন এ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দীন, মুহাম্মদ নূরুল হক চিশতী, শাহাদাত হোসেন মানিক, মুহাম্মদ মাসউদ হুসাইন, ইমরান হুসাইন তুষার, আবদুল হাই, কাজী মুহাম্মদ তৈয়ব আলী, আবুল কালাম আজাদ, আনোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ জাকির হুসাইন, ফয়েজুল আমিন, মুহাম্মদ শাহাবুদ্দীন মীর, মুজাহিদুল ইসলাম প্রমুখ। বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ করেছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সংগঠনটি আগামী সোমবার সকাল ১০টায় মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে জেরুজালেমে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ জমিয়াতুল উলামার চেয়ারম্যান ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম ফরিদউদ্দীন মাসউদ বলেছেন, জেরুজালেমে ইসরাইলি হানা সহ্য করবে না বিশ্ব। ইসরাইল সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ফিলিস্তিনীদের ওপর চেপে বসেছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প জেরুজালেমে ইহুদীদের পক্ষে যে সমর্থন ব্যক্ত করেছেন তা বুমেরাং হবে। বিশ্ব জনমতের বিরুদ্ধে কোন কিছুই টিকে থাকে না উল্লেখ করে আল্লামা মাসউদ বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন টিকেনি। আরও কত রাজরাজারা হারিয়ে গেছে। জেরুজালেমে ইসরাইলের হটকারী সিদ্ধান্ত তাদের জন্যই বিপদ ডেকে আনবে। ট্রাম্পের ঘোষণার মাধ্যমেই জেরুজালেম ইসরাইলের রাজধানীর বৈধতা পাবে না দাবি করে এক বিবৃতিতে আল্লামা মাসউদ বলেন, মুসলমানদের প্রথম কেবলা বায়তুল মোকাদ্দাস জেরুজালেমে অবস্থিত। মুসলিম বিশ্বের এই পবিত্র স্থানকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া ইসরাইল। ইসরাইলের হাত থেকে জেরুজালেমকে রক্ষা করতে হবে। রক্ষা করতে হবে পবিত্র স্থান বায়তুল মোকাদ্দাস। মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্যই জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আল্লামা মাসউদ আরও বলেন, ইসরাইল মার্কিন মদদে যেভাবে জেরুজালেম নগরীকে তার রাজধানী বানাচ্ছে, এতে ইহুদীবাদীদের চিরাচরিত ধৃষ্টতা, আর এই ধৃষ্টতায় মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।
×