ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাজারে ইলিশ কেনার ধুম

চালের দাম যে হারে বেড়েছে সেভাবে কমছে না

প্রকাশিত: ০৫:০০, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

চালের দাম যে হারে বেড়েছে সেভাবে কমছে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চালের বাজার এখন স্থিতিশীল রয়েছে। শেষ মুহূর্তে বাজারে ক্রেতাদের ইলিশ কেনার ধুম পড়েছে। মা মাছ রক্ষা ও ডিম ছাড়া নিরাপদ করতে আজ মধ্যরাত থেকে ২২ দিনের জন্য ইলিশ ধরা, বিক্রিও বন্ধ হচ্ছে। আগাম শীতের সবজি উঠতে শুরু করেছে কাঁচাবাজারে। কমেছে চিনি, ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম। এদিকে, সরকারের নির্দেশে মিল মালিক ও আড়তগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান শুরুর পর চালের পাইকারি বাজারে কেজিতে ৩-৫ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছিল। দাম কমার প্রভাব পড়ে খুচরা বাজারেও। তবে যে হারে দাম বেড়েছে সেই একই হারে মূল্য কমার কোন লক্ষণ নেই। ফলে এখনও খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৫২ টাকায়। এই দাম স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য বেশি। একই সঙ্গে উন্নতমানের মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো চালের দাম কমছে না। যদিও সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, আমদানি বাড়ানো এবং মজুদদারিদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকায় শীঘ্রই চালের দাম কমে আসবে। ইতোমধ্যে আমদানি করা চালের দাম কিছুটা কমলেও খুব একটা নামেনি দেশী চালের দর। শুক্রবার রাজধানীর কাওরানবাজারসহ একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা স্বর্ণা ও পারিজা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৪৮ টাকা দরে। এছাড়া মিনিকেট প্রতি কেজি (ভাল মানের) ৬২ টাকা, মিনিকেট (সাধারণ) ৫৫-৫৬ টাকা, বিআর-২৮ ৫৫ টাকা, উন্নতমানের নাজিরশাইল ৬৫ টাকা, নাজিরশাইল (সাধারণ) ৫৫, হাস্কি ৫৪, পাইজাম ৫২, বাসমতি ৬৬, কাটারিভোগ ৭২ টাকা এবং পোলাওর চাল ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ওএমএস কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষ ট্রাক থেকে প্রতি কেজি চাল ৩০ এবং প্রতিকেজি আটা ১৭ টাকা দরে সংগ্রহ করতে পারছেন। এদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে চালের মজুদের প্রমাণ পায় সরকার। চাল মজুদের সঙ্গে বড় বড় মিল মালিক, আড়তদার, পাইকারি ব্যবসায়ী এবং আমদানিকারক দায়ী। এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযানের পর কিছুটা কমে আসে চালের দাম। যদিও দেশের প্রধান খাদ্যপণ্য চালের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির জন্য সরকারের দুর্বলতাকে দায়ী করেছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের মতে, বন্যার কারণে চাল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মূলত সরকারের নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতায় দামের ওপর বেশি প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন চালের দাম নিয়ে বলেন, প্রথম পর্যায়ে হাওড়াঅঞ্চলের বন্যায় ৮ থেকে ১০ লাখ টন চাল উৎপাদন কম হয়েছে। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০ লাখ টন চাল উৎপাদন কম হয়েছে। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টন চালের ঘাটতি মেটাতে সরকার কী সিদ্ধান্ত নেবে সে নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এসব কারণেই ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাতে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ইলিশ কেনার ধুম সাগর ও নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। ফলে সরবরাহ বাড়ায় কমেছে দামও। সাইজ ও আকারভেদে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৯০০ টাকায়। মাঝারি সাইজের ৮০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়, যা বছরের অন্য সময় কিনতে হলে প্রায় দেড় হাজার টাকা গুনতে হয়। এছাড়া আজ শনিবার মধ্যরাতের পর থেকে মা ইলিশ রক্ষায় আগামী ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সব ধরনের ইলিশ মাছ ধরা ও বিক্রি বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে করে শেষ মুহূর্তে চাহিদা বাড়ায় সপ্তাহের ছুটির দিন শুক্রবারে কোন কোন বাজারে ইলিশের দাম বেশি রাখা হয়েছে। অনেকে বেশি মাছ কিনে ফ্রিজে মজুদ করছে বলে জানালেন কাওরানবাজারের মাছ বিক্রেতা রায়হান। তিনি বলেন, এ বছর সবচেয়ে বেশি ইলিশ মাছ বিক্রি হয়েছে। নদী ও সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মাছ ধরা পড়ার কারণে দামও কম। ওই বাজারের ইলিশের ক্রেতা মাহমুদ হাসান বলেন, ইলিশ বিক্রি ২২ দিনের জন্য নিষিদ্ধ হচ্ছে আর এ কারণে মাছ কেনা। তিনি বলেন, বাসার সবার পছন্দ ইলিশ মাছ। আর তাই বেশি করে ইলিশ মাছ কেনা হলো। শীতের সবজি বাজারে ফুলকপি, বাঁধাকটি, শিম, টমেটো ও লাউসহ প্রায় অর্ধডজন শীতের সবজি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। যদিও এসব সবজির দাম চড়া। প্রতিটি ফুলকপি ৩৫ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা দরে। এছাড়া শিম ১০০ টাকা, হাইব্রিড টমেটো ১২০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, চালকুমড়া প্রতি পিস ৪৫-৫৫ টাকা, কচুর লতি প্রতি কেজি ৬০-৬৫ টাকা, পটোল ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫৫-৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৫০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০-৪০ টাকা, কচুরমুখী ৫০ টাকা এবং আমড়া ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ১৪০-১৪৫ টাকায় বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে তা কমেছে। কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকায়। লেয়ার মুরগি ১০ টাকা কমে ১৯০ টাকা, দেশী মুরগি প্রতি পিস ৪৪৫ টাকা, পাকিস্তানী লাল মুরগি কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। মুদিপণ্যের বাজারে ছোলা প্রতি কেজি ৮৫ টাকা, দেশী মুগডাল ১৩০ টাকা, ভারতীয় মুগডাল ৯০ টাকা, মাসকলাই ১২৫ টাকা এবং দেশী মসুরডাল ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
×