ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আটককৃতদের তথ্য

কক্সবাজার থেকে সটকে পড়ছে রোহিঙ্গারা

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

কক্সবাজার থেকে সটকে পড়ছে রোহিঙ্গারা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রোহিঙ্গারা কক্সবাজার থেকে সটকে চট্টগ্রাম শহর হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঢিলেঢালা নজরদারির কারণে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে তবে মুষ্টিমেয় কিছু অভিযানে রোহিঙ্গারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্টে ধরা পড়লেও বিভিন্ন পরিবহনে দেশীয় সিন্ডিকেট গাড়ি ভাড়া করেই এসব রোহিঙ্গাদের সুযোগ দিচ্ছে। অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানসহ এখন জীবিকা নির্বাহের তাগিদে রোহিঙ্গারা দেশের বিভিন্ন জেলা শহরগুলোর শ্রমবাজারে উঠতে শুরু করেছে। এমনকি সীতাকু-ের কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাট হয়ে রোহিঙ্গারা পাড়ি জমাচ্ছে দেশের একমাত্র ব-দ্বীপ অঞ্চল সন্দ্বীপে। এদিকে, শুক্রবার রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় অবৈধ ক্যাম্প গড়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগে ৬ জনকে গ্রেফতার করে ১৫ দিনের জন্য জেলে প্রেরণ করেছে র‌্যাব সেভেনের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত। অপরদিকে, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত এলাকার বাদাঘাট ইউনিয়ন থেকে আটককৃত ১২ রোহিঙ্গা সদস্যকে কক্সবাজার ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত বুধবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভিন্ন অভিযানে শহর থেকে আটক করা ২৮ রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে পাঠিয়েছে। কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানাধীন থাইংখালীস্থ হাকীমপাড়া এলাকায় রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে আশ্রয় দেয়ার ব্যবস্থা করার অভিযোগ। সেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জায়গায় অবৈধভাবে শরণার্থী ক্যাম্প স্থাপন করছে বিভিন্ন চক্র। তারা ক্যাম্প পরিচালনা করার জন্য গোপনীয়ভাবে একটি কমিটি গঠন করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদান করছে। এসব রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দানের বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও এবং বিভিন্ন সংস্থার কাছে হতে ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ করে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠে। এছাড়াও অসাধু কমিটির সদস্যরা সরকার অনুমোদিত ক্যাম্পে শরণার্থীদের গমনে বাধা দিচ্ছে নিজেদের স্বার্থে। অভিযোগ উঠেছে মেট্রো ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নগরীর বিভিন্ন থানা এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে শুধু সিএনজি টেক্সিতে তল্লাশি করা হচ্ছে। অথচ কম ভাড়ায় রোহিঙ্গারা বাসে-ট্রাকে চড়ে চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাড়ি জমাচ্ছে। শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন থানা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুলিশের ঢিলেঢালা তল্লাশি অভিযান। র‌্যাব সেভেনের দফতর থেকে জানা গেছে, র‌্যাবের মেজর মোঃ রুহুল আমিনের নেতৃত্বে ও কক্সবাজারের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল আহমেদের সহায়তায় হাকীমপাড়া এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে র‌্যাব সেভেনের সদস্যরা। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই এলাকায় অবৈধ ক্যাম্প তৈরির অপরাধে মনির আহাম্মদকে ২০ দিনের, ফরিদ আলমকে ১৫ দিন, নূরুল কবীরকে ১৫ দিন, নূরুল আমিন প্রকাশ বাবুকে ১৫ দিন, জয়নাল আবেদীনকে ১৫ দিনের এবং শাহাব উদ্দিনকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করে কক্সবাজার জেলখানায় প্রেরণ করা হয়েছে। জানা গেছে, গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত এলাকার বাদাঘাট ইউনিয়নে অভিযান চালায় জেলা পুলিশ। সীমান্তবর্তী গ্রাম গেটিলা থেকে পুলিশ রোহিঙ্গা আবদুস সবুরের পরিবারকে আটক করে। সবুর, তার স্ত্রী আমেনা বেগম, ছেলে আবদুল আলিম ও তার স্ত্রী উম্মুল খাইর এবং মেয়ে মোশারফা, সবুরের মেয়ে আসলামা, ফারিছা, হারিছা, তাহিলা, সাহিয়া ও উমামসহ মোট ১২ রোহিঙ্গা সদস্যকে আটক করে। শুক্রবার জেলা পুলিশ লাইন থেকে তাদের কক্সবাজার ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। এদিকে, গত বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর এলাকা থেকে ২৮ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে চান্দগাঁও থানা এলাকা থেকে ১১ জন, বাকলিয়া থানা এলাকা থেকে ৫ জন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হতে অসুস্থ রোগী ৮ জন ও তাদের সহযোগী ৪ জনকে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাসযোগে কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে।
×