ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

নদীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে

দখল থামছে না করতোয়ায়

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

দখল থামছে  না করতোয়ায়

সমুদ্র হক, বগুড়া ॥ দখল থামছেই না। নদী শীর্ণকায়। মৃত্যু পথযাত্রী। মানুষই হত্যা করছে। লোকজন বলাবলি করে করতোয়া এখন নগরীর বড় ড্রেন। ময়লা আবর্জনার ভাগাড়েও পরিণত। এর ওপরই মাটি ভরাট করে দখল। এই নদী বয়ে গেছে বগুড়া নগরীর পাশ দিয়ে। নোংরা কালো পানি। এর মধ্যে মানুষ আর নামতে পারে না। দিনভর ঘুরে বেড়ায় ‘হগ’ প্রাণী। নদীর দুই তীর অরক্ষিত। প্রভাবশালীরা প্রথমে তীরে বালু, মাটি, ইট ফেলে দখল করে। তারপর দিনে দিনে এগিয়ে যায় ভেতরে। এই দৃশ্য দেখে লোকজন বলে নদীর জীবনের ওপর কোদালের কোপ দেয়া হচ্ছে। মাটি শক্ত হয়ে গেলে শুরু হয় নির্মাণযজ্ঞ। নিচে শক্ত কনস্ট্রাকশন (গ্রাউন্ড ব্রেকিং)। দিনে দিনে গড়ে ওঠে বড় স্থাপনা। সাদা চোখেই এই অট্টালিকা দেখে বলা যায় কীভাবে নদী দখল করা হয়েছে। এভাবে একের দেখাদেখি আরেক প্রভাবশালী নদীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এভাবে করতোয়া নদীর ওপর গড়ে উঠছে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, আবাসিক ভবন, আধুনিক মার্কেট, ইত্যাদি। প্রায় তিন যুগ ধরে অবৈধভাবে নদী দখলের অপতৎপরতা চলছে প্রশাসন ও নদী দেখভালকারী কর্তৃপক্ষের সামনে। প্রশাসন মাঝেমধ্যে অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য মাঠে নামে। তারপর ‘অজ্ঞাত কারণে’ তা থেমেও যায়। বলাবলি হয় এগুলো ‘লোক দেখানো’। কেউ বলে ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেঁড়ো’। বছর দশেক আগে বগুড়া জেলা প্রশাসন নদী দখলকারীদের একটি তালিকা বানিয়ে উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়। তারপর হঠাৎ তা থেমে যায়। এদিকে একাধিক সূত্র জানায়, সেটেলমেন্ট অফিসের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের সহযোগিতায় দখলদাররা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে। এই কাগজপত্র যাচাই করা হয় না। সূত্র জানায়, ঢাকায় কেন্দ্রীয় রেকর্ডরুমে ১৯২০ সালের সিএস রেকর্ড এবং ১৯৬২ সালের এম আর রেকর্ডে করতোয়া নদীর মাপঝোক আছে। সেই রেকর্ড দেখে স্পষ্ট করে বলে দেয়া যায় কি পরিমাণ নদী ভূমি দখল হয়েছে। তা কখনই করা হয় না। রেকর্ডরুমের সেই কপি প্রশাসন ও নদী দেখভাল প্রতিষ্ঠান পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছে নেই। তারা সংগ্রহ করে না। করতোয়া তীরে গেলে খালি চোখেই দেখা যায় কীভাবে দখল হচ্ছে। জহুরুল হক ঘাটের কাছে, এসপি ব্রিজের কাছে, জেলা প্রশাসন অফিস থেকে অল্প দূরে, মালতিনগর চানমারি ঘাটের কাছে, নবাববাড়ি সড়কের ধারে গেলে দেখা যায় নদী দখলের উৎসব। নবাববাড়ি সড়কের ধারে একটি বিশেষ মার্কেটের পেছনের দিকে গেলে পরিষ্কার দেখা যায়, স্থাপনাটি নদীর মধ্যে কীভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এই বিশেষ মার্কেটের স্বত্বাধিকারী এতটাই শক্তিধর ও ক্ষমতাধর কেউ তার কোন দখলের ওপর হাত দিতে পারে না। গোকুল এলাকায় নদীর চলার পথ ভরাট ও রুদ্ধ করে তিনি নির্মাণ করছেন ইকো পার্ক। বগুড়ার নগরীর মানুষ এসব দেখে অনেকটা হতাশ হয়ে বলেন, একদার প্রমত্তা করতোয়া নদীর অস্তিত্ব শেষ পর্যন্ত বুঝি আর রইল না। ’৮৮ সালে নদীর উজানে গাইবান্ধার চকরহিমপুরে স্লুইস গেট নির্মাণ করে নদীর চলার পথ পরিবর্তন করে দেয়ার ফলাফল যে কোনভাবেই ভাল হয়নি তার প্রমাণ এখন মিলছে। নদীর পথ পরিবর্তন দখলদারদের পথ করে দিয়েছে। সুধীজন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বেসরকারী সংস্থা মাছে মধ্যে নদী দখল রোধে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। তাও ওই পর্যন্তই। এর পরের এপিসোড আর হয় না।
×