ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

দিনাজপুরে ডিবি পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ১৩, সড়ক অবরোধ

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

দিনাজপুরে ডিবি পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ১৩, সড়ক অবরোধ

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুরে মাদক উদ্ধারের নামে এক ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগে ডিবি পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় জনগণের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে ১৩ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৩ জনকে দিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশের ৭ এসআইসহ ৪০ জনকে বদলি করা হয়েছে। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মোঃ হামিদুল আলম জানান, এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাটি অবগত হওয়ার পর তিনি রবিবার রাতে এবং সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থল সদর উপজেলার রামসাগর রাস্তার হাজিরমোড়সহ ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। জানা যায়, রবিবার বিকেলে এসআই রেজাউল ইসলাম ও এএসআই জামিলের নেতৃত্বে দিনাজপুর সদরের মহব্বতপুর গ্রামে ডিবি পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযান চালায়। ডিবি পুলিশের অভিযানকালে নুরুজ্জামান (২২) নামের এক ব্যক্তির কাছে মাদক আছে বলে তাকে মারধর করা হয়। এ সময় এলাকাবাসী বাধা দিলে ডিবি পুলিশের সঙ্গে তাদের বাগ্বিত-া ঘটে। একপর্যায়ে ডিবি পুলিশ স্থানীয়দের ধাওয়া করলে ডিবি পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ বেধে যায়। এ অবস্থায় ঘটনাস্থলে থাকা ডিবি পুলিশ সদস্যরা পালিয়ে যায়। রবিবার সন্ধ্যার পর অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ডিবি পুলিশ গ্রামবাসীর ওপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ করে। এই ঘটনায় কমপক্ষে ১৩ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যেÑ জয়বর আলী (৪০), সাদেক আলী (৩৫) ও আমজাদ হোসেনকে (৪২) সোমবার সকালে দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর সোমবার সকালে এলাকার লোকজন অপরাধী ডিবি পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে। এলাকাবাসী সড়কে গাছের গুঁড়ি ও ইট দিয়ে অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। সোমবার দুপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীকে শান্ত করেন এবং দোষী পুলিশের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে ঘোষণা দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ওই এলাকার ইউপি সদস্য আবদুর রাজ্জাক ও সোলায়ম আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায়ই ডিবি পুলিশের লোকজন সেখানে গিয়ে নিরীহ জনগণকে হয়রানি করে আসছিল। কিন্তু মূল যারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ডিবি পুলিশের আটক করা নুরুজ্জামান মাদকের সঙ্গে জড়িত নয়। এক সময়ে মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকলেও এখন সে ভাল হয়ে গেছে। এই বিষয়টি জানানোর পর উল্টো ডিবি পুলিশের লোকজন গ্রামবাসীর ওপর চড়াও হয় এবং মহিলাসহ সকলকেই মারধর করে চলে যায়। পরে অতিরিক্ত পুুলিশ এসে আবারও গ্রামবাসীদের মারধর করে। এ কারণেই গ্রামবাসী ডিবি পুলিশ সদস্যদের প্রতিহত করতে রাস্তায় নেমে আসে। এদিকে গ্রামবাসী গণস্বাক্ষর দিয়ে সোমবার দুপুর ২টায় পুলিশ সুপার বরাবরে একটি অভিযোগ দেয়। অভিযোগ করা হয়েছে, প্রায়ই ডিবি পুলিশ ওই এলাকায় গিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করে। সোমবার বিকেলে পুলিশ সুপারের নির্দেশে ডিবি পুলিশের ১০ এসআই, ৫ জন এএসআই ও ২৫ জন কনস্টেবলসহ মোট ৪০ জনকে বদলি করা হয়েছে। পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ডিবি পুলিশের দুইজন পরিদর্শক মনিরুজ্জামান ও মোস্তাফিজুর রহমানের বদলির আদেশ রংপুর রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিষয়ে ডিবির পরিদর্শক (ওসি) মনিরুজ্জামানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ডিবির পুরো স্টাফকেই বদলি করা হয়েছে। তবে তাকে বদলি করা হয়েছে কিনা তা জানা নেই। এখনও তিনি আদেশ পাননি। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার হামিদুল আলম জনকণ্ঠকে জানান, ডিবির কয়েকজনকে বদলি করা হয়েছে। তবে এটি নিয়মমাফিক বদলি। গ্রামবাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষ কিংবা অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বদলি করা হয়নি। ওই ঘটনাটি তদন্ত করে পরবর্তীতে মামলা দায়েরসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×