ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তামণির ডান হাতে দুই দফা অস্ত্রোপচার,বায়োপসির জন্য টিস্যু সংগ্রহ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৬ আগস্ট ২০১৭

মুক্তামণির ডান হাতে দুই দফা অস্ত্রোপচার,বায়োপসির জন্য টিস্যু সংগ্রহ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিরল রোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার মুক্তামণি ভাল আছে। প্রথম দফা অস্ত্রোপচারে ক্ষতস্থানে প্রচুর রক্তক্ষরণের পর দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচারে তা বন্ধ হয়। শনিবার সকালে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী প্রথম অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়। রোগ শনাক্তে বায়োপসির জন্য তার ডান হাত থেকে টিস্যু সংগ্রহ করা হয়। পরে সংগৃহীত টিস্যু পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা পর বায়োপসির রিপোর্ট দেয়া হবে। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের তৃতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটারে তার অস্ত্রোপচার করেন ১১ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল। মুক্তার বাবা ইব্রাহিম হোসেন জানান, সকালে বায়োপসির পর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে মুক্তাকে কেবিনে দেয়া হয়েছিল। তবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে আবারও তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এখন তার চার ব্যাগের মতো রক্ত লাগবে। মুক্তার রক্তের গ্রুপ এ-পজেটিভ। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডাঃ সামন্তলাল সেন জনকণ্ঠকে জানান, রক্ত আপাতত বন্ধ হয়েছে। চার ব্যাগ রক্ত সংগ্রহে আছে। যখন লাগবে তখন তার শরীরে রক্ত দেয়া হবে। মুক্তা এখন ভাল আছে। তিনি জানান, সকালে অপারেশন শেষে আইসিইউতে নেয়ার পর থেকেই তার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। রক্তক্ষরণ বন্ধে তাকে দ্বিতীয়বার ওটিতে নেয়া হয়। ওই সময় মুক্তামণির রক্তের প্রয়োজন ছিল। দুপুরে বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডাঃ হোসেন ইমাম জানিয়েছিলেন, দ্বিতীয়বার অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পর তার রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়। তার আর রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা নেই। তিনি জানান, কেবিনে নিলে মানুষের ভিড় ঠেকাতে পারা যেত না। সে কারণেই আইসিইউতে রাখা হয়েছে। এছাড়া আইসিইউ সব সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর আগে সকালে মুক্তার বায়োপসির পর বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডাঃ সামন্তলাল সেন জানান, মুক্তা এখন ভাল আছে। তবে আমরা কোনভাবেই বলব না মুক্তামণি শঙ্কামুক্ত। সে একেবারেই ঝুঁকিমুক্ত নয়। তিনি জানান, সমস্ত ঝুঁকি, শারীরিক অবস্থা মাথায় রেখেই মুক্তামণির চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি আমরা। ডাঃ সামন্তলাল সেন জানান, তার ডান হাত থেকে টিস্যু বায়োপসির জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, অপারেশন শেষে মুক্তাকে বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা পর বায়োপসির রিপোর্ট দেয়া হবে। পরে তাকে কেবিনে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, বায়োপসির রিপোর্ট পাওয়ার পর আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে মুক্তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড। চিকিৎসকরা জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের তিনতলার অপারেশন থিয়েটারে অস্ত্রোপচার করা হয়। অপারেশনের পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডাঃ সামন্তলাল সেন, পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক সাজ্জাদ খন্দকার, অধ্যাপক ডাঃ রায়হানা আওয়াল, সহকারী অধ্যাপক তানভীর আহমেদ, সহকারী হেদায়েত আলী, কনসালটেন্ট ডাঃ আবু ফয়সাল, ডাঃ শারমিন সুমি, আবাসিক সার্জন হুসেন ইমাম, ডাঃ মাহবুবুর রহমান ও ডাঃ লতা। আর এ্যানেসেথেশিয়া বিভাগের প্রধান ডাঃ মোজাফফর আহমেদ, ডাঃ মৌমিতা তালুকদার ও ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির। অপারেশনের পর বার্ন ইউনিটের পরিচালক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের কোন সমস্যা বা জটিলতা হয়নি। সফলভাবে আমরা টিস্যু কালেক্ট করতে পেরেছি। সমস্যা যাতে না হয় এজন্য এ্যানেসথেশিয়া বিভাগের প্রধান ডাঃ মোজাফফর হোসেন আমাদের সঙ্গে ছিলেন। বায়োপসির রিপোর্ট আসার পর মুক্তামণির চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড আগামীকাল সোমবার আবার বসবে। এরপর পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এর আগে চিকিৎসকরা জানান, অপারেশনে ঝুঁকি আছে। উল্লেখ্য, গত ১২ জুলাই ঢামেক হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তির পর প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা চারটি রোগের কথা ধারণা করলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা গেছে, লিমফেটিক ম্যালফরমেশন রোগে ভুগছে মুক্তামণি। এটি একটি জন্মগত রোগ (কনজিনেটাল ডিজিস)। এর বিশেষত্ব হচ্ছে, জন্মের পরপরই কিছু ক্ষেত্রে এর প্রকাশ পায় কারও কারও ক্ষেত্রে, কারও কারও ক্ষেত্রে পায় না। তবে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, মুক্তামণি এতদিন অবহেলা আর অপচিকিৎসার শিকার হয়েছে। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তার যাবতীয় চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নেন। এরই মধ্যে মুক্তার চিকিৎসার জন্য একটি বোর্ড গঠনসহ সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ঢামেক কর্তৃপক্ষ।
×