ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে রেলের জায়গার হাল

অবৈধ দখলমুক্ত করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফের বেদখল

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২ আগস্ট ২০১৭

অবৈধ দখলমুক্ত করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফের বেদখল

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে রেলের জায়গা অবৈধ দখল মুক্ত করতে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার দফতর থেকে দফায় দফায় অভিযান পরিচালিত হলেও প্রকৌশল বিভাগের দায়িত্বহীনতার অভিযোগ উঠেছে। ফলে রেলের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি উচ্ছেদের পর আবারও অবৈধ দখলে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। সোমবার টাইগারপাসে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের ঢালে থাকা বস্তি বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট ইশরাত রেজার নেতৃত্বে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু সীমানা প্রাচীর না দেয়ায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আবারও রাতের আঁধারে বেদখল হচ্ছে। এদিকে, গত মার্চে পরিবেশ অধিদফতরের পার্শ্বে উচ্ছেদ করা দোকানঘর রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সিন্ডিকেট উচ্ছেদকৃত জায়গায় আবারও দোকানঘর নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে। বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার দুপুরে টাইগারপাস রেলের পাহাড়ের ঢালে ঝুঁকিতে বসবাসকারী বস্তির লোকজনকে সরিয়ে দিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট ইশরাত রেজা। এর আগে আমবাগান এলাকা থেকে টাইগারপাস মোড় পর্যন্ত শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এদিকে, গত ৮ এপ্রিল নগরীর ঝাউতলাস্থ ফ্লোরাপাস সড়ক সংলগ্ন বিশাল এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। কারণ দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, নাজিরহাট ও দোহাজারীমুখী রেললাইনের পাশেই প্রায় দেড় শতাধিক স্থাপনা অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল। নোটিস দেয়ার পরও অবৈধ দখলদাররা অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে না নেয়ায় ওই অভিযান পরিচালিত হয়। বুলডোজার দিয়ে এসব অবৈধ স্থাপনা ধূলিসাৎ করা হয়েছিল কিন্তু প্রকৌশল বিভাগের উদাসীনতায় আবারও বেদখল হয়েছে। উচ্ছেদকৃত জায়গা রেলের দখলে রাখতে সীমানা প্রাচীর দেয়া প্রসঙ্গে বিভাগীয় প্রকৌশলী (২) আতাউল হককে সময়ের পরিবর্তনে কয়েক দফায় মুঠোফোনে বিষয়টি জানার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। উচ্ছেদকৃত জায়গা সীমানা প্রচীর দিয়ে দখলে রাখার কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রসঙ্গে পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী জনকণ্ঠকে জানান, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। বিভাগীয় প্রকৌশলী (২) ভাল বলতে পারবেন। কিন্তু তিনি কল রিসিভ করছেন না বলা হলে তিনি বলেন, পরে জেনে দেখবেন। আরও অভিযোগ রয়েছে, গত ২২ মার্চ জাকির হোসেন রোডের পার্শ্বে পরিবেশ ভবন সংলগ্ন এলাকায় রেলের চীফ কন্ট্রোলার অব স্টোরস এর ডিসিওএস/জি এর অধীনে কর্মরত প্রিন্টিং বিভাগের কর্মচারী জুনিয়র মেশিন অপারেটর আতিকুর রহমান, লোকোমটিভ মাস্টার শফিকুল ইসলাম ও এসএসএই/ওয়ে/চট্টগ্রাম এর অধীনে সীতাকু- স্টেশনে কর্মরত ওয়েম্যান (গ্যাং-নং-চট্টঃ ০৬) নিজাম উদ্দিনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার অভিযান টিম। উচ্ছেদের পর পর রাতের আঁধারে আবারও দোকানঘর নির্মাণ করেছে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী। এদিকে, গত বছরের ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম স্টেশনে পেছনে থাকা আইসফ্যাক্টরি সড়কে রেলের ৫ একর জায়গা থেকে তিন শতাধিক অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করেন বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি অভিযান দল। অভিযান সময়ে অবৈধ দখলদাররা অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়ে উচ্ছেদ অভিযান ব্যাহত করার চেষ্টা করেছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের টিম এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া খাতুন ও রেলওয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ইশরাত রেজার নেতৃত্বে পরিচালিত এ টিম কয়েক শ’ কোটি টাকা রেল ভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করলেও প্রকৌশল বিভাগ দীর্ঘ প্রায় ৫ মাসেও সীমানা প্রাচীর তৈরির পদক্ষেপ নেয়নি। অপরদিকে, প্রকৌশল বিভাগের ছত্রছায়ায় ও সীমানা প্রাচীর না দেয়ায় দীর্ঘ এ সময়ে ভূমিদস্যুরা পুনরায় এ ভূমি আবারও অবৈধ দখলে নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছে।
×