ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনায় পাকিস্তানী গবেষক

আমাদের ইতিহাসে ১৯৭১ সাল বলে কিছু নেই

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২২ জুলাই ২০১৭

আমাদের ইতিহাসে ১৯৭১ সাল বলে কিছু নেই

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ ‘আমাদের ইতিহাসে ১৯৭১ সাল বলে কিছু নেই’- এ কথা জানালেন পাকিস্তানের নতুন প্রজন্মের গবেষক, লেখক বেগম আনাম জাকারিয়া। তিনি শুক্রবার বিকেলে খুলনায় ১৯৭১:গণহত্যা, নির্যাতন আকাইভ ও জাদুঘরের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘গণহত্যাÑনির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র আয়োজিত ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য প্রদানকালে এ মন্তব্য করেন। আনাম জাকারিয়া আরও বলেন, ১৯৪৭ সালকে বিচার করা হয় জয় হিসেবে, আর ১৯৭১ সাল ছিল ভারত ও হিন্দুদের ষড়যন্ত্র। নতুন প্রজন্ম যাতে সত্য ঘটনা জানতে না পারে সে জন্য যেকোন অভ্যুত্থান-পরাজয়কে বলা হয়েছে ভারতীয় হিন্দুদের ষড়যন্ত্র হিসেবে। শিক্ষাক্রমেই আদর্শ হিসেবেই এটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানের উচিত বাঙালীর কণ্ঠস্বর শোনা ও স্বীকৃতি দেয়া। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন পাকিস্তানের নতুন প্রজন্মের আর এক গবেষক হারুন খালিদ। সেমিনারে সূচনা বক্তব্য রাখবেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ও ১৯৭১:গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের ট্রাস্টি শাহরিয়ার কবির। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. মোঃ মাহবুবর রহমান এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ১৯৭১:গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের ট্রাস্টি সম্পাদক ডাঃ শেখ বাহারুল আলম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক শংকর কুমার মল্লিক। সেমিনারে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, এ বছর ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে আনাম জাকারিয়া পাকিস্তানের একমাত্র লেখক যিনি পত্রিকায় লিখে জানতে চান, বাংলাদেশে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন করেছে জাতীয়ভাবে। এখন পাকিস্তানীরা কি করবে? শাহরিয়ার কবির বলেন, পাকিস্তনীরা সব সময় এই ইতিহাস অস্বীকার করেছে। এখন নতুন প্রজন্ম কৌতূহলী হচ্ছে। তাদের জানা উচিত কেন আমরা চাই পাকিস্তান গণহত্যা স্বীকার করুক। যারা গণহত্যা করেছে, যেখানেই করুক তার শাস্তি হওয়া উচিত। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, পাকিস্তানীরা হিস্ট্রি কি জানে না। তারা ‘হিজস্টোরি’ বলে। পাকিস্তানে সামরিক আধিপত্য, সিভিল সমাজ চলন, জঙ্গী-মৌলবাদ সব কিছু আছে। ১৯৭১ তাদের ইতিহাসে নেই। আমরা চাই নতুন প্রজন্মের পাকিস্তনীরা জানুক তাদের পূর্বসূরিরা কি ছিল। তারা এর জন্য এখনও অনুতপ্ত তো নয়ই, বরং যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিরোধিতা করছে। আমরা চাই নতুন প্রজন্ম পাকিস্তানের এই ধারণা বদলাক। নয়ত বিশ্ব পরিবারে তারা অপাঙক্তেয় হয়ে পড়বে। ড. মামুন আরও বলেন, আমরা চাই গণহত্যার সঙ্গে যারা জড়িত এবং পাকিস্তানে বসবাস করছেন তাদের বিচারের দাবিও উত্থাপিত হোক। পাকিস্তানের গবেষক হারুন খালিদ বলেন, ১৯৭১ সালের ভূমিকা নিয়ে পাকিস্তান সরকার ও পাকিস্তানের এলিট গোষ্ঠীর মনোভাবের সঙ্গে অনেকে ভিন্নমত পোষণ করেন। আমাদের মতো নতুন প্রজন্মের মানুষর এ বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান ও প্রকৃত বিষয় জানার চেষ্টা করছে। গবেষণা ও লেখালেখি করছে। এর অংশ হিসেবে এই অনুষ্ঠানে আসা। এর আগে পাকিস্তানী গবেষকরা খুলনায় গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর দেখে বাক রহিত হয়ে পড়েন। আপ্লুত হয়ে বারবার তারা বলেন- কিভাবে এসব ঘটল?
×