ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধির গেজেট প্রকাশে ফের দুই সপ্তাহের সময় পেল সরকার

এটাই লাস্ট চান্স- এ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রধান বিচারপতি

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৩ জুলাই ২০১৭

এটাই লাস্ট চান্স- এ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রধান বিচারপতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশে সরকারকে আবারও দুই সপ্তাহের সময় দিয়েছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। আদালত সময় মঞ্জুরের আদেশ দিয়ে বলেছেন, এটাই লাস্ট চান্স। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপীল বিভাগের সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ সময় মঞ্জুর করেন। আপীল বিভাগের আদেশের পর আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণসংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। বিচারকদের শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা বিচার বিভাগের শৃঙ্খলার ওপর যথেষ্ট প্রভাব রাখবে। তিনি বলেন, এখন এটার খুঁটিনাটি বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে, যাতে এটা নিয়ে কোন প্রশ্ন না ওঠে। তিনি রবিবার দুপুরে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী জজদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এদিকে রবিবার সকালে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণসংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশে আরও দুই সপ্তাহ সময়ের আবেদন জানান। জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এটি কী? কত দিন চাচ্ছেন?’ এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘দুই সপ্তাহ।’ তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এটি লাস্ট চান্স।’ এরপর আদালত দুই সপ্তাহের জন্য বিষয়টি মুলতবি করেন। এর আগে গত ২৯ মে আপীল বিভাগ গেজেট প্রকাশের জন্য দুই সপ্তাহ সময় মঞ্জুর করেছিলেন। তবে সেই সময় অতিবাহিত হলেও গেজেট জারি না করে আবারও সময় আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। গেজেট ১৫ তারিখের মধ্যেই প্রকাশ করা হবে ॥ আনিসুল হক আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণসংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। রবিবার দুপুরে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী জজদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। প্রসঙ্গত, রবিবার আপীল বিভাগ নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশে শেষবারের মতো সময় দিয়েছেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিচারকদের শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা বিচার বিভাগের শৃঙ্খলার ওপর যথেষ্ট প্রভাব রাখবে। তিনি বলেন, এখন এটার খুঁটিনাটি বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে, যাতে এটা নিয়ে কোন প্রশ্ন না ওঠে। আশা করি, চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে গেজেট প্রকাশ হবে। এর আগে আইনমন্ত্রী প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কোয়ালিটি জুডিসিয়ারির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সরকারও জনগণকে কোয়ালিটি জুডিসিয়ারি উপহার দিতে বদ্ধপরিকর। আর এ কোয়ালিটি জুডিসিয়ারি প্রতিষ্ঠায় নবীন বিচারকরা হলেনÑ প্রথম সারির সহযোদ্ধা। তবে কোয়ালিটি জুডিসিয়ারির জন্য আমাদের চ্যালেঞ্জসমূহও কম নয়। দেশের আদালতসমূহের মামলাজট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে। এ সময় আধুনিক তথা ডিজিটাল যুগের বিচারক হিসেবে দেশের সার্বিক বিচার ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে নবীন বিচারকদের বিজ্ঞান-মনস্ক ও ইনোভেটিভ আইডিয়া সমৃদ্ধ প্রো-এ্যাকটিভ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। বিচারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের বিচারক হয়ে ওঠার পেছনে এ দেশের গরিব-দুঃখী-মেহনতি মানুষের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ অবদান রয়েছে। আর আপনাদের কর্মক্ষেত্রই হলো বিচারপ্রার্থী এসব মানুষের শেষ ভরসাস্থল। তাই বিচারিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এসব সাধারণ জনগণ বিচার বিভাগকে কোন দৃষ্টিতে দেখছেন কিংবা তাদের চোখে ন্যায়বিচারের ধারণাই বা কেমন সেটিকে বিবেচনায় নিয়ে আপনাদের কাজ করতে হবে। মোটকথা বিচারপ্রার্থী জনগণের অল্প সময়ে, অল্প ব্যয়ে ও সহজে ন্যায়বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে আপনাদের আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। নিছক গতানুগতিক বা দায়সারা ভাব পরিহার করে কর্মক্ষেত্রে আপনাদের সৃষ্টিশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সমাজে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আপনারা পেশাগত জীবনে অন্যের অনুসরণীয় হবেনÑ এমন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আপনাদের এগিয়ে যেতে হবে। আপনাদের বিন্দুমাত্র লোভ কিংবা অসততার কারণে বিচার বিভাগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মাঝে যাতে কোন হতাশা বা বিরূপ ধারণার সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, আপনাদের পেশার গুরুত্ব যথাযথভাবে অনুধাবন করে বর্তমান সরকার আপনাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি করেছে। দেশ মাতৃকা ও সাধারণ মানুষের প্রতি নবীন বিচারকদের দায়বদ্ধতার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এ কথা অনস্বীকার্য যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে ’৭১ এ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে এ দেশটির জš§ হয়েছিল বলেই আমরা একেকজন আজ বিভিন্ন উচ্চতর পদে আসীন হতে পেরেছি। বিচারক হিসেবে আপনারাও এর ব্যতিক্রম নন। তাই আপনাদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশের উন্নয়ন পরিপন্থী কর্মকা-ের সমর্থন তো দূরের কথা, এরূপ চিন্তারও যাতে উদ্রেক না হয় আপনাদের কাছে এ প্রত্যাশা রাখছি। বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ) ড. শেখ গোলাম মাহবুব স্বাগত বক্তৃতা করেন।
×