ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঢামেক মর্গে লাশের স্তূপ, হিমঘরের তিন ফ্রিজের দু’টিই অচল

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২৪ জুন ২০১৭

ঢামেক মর্গে লাশের স্তূপ, হিমঘরের তিন ফ্রিজের দু’টিই অচল

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ মর্গে লাশের স্তূপ। হিমঘরের ৩টি ফ্রিজের মধ্যে ২টি ফ্রিজই দুই মাস ধরে নষ্ট। এর ওপর গত ৮ দিনেও দেশের অন্যতম সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান আঞ্জুমান মুফিদুলও মর্গ থেকে বেওয়ারিশ লাশ নেয়ার খবর নেই। লাশ ফুলে যাওয়ায় আলামত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। লাশের দুর্গন্ধে মর্গ এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। এই হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গের চিত্র। এমন চিত্র হাসপাতালের আশপাশে সবাই জানলেও কর্তৃপক্ষের কোন নজর নেই। মঙ্গলবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে ঘুরে দেখা গেছে, দুটি ফ্রিজ নষ্ট থাকায় বারান্দায় লাশের স্তূপ। সারিবদ্ধ অবস্থায় তা পড়ে আছে। লাশ পচে গলে দুর্গন্ধে ছড়িয়ে পড়ছে। মর্গ সূত্র জানায়, রাজধানীসহ সারাদেশ থেকে প্রতিদিন গড়ে ৯টি লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে আনা হয়। এদের মধ্যে বেওয়ারিশ লাশ ২টি। প্রতিদিনই সব লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আরও বেওয়ারিশ লাশগুলো কোন স্বজন না থাকায় মর্গের হিমাগারে রাখা হয়। ২ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত এসব লাশের পরিচয় না পেলে তা বেওয়ারিশ লাশগুলো আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গ সহকারী মোঃ সেকান্দার জনকণ্ঠকে জানান, ছয় মাসে (মঙ্গলবার পর্যন্ত) মর্গে ১ হাজার ১৯৪টি লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ লাশই অজ্ঞাত। অজ্ঞাত লাশ বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনায় ও খুনের শিকার। আর এসব লাশের পরিচয় পাওয়া যায় না। বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে মর্গে লাশ রাখার ফ্রিজে রাখা হয়। এদের পরিচয় উদ্ধারের জন্য সেখানে ৩-৪ দিন রাখা হয়। তাদের খোঁজে কেউ না এলে বেওয়ারিশ হিসেবে লাশগুলো দেশের বৃহৎ সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তিনি জানান, ৮ দিন ধরে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম বেওয়ারিশ লাশ না নেয়ায় ১৪টি অজ্ঞাত লাশ জমে আছে। তার ওপর লাশগুলো পচে গলে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দুই মাস ধরে মর্গে লাশ রাখার তিনটি ফ্রিজের মধ্যে দুটি নষ্ট হয়ে গেছে। যেই ফ্রিজটি ভাল। সেখানে ৯টি লাশ দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। এগুলো চার জঙ্গী লাশ দীর্ঘদিন ধরে মর্গে হিমাগারের পড়ে আছে। আইনী জটিতলায় ৫ বিদেশী নাগরিকের লাশ বছরের পর বছর মর্গে হিমাগারে পড়ে আছে। এর মধ্যে মুসলিম না হিন্দু টানাহেঁচড়ায় আদালতের নির্দেশের তিন বছর ধরে পড়ে এক ব্যক্তির লাশ। সাউথ আফ্রিকা থেকে এক নারী লাশ দেড় বছর ধরে পড়ে আছে। ওই নারী প্রেমের টানে কুমিল্লা এসেছিলেন প্রেমিকের ঘর করার জন্য। কিছুদিন সংসার করার পর সেখানেও তার ঠাঁই হয়নি। এতে সে আত্মহত্যা করেছে। কারাবন্দী দুই ভারতীয় নাগরিকের লাশ কয়েক মাস ধরে পড়ে আছে। আরেক নাইজিরিয়ান নাগরিকের লাশ। এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয়প্রধান ডাঃ সোহেল মাহমুদ জনকণ্ঠকে জানান, আইনী জটিলতায় ৫ বিদেশী নাগরিকের লাশ ও চার জঙ্গী লাশ দীর্ঘদিন ধরে মর্গে হিমাগারের পড়ে আছে। তিনি জানান, লাশ রাখার তিনটি ফ্রিজের মধ্যে দুটি ফ্রিজ নষ্ট। একটিও যা ভাল আছে। তাও আবার এই ৯টি লাশ দীর্ঘদিন ধরে দখল করে আছে। তিনি আরও জানান, প্রতিদিন বেওয়ারিশ লাশ ১ থেকে ২টি আসছে। তার রাখার জায়গা নেই। এখনও আবার নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম নিচ্ছে না। তারা ৮ দিন ধরে লাশ না নেয়ায় লাশের স্তূপ জমে আছে। আঞ্জুমানকে জানার পরও আসছে না। তার বলছে তাদের লাশগুলো জুরাইন কবরস্থানে দাফন করতে দিচ্ছে না। বিকেল ৪টার দিকে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের যোগাযোগ করা হলে ডিউটি অফিসার রুহুল আমিন জনকণ্ঠকে জানান, জুরাইন কবরস্থানে তত্ত্বাবধায়ক সোয়েব সাহেব বেওয়ারিশ লাশগুলো দাফন করতে সমস্যার সৃষ্টি করছে।
×