ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে বাজেট আলোচনা

জাপার দুই এমপি ও মন্ত্রীদের তুলাধোনা করলেন তোফায়েল

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২২ জুন ২০১৭

জাপার দুই এমপি ও মন্ত্রীদের তুলাধোনা করলেন তোফায়েল

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পদত্যাগ দাবি করায় জাতীয় পার্টির (জাপা) দুই সদস্য সদস্যকে তুলাধোনা করেছেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। একই সঙ্গে কেবিনেটে অনুমোদনের সময় কোন কথা না বলে সংসদে বাজেটের সমালোচনা করা মন্ত্রীদের ব্যাপারেও প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, সব মন্ত্রীরা তো এই বাজেটের অংশ। তবে কি এই বাজেট শুধুই নেগেটিভ, পজেটিভ (ভাল) কিছু নেই? আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের পর সংসদে যে বাজেটটি পাস হবে সেটি হবে এ দেশের শ্রেষ্ঠ বাজেট। আর সহায়ক সরকার নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনে বিএনপি না এলে অনেকেই বলছেন তাদের অবস্থা হবে খুবই খারাপ। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তোফায়েল আহমেদ ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন সরকারী দলের সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, বজলুল হক হারুন, একাব্বর হোসেন, ওয়াশিকা আয়শা খান, মমতাজ বেগম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী, ঊষাতন তালুকদার এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম। জাতীয় পার্টির দুই এমপির সমালোচনা করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, কাজী ফিরোজ রশিদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু যেভাবে অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এটা তাদের কাছে কাম্য নয়। তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা অর্থমন্ত্রীর বয়স নিয়ে কথা বলেছেন। আপনার দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তো অর্থমন্ত্রীর চাইতে ৫ বছরের বড়। তিনি (বাবলু) যদি বলতেন আপনি (এরশাদ) পদত্যাগ করেন তাহলে ভাল শোনা যেত। তবে কি এই বাজেট শুধুই নেগেটিভ, পজেটিভ (ভাল) কিছু নেই? সমালোচনা করুন, কিন্তু অবশ্যই গঠনমূলক হতে হবে। জাপা দুই এমপির উদ্দেশে তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, আপনাদের কেউ কেউ অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। কিন্তু কেন? কেবিনেটের অংশ হিসেবে আমারও পদত্যাগ দাবি করতে পারেন। কারণ আমিও এই বাজেটের অংশ। বাজেট সংসদে উপস্থাপনের পর আলোচনা হয়। বাজেটের শুধু সমালোচনা করা হচ্ছে। তবে কি এই বাজেট শুধুই নেগেটিভ, পজেটিভ (ভাল) কিছু নেই? আমাদের অর্থমন্ত্রী ১২টি বাজেট দিয়েছেন। উনি বেঁচে থাকলে আরও দেবেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তিনি আরও বাজেট দেবেন। কারণ অর্থমন্ত্রীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আস্থা আছে। বাজেট নিয়ে সংসদে যেসব মন্ত্রী অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন তাদের উদ্দেশ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেট দিয়েছেন। মন্ত্রীদের অনেকে এই বাজেটের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু এই বাজেট কেবিনেটে অনুমোদিত। বাজেট পেশের আগে আমরা কেবিনেট মিটিং করি, সেখানে বাজেট অনুমোদিত হয়। বাজেট অনুমোদনের সময় মন্ত্রী হিসেবে আমিও উপস্থিত থাকি। আমার যদি কোন কথা থাকে তবে কেন আমরা ওই সময় কথা বলিনি? অনুমোদন হয়ে যাওয়ার পরে যারা সংসদ সদস্য তারা বলতে পারেন। কিন্তু আমরা তো (মন্ত্রী) এই বাজেটের অংশ। তিনি বলেন, এটা প্রস্তাবিত বাজেট, চূড়ান্ত নয়। বাজেটের কিছু অংশের সমালোচনা থাকতে পারে। যেমন আবগারি শুল্ক ও ভ্যাট। এটি নিয়ে আমাদের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী সমাপনী বক্তব্য রাখবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাজেটে যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে আমরা দেখবো। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের পর যে বাজেট পাস হবে সেটি হবে দেশের শ্রেষ্ঠ বাজেট। তিনি বলেন, জিয়াউদ্দিন বাবলুরা বিদ্যুত সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, তাদের আমলে নাকি লোডশেডিং ছিল না। বাস্তব কথা হলো, তাদের (জাতীয় পার্টি) আমলে তো বিদ্যুতই ছিল না, লোডশেডিং হবে কীভাবে। ইফতার পার্টিতে প্রতিদিন বিএনপি চেয়ারপারর্সন খালেদা জিয়ার নানা মন্তব্যের সমালোচনা করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়া ইফতার পার্টিতে আমাদের বলেছেন জালেম সরকার। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ইফতার করেন, কিন্তু কোন বক্তব্য দেন না। খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন হবে না। প্রধানমন্ত্রীর নামটা যখন বলেন তখন নামের আগে কোন বিশেষণ ব্যবহার করেন না। এর মানে হলো তার (খালেদা জিয়া) মনের মধ্যে ক্রোধ, হিংসা এবং প্রতিহিংসা। এসব শুনতেও খারাপ লাগে। আমরাও তো ইচ্ছে করলে তাকে সেভাবে বলতে পারতাম। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে যদি না আসেন তাহলে অনেকেই বলেছেন তার (খালেদা জিয়া) দলের অবস্থা খুবই খারাপ হবে। সেটা আমি বলতে চাই না। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বিএনপির ‘সহায়ক’ সরকারের দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেন, নির্বাচন কমিশন রোডম্যাপ ঘোষণা দেয়ার পর দেশে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর তখনই বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন নিয়ে তাদের পুরনো খেলায় মেতে উঠেছে। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বদলে এখন সহায়ক সরকারের কথা বলছেন, যার কোন ধরনের সাংবিধানিক বৈধতা নেই। তাই নির্বাচন হবে এবং সাংবিধানিকভাবেই শেখ হাসিনার অধীনেই হবে। এবার যদি বিএনপি নির্বাচনে না করে তবে তরা তাদের জীবনের সর্বশেষ ভুলটি করবেন। আর নির্বাচন প্রতিরোধ বেগম জিয়ার অবরোধের মতো কথার ফানুসই থেকে যাবে। তিনি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে খোদ সরকারী দলের মন্ত্রী-এমপিদের সমালোচনা প্রসঙ্গে বলেন, দেখা যাচ্ছে সরকারী দলের নেতারাই বাজেটের সমালোচনা করছেন। এ নিয়ে আমি একটু দ্বিধাগ্রস্ত। সরকারী দল কী বিরোধী দলের ভূমিকায় নামতে চাইছেন কি না। সামনে আবার নির্বাচন আছে। বঙ্গোপসাগরের মাঝখান দিয়ে নৌকা চলছে। নৌকা ভেসে চলছে, তাতে আপনারা সবাই আছেন। আমার মনে হয়, যারা নৌকায় ছিলেন তারা আর সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বেড়াজালে আটকে থাকতে চাচ্ছেন না। এটাকে স্বাগত জানাই। অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনার সহকর্মীরা হয়তো আপনাকে পরিত্যাগ করেছেন। কেবিনেটে অনুমোদনের পর সংসদে যেসব বক্তৃতা হচ্ছে শুনতে ভাল লাগে। এ পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক এমপি বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের বক্তব্যের ধারা দেখলে মনে হয়, তাদের প্রস্তাবগুলো এড়িয়ে যেতে পারবেন না অর্থমন্ত্রী। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর দিয়ে বলেন, দেশের বর্তমান উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। অথচ আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। আমাদের এক কাপড়ে বের করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। কানাডার ফেডারেল কোর্ট রায় দিয়েছে, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল ছিল, আছে ও থাকবে। বিএনপি-জামায়াত অতীতে নির্বাচন বানচাল করার অনেক চেষ্টা করেছে। আমার ভয় হয়, তাদের যদি মোকাবেলা করতে না পারি, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারি তাহলে হয়তো আমাদের আরও মূল্য দিতে হতে পারে। সরকারী দলের ড. হাছান মাহমুদ পাহাড় ধস এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার পথে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলার ঘটনাকে ‘অনভিপ্রেত, অপ্রীতিকর’ উল্লেখ করে বলেন, দেশ যখন অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে তখন বিএনপি দেশকে পিছিয়ে দিতে অপরাজনীতি আর মিথ্যাচারের রাজনীতি করা শুরু করেছে। সেদিন তাদের গাড়ির ধাক্কায় দুইজন পথচারী আহত হয়। এ নিয়ে বাগ্বিত-ার একপর্যায়ে তারা উত্তেজিত জনতার ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিতে চায়। যে কারণে এই অপ্রীতিকর ঘটনাটি ঘটে। অথচ এই ঘটনা আওয়ামী লীগের ওপর চাপানোর চেষ্টা করে। তিনি বলেন, আমরা সন্ত্রাসী রাজনীতি করি না। সন্ত্রাসী রাজনীতি করে বিএনপি। এই অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে রাজনীতি না করার জন্য তিনি বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান।
×