ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

’১৬ সালে এসেছে ২৩৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার

প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৯ জুন ২০১৭

প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী (এফডিআই) বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বলছে-এটাই এই মুহূর্তের জন্য সুসংবাদ। তবে এফডিআই আকর্ষণে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, আঞ্চলিক কানেকটিভিটিসহ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে পিছিয়ে পড়লে ভিয়েতনাম, ইথিওপিয়া এবং ফিলিপিন্সের মতো রাষ্ট্রগুলো বড় প্রতিযোগী হয়ে উঠতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ হচ্ছে সবচেয়ে বড় সম্ভাবনাময় দেশ। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে ভারত, চীন, জাপান, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং আমেরিকার মতো রাষ্ট্রের বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সবচেয়ে বেশি জরুরী হয়ে পড়ছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি স্থানীয় হোটেলে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ন্যাশনাল কনফারেন্স অন ট্রেড এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আঙ্কটাড) বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিডা। এতে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া নারী উদ্যোক্তা সেলিমা আহমেদ এবং বিডার এক্সিকিউটিভ মেম্বার অজিত কুমার পাল অনুষ্ঠান অংশগ্রহণ করেন। এদিকে প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্ব বিনিয়োগ পরিস্থিতির স্থবিরতার মধ্যেও বাংলাদেশে এফডিআই বেড়েছে। আগের বছরের চেয়ে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ২০১৬ সালে এফডিআই এসেছে ২৩৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। স্বাধীনতার পর দেশে এটিই সর্বোচ্চ পরিমাণ। এফডিআই কিছুটা বাড়লেও গত বছরের চেয়ে অনেক কম হারে বেড়েছে। ২০১৫ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪৬ শতাংশের বেশি। এসেছিল ২২৩ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। প্রতিবেদনে অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৪৮ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মধ্যে বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। এসব দেশের মধ্যে বৃহৎ আকারের ১০ নতুন বিনিয়োগ প্রস্তাবের ৩টিই এসেছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে বড় আকারের বিদ্যুত প্রকল্প রয়েছে। এছাড়া ২০১৭ সালে বাংলাদেশের এফডিআই পরিস্থিতি আরও ভালো হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আঙ্কটাড। বিশেষত প্রতিবেশী ভারত এবং চীন থেকে বাংলাদেশে এফডিআই বাড়তে পারে। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, ২০১৬ সাল বিশ্ববিনিয়োগের মন্দার বছর গেছে। সে তুলনায় বাংলাদেশের এফডিআই খুব কম বলা যাবে না। তবে জিডিপি অনুপাতে এ হার আরও বাড়ানো উচিত। তিনি বলেন, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে ব্যাপক হারে কাজ করছেন তারা। উদ্যোক্তাদের প্রয়োজন সহজেই মেটানোর পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। ফলে আগামীতে এফডিআই অনেক বেশি পরিমাণে বাড়বে। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে দেশে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে। এর চেয়ে বড় সুসংবাদ কি হতে পারে? চীন বিনিয়োগের সোর্স দেশ হিসেবে কাজ করছে। এখন চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে চীনের বিনিয়োগ বাংলাদেশে বাড়বে। আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে এফডিআই আকর্ষণে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলের (এসইজেড) কথা উল্লেখ করা হয়। এসইজেডে বিনিয়োগে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আরোপ নেই। এছাড়া বিনিয়োগে সরাসরি উন্নয়ন এবং নির্মাণে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আমদানিকে শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া হয়েছে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট এফডিআইর স্থিতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩৩৩ কোটি ডলার। বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে বাড়লেও ২০১৬ সালে বৈশ্বিক এফডিআই ২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে উন্নয়শীল বিশ্বে কমেছে ১৪ শতাংশেরও বেশি। এলডিসিতে কমেছে ১৩ শতাংশ।
×