ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২ জুন ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ শহর ঢাকার অনেক কিছুই বদলে গেছে। সকাল বিকেল রাত কোনটাই আগের মতো নেই। খাওয়া ঘুম জেগে ওঠাÑ সব হচ্ছে নতুন নিয়মে। রোজনামচায় ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিয়েছে রমজান মাস। আরবী এই মাসের প্রথম দিন থেকে শুরু হয়েছে রোজা। আজ শুক্রবার ষষ্ঠ দিন। প্রতিটি দিনই সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে পার করার চেষ্টা করছেন মুমিন মুসলমানরা। চোখের সামনে সব ধরনের খাবার। তবুও পানাহার থেকে বিরত থাকছেন। উদ্দেশ্য- আত্মসংযম। আত্মশুদ্ধি। যেসব হতদরিদ্র মানুষ খেতে পায় না, অর্ধাহার অনাহার যাদের নিত্যসঙ্গী, তাদের কষ্টটুকু উপলব্ধির চেষ্টা করছেন রোজাদাররা। রমজানের এই শিক্ষা তারা সারা বছর কাজে লাগাবেন। যদি লাগান তবেই স্বার্থক হবে সারা দিনের না খেয়ে থাকা। রমজান উপলক্ষে বদলে গেছে সরকারী অফিস আদালতের সময়সূচী। এখন সরকারী আধা-সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস আগের মতো সকাল ৯টায় শুরু হলেও, চলছে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। ৫টার পরিবর্তে সাড়ে ৩টা। দেড় ঘণ্টা সময় কমিয়ে আনা হয়েছে রমজান উপলক্ষে। সুপ্রীমকোর্ট, ব্যাংক, ইনস্যুরেন্স, বাংলাদেশ রেলওয়ে, পোস্ট অফিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেদের সুবিধামতো সময়সূচী নির্ধারণ করে নিয়েছে। কর্মঘণ্টা কমে আসায় সর্বত্রই একটা তড়িঘড়ি অবস্থা। অল্প সময়ের মধ্যে নির্ধারিত কাজ শেষ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে। ঢাকার রাস্তায়ও এক ধরনের বিশৃঙ্খলা দৃশ্যমান। এরই মাঝে যানজট বেড়ে কয়েকগুণ হয়ে গেছে। বিশেষ করে দুপুরের পর থেকে গাড়ির চাকা যেন আর ঘুরে না। ছবির মতো স্থির হয়ে থাকে। এ অবস্থার প্রভাব পড়েছে ফুটপাথেও। বহু মানুষ পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এখানেও বিপত্তির শেষ নেই। উৎপাত বেড়েছে মোটরসাইকেলের। ‘লাট সাহেব’ চালকেরা পায়ে হাঁটার পথ দখলে নিয়েছেন। যেমন খুশি চালাচ্ছেন। গত শনিবার দেখা একটি ঘটনা তো এখনও চোখে লেগে আছে। হতবাক হয়ে যেতে হয় এক মোটরসাইকেল চালককের আচরণ দেখে। সকাল বেলা। ফার্মগেট পুলিশ বক্সের ঠিক পাশের ফুটপাথটি ধরে হেঁটে যাচ্ছে স্কুলের মেয়েরা। হঠাৎই একটি মোটরসাইকেল মূল রাস্তা থেকে ফুটপাথে উঠে অসে। শিক্ষার্থীদের একজনের গায়ে ধাক্কা দেয়। অন্য মেয়েগুলো ভয়ে এদিক-ওদিক দৌড়াতে শুরু করে। এ অবস্থায় ক্ষুব্ধ পথচারীরা বাইকটিকে থামায়। চালকের কাছে জানতে চান, পথচারীদের হাঁটার জন্য যে ফুটপাথ সেখানে মোটরসাইকেল কেন উঠালেন তিনি? ধরেই নেয়া হয়েছিল, চ্যালেঞ্জ করার পর ওই চালক ক্ষমা চাইবেন। বাইক নিয়ে নিচে নেমে যাবেন। কিন্তু ঘটে উল্টোটি। ওই চালক মাস্তানির চূড়ান্তটা দেখান। ফুটপাথে মোটরসাইকেল (ঢাকা মেট্রো-ল ২৬-৪৯১৪) থামিয়ে তার ওপর লাট সাহেবের মতো বসেন। বলেন, দেখি আপনারা কী করতে পারেন? ফুটপাথে চালাব নাকি আকাশ দিয়ে চালাবো, সেটা আমার বিষয়। যারা পথে হাঁটে তাদের চোখ কোথায় থাকে? তার এমন নির্লজ্জ কথা ও আচরণে পথচারীরা হতবাক হয়ে যান। ক্ষুব্ধ পথচারীদের একজন বলেন, দাঁড়ান। পাশেই পুলিশ বক্স। ডেকে আনছি পুলিশ। তাতেও কাজ হয় না। চালক এবার মোটরসাইকেল থেকে নেমে তেড়ে আসেন ওই পথচারীর দিকে। বলেন, আনেন পুলিশ। পুুলিশ পকেটে নিয়ে ঘুরি আমি। অন্যায় করার পর এভাবে এত মানুষের সামনে হুঙ্কার দেয়ার ঘটনাটি সত্যি দেখার মতো ছিল! পথচারীরা এরপর পুলিশের কাছে যান। অভিযোগ করেন। সেখানে দায়িত্বে ছিলেন রফিকুল নামের এক পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি সেদিন আশ্বাস দিয়ে বলেন, বাইক চালকের ছবি ও নম্বর রেখে দিলাম। দেখেন কী করি। আর তারপর বৃহস্পতিবার একই রাস্তা ধরে আসার সময় দেখা হয়ে যায় পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে। কৌতূহলী হয়েই জানতে চাই, ওই মোটরসাইকেলের চালককে কি ধরতে পেরেছিলেন? পাঁচদিন পর তিনি জবাব দেন, দেখেন না কী করি! বাইক চালকেরা কেন বেপরোয়া এরপর আর বোঝার বাকি থাকে না। এবার বাজেটের আলোচনা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেশ কয়েকটি পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, আরোপ ও বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন। একই সঙ্গে কয়েকটি সেবা খাত এবং পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। ফলে ওইসব পণ্য ও সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ভোক্তাকে আগের চেয়ে বেশি দাম দিতে হতে পারে। আবার অনেক পণ্য থেকে শুল্ক কমানো বা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব পণ্যের দাম কমতে পারে। প্রথম দিন সাধারণ মানুষ পণ্যের দাম নিয়েই বেশি কথা বলছেন। ধারণা করা হচ্ছে, দাম বাড়বে গুঁড়া দুধ, মাখন, শুকনা আঙ্গুর, যে কোন ধরনের তাজা ফল, গোল মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, জিরা, চকলেট, শিশু খাদ্য, পটেটো চিপস, সস, আইসক্রিম, লবণ, জ্বালানি তেলের। একইভাবে সৌন্দর্য অথবা প্রসাধনী সামগ্রী, শেইভিং কিটস, শরীরের দুর্গন্ধ দূরীকরণে ব্যবহৃত সামগ্রী, টয়লেট সামগ্রী, রুম সুগন্ধি, সাবান, ডিটারজেন্ট, মশার কয়েল, এ্যারোসল ও মশা মারার সামগ্রীর দাম বাড়বে। দাম কমতে পারে চাল, ডাল, ডিম, ফল, মাছ, মাংস, মধু, তরল দুধ, লবণ ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, মরিচ, মাংস, মুড়ি, চিড়া, চিনির। এছাড়া কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব ও ফোনের দাম কমবে। ৯৩ ধরনের জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম কমবে।
×