প্রতারক হালিমই বনানীর ধর্ষক নাঈম আশরাফ

স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ ॥ রাজধানীর বনানীর হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত নাঈম আশরাফের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের গান্ধাইলে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। তবে তাকে পাওয়া যায়নি। প্রায় দুই বছর তাদের গ্রামের বাড়ি তালাবদ্ধ। গ্রামের মানুষ জানে না তার বাবা-মা কোথায় থাকেন। পরিচয় গোপন রেখে এক মেয়ের সঙ্গে প্রতারণার দায়ে গণপিটুনির শিকার হাসান মোঃ হালিমই ঢাকায় নাম বদলে হয়েছে নাঈম আশরাফ। এলাকায় তার নাম হালিম। বাবার নাম এবং নিজের পরিচয় বদলে এ পর্যন্ত বিয়ে করেছে তিনটি। এর মধ্যে পরপর দুই স্ত্রী তার প্রকৃত পরিচয় জেনে চলে গেলেও তৃতীয় স্ত্রীকে নিয়ে এখন ঢাকায় বসবাস করছে। হালিমের বাবা আমজাদ হোসেন সিরাজগঞ্জের গান্ধাইল গ্রামের একজন ফেরিওয়ালা। ২০০৪ সালে এসএসসি পাস করে হালিম বগুড়া পলিটেকনিকে ভর্তি হয়। সেখানেও নিজের বাবার নামসহ পুরো পরিচয় গোপন করে প্রতারণা করে এক মেয়ের সঙ্গে। বিষয়টি জানাজানি হলে সেখানে গণপিটুনির শিকার হয় সে। এরপর ঢাকায় চলে যায়। সেখানে গিয়ে চাকরি নেয় একটি মিডিয়া হাউসে। এরপর থেকেই দীর্ঘদিন এলাকায় আনাগোনা ছিল না তার। কিছুদিন হলো হঠাৎই নিজেকে কাজিপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পরিচয় দিয়ে এলাকায় ব্যানার-ফেস্টুনে তার ছবি দেখা যায়। তাতেই নজরে আসে সেই হাসান মোঃ হালিম নাম বদলে হয়ে উঠেছে নাঈম আশরাফ। তবে তার কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই বলে জানান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর নির্যাতনের ঘটনা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাটি জানাজানি হয় সিরাজগঞ্জেও। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিব্রত ও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পুলিশকে নির্দেশ দেন হালিমের গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতারের জন্য। রাতেই পুলিশ অভিযান চালায়। কিন্তু কাউকে পাওয়া যায়নি। তার গ্রামের বাড়ি তালাবদ্ধ। টেলিভিশনে ধর্ষক নাঈম আশরাফের ছবি দেখে গ্রামের মানুষ এবং তার আত্মিয়স্বজন সন্দেহ প্রকাশ করলেও পুলিশী অভিযানের পর তারা নিশ্চিত হয়েছে হালিমই প্রকৃত ধর্ষক ও নাম বদলে নাঈম আশরাফ সেজেছে। তার চাচা-চাচি জানান, পত্রিকায় ছবি দেখে নিশ্চিত হয়েছি এটাই সেই হালিম। গান্ধাইল ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম জানান, ইতোপূর্বেও বগুড়া-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিজের নাম বদলেছে সে। পূর্বেও অনেক কুকীর্তির প্রমাণ রয়েছে হালিমের। বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত সিরাজগঞ্জের হাসান মোহাম্মদ হালিম ওরফে নাঈম আশরাফ কাজিপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পদ নিয়েও প্রতারণা করেছে। আওয়ামী লীগ নেতার নাম ব্যবহার ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতির পদ ব্যবহার করেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে প্রতারক হাসান মোহাম্মদ হালিম। এমন তথ্যই জানালেন কাজিপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সেলিম রেজা। সিরাজগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জিহাদ আল ইসলাম বলেন, এইচএম হালিম ওরফে নাঈম আশরাফ নামে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কোন নেতা নেই। হালিম মূলত তার অপকর্ম ও প্রতারণার কাজটি সহজ করতেই স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদ ব্যবহার করেছে।