ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জনজীবন বিপর্যস্ত

প্রবল বর্ষণে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরীর নিচু এলাকা

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২২ এপ্রিল ২০১৭

প্রবল বর্ষণে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরীর নিচু এলাকা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ প্রবল বর্ষণ এবং সামুদ্রিক জোয়ার, দুয়ে মিলে হাঁটু থেকে বুক পানিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরীর নিচু এলাকা। শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া মুষলধারে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে বেলা ১১টা পর্যন্ত। এরপরও দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অল্প সময়ের মধ্যে অতিবর্ষণ সৃষ্টি করে জলজট। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, মৌসুমের এটি স্বাভাবিক আচরণ। দেশের নদী বন্দরসমূহকে দুই নম্বর সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এর ফলে আরও দুদিন ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে শুরু হয় অঝোরধারায় বৃষ্টিপাত। বেলা ১১টা পর্যন্ত টানা বর্ষণে পানিতে সয়লাব হয়ে যায় নগরীর নিচু এলাকাগুলো। তলিয়ে যায় সড়ক, পানি ঢুকে পড়ে অনেক বাসা বাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। সড়ক নিমজ্জিত থাকায় অনেক এলাকায় যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। রিক্সা চলেছে হাঁটু থেকে বুক পানিতে। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে পড়ায় পথে পথে বিকল হয়ে পড়ে থাকে অনেক সিএনজি অটোরিক্সা। সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় অফিস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল। এতে করে দুর্ভোগে পড়তে হয়নি কর্মজীবী এবং শিক্ষার্থীদের। তবে দিনভর টিপ টিপ বৃষ্টিতে জনজীবন স্থবির থাকে। একান্ত প্রয়োজন না হলে মানুষ ঘর ছেড়ে বের হয়নি। আবহাওয়া অফিস জানায়, শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৭৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার। তন্মধ্যে ১২টার মধ্যেই বৃষ্টি হয়েছে ৬৯ মিলিমিটার। অল্প সময়ের মধ্যে অধিক বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি সামুদ্রিক জোয়ারও ছিল। আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জনকণ্ঠকে জানান, সাগরে কোন নি¤œচাপ নেই, সমুদ্র বন্দরগুলোর জন্য সতর্কতা সঙ্কেতও নেই। তবে দেশের নদী বন্দরসমূহকে ২ নম্বর সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, মৌসুমের এটি স্বাভাবিক আচরণ। কালবৈশাখীর প্রভাবে আগামী আরও দু’তিনদিন চট্টগ্রামে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর আবহাওয়ার উন্নতি হবে। চট্টগ্রাম নগরীর নিচু এলাকাগুলো তলিয়ে যাওয়ার জন্য ভারি বর্ষণের পাশাপাশি একই সময়ে সামুদ্রিক জোয়ারের প্রভাব ছিল বলে সূত্র জানায়। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, জোয়ার শুরু হয় বৃহস্পতিবার রাত ২টা ৫৭ মিনিটে, যা শুক্রবার সকাল ৯টা ১৭ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এরপর থেকে শুরু হয় ভাটা। ফের জোয়ার শুরু হয় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে, যা স্থায়ী হয় রাত প্রায় সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। এ জোয়ার এবং বৃষ্টিপাত দুয়ে মিলে ভোগান্তি চরমে উঠে। শুক্রবার সকাল থেকে একটানা ভারি বর্ষণে চট্টগ্রাম নগরীর নি¤œাঞ্চল জলমগ্ন হয়। চকবাজার, কাপাসগোলা, শুলকবহর, মুরাদপুর, ষোলশহর, প্রবর্তক মোড়, হালিশহর, বাদুড়তলা, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, বেপারিপাড়া, মুহুরিপাড়া, ছোটপুল, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, জুবিলী রোডসহ অনেক এলাকার সড়ক পানির নিচে চলে যায়। সড়কে রিক্সা ছাড়া আর কোন যানবাহন দেখা যায়নি। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভবনের নিচতলায় পানি ঢুকে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এদিকে অতিবর্ষণে নগরীর নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ার ফলে জনভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। শুক্রবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে মেয়র আগ্রাবাদ, সিমেন্ট ক্রসিং এবং ১৫ নম্বর ঘাট এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, অতিবর্ষণের পাশাপাশি সামুদ্রিক জোয়ারও ছিল। সে কারণে পানি স্বাভাবিক নিয়মে নামতে পারেনি। নগরীতে বিদ্যমান ড্রেনেজ সিস্টেমে ১০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত সহনীয়। কিন্তু হঠাৎ অত্যধিক বৃষ্টি হয়ে গেছে। ফলে নগরবাসীকে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে অন্যান্য শহরের চেয়ে চট্টগ্রাম শহরের বৈশিষ্ট্য আলাদা। এই শহরের পাহাড়, নদী, খাল এবং পাশে সমুদ্র রয়েছে। সাগর থেকে দৈনিক দুইবার জোয়ার আসে। পাহাড় থেকে নেমে আসা পলিতে নর্দমা ভরাট হয়। দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পিত ড্রেনেজ সিস্টেম নেই। জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, এ সমস্যা আমি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। চেষ্টা করছি যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে নগরবাসীকে এ সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান প্রক্রিয়ার উল্লেখ করে বলেন, এ মাসেই পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত হবে। খালের মুখে পাম্প হাউস ও স্লুইচগেট স্থাপনের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।
×