ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তা চুক্তি- দুই পক্ষই একমত, শুধু সময়ের ব্যাপার ॥ তথ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১১ এপ্রিল ২০১৭

তিস্তা চুক্তি- দুই পক্ষই একমত, শুধু সময়ের ব্যাপার ॥ তথ্যমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ তিস্তায় পানি নেই দাবি করে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি ছোট নদীর পানি বণ্টনের যে বিকল্প প্রস্তাব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন, বাংলাদেশ তা আমলে নেয়নি বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে সোমবার তথ্য অধিদফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইনু বলেন, এটা আমরা এখনও আমলে নেইনি, আমলে নেয়ার দরকার নেই। তিস্তা তিস্তাই, তিস্তার পানি বণ্টন করার জন্য আরেকটি নদীর কোথায় কি হবে সেটা এখানে আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। শনিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লীর রাষ্ট্রপতি ভবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর বেরিয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি তিনি শেখ হাসিনাকে বুঝিয়ে বলেছেন। তবে শেখ হাসিনার এ সফরে তিস্তার কোন সুরাহা না হলেও নয়াদিল্লীতে শীর্ষ বৈঠকের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দুই এ দেশের বিদ্যমান সরকারই এই জট খুলতে পারবে বলে তিনি আশাবাদী। আওয়ামী লীগ সরকারের শরিক দল জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, ভারতের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ কখনোই বলেনি যে, তার রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য চুক্তি ঝুলে আছে। এটা তারা তাদের মতো আলোচনা করে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে চুক্তি করা এবং সেই ব্যাপারে মোদি সাহেব এই তিস্তা চুক্তি করবেন সেটাই জয়েন্ট কমিউনিকে এসেছে। সুতরাং তিস্তা চুক্তি করব না- যদি এ ধরনের শব্দ থাকত তাহলে আমরা ধরতাম পিছিয়ে গেলাম। সুতরাং এইবার তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি তবে এই চুক্তি করার পক্ষে দুই পক্ষই একমত। যেহেতু ঐকমত্য আছে সেটা সময়ের ব্যাপার, এই সময়টা নিয়ে আমাদের তর্ক-বিতর্ক আছে। তবে এবার হলে আমরা খুশি হতাম। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে তিস্তা চুক্তি না হলেও শেখ হাসিনা এই চুক্তির দাবি থেকে সরে আসেননি বলে জানান তথ্যমন্ত্রী। বরং তিনি তিস্তার পানির দাবি আরও জোরালোভাবে তুলে ধরেন এবং একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানির প্রবাহ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানও জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ইনু বলেন, কোন চুক্তিটি দেশের স্বার্থবিরোধী? কোনটিতে দেশ বিক্রি হয়েছে? কোনটিতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণœ হয়েছে? কোনটিতে বাংলাদেশ তার ভূমির ওপর এক সেন্টিমিটার সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে? আমি আশা করি, বিএনপি এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে কোনটিতে দেশের স্বার্থ বিঘিœত হয়েছে তা উল্লেখ করবে। এটা না করতে পারলে খালেদা জিয়াকে জাতির কাছে ক্ষতা চাইতে হবে। ২০১৫ সালের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর পর্যন্ত ভারতে সঙ্গে ৮৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক ছিল বলেও জানান তথ্যমন্ত্রী। ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা খাতে তিনটি চুক্তির প্রসঙ্গ তুলে ইনু বলেন, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালিসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ে ১০টি চুক্তি রয়েছে। বাংলাদেশ ৭০ থেকে ৮০ ভাগ সামরিক সরঞ্জাম চীন থেকে কেনে। ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় আমাদের ক্রয়কে আরও বহুমুখী ও প্রতিযোগিতামূলক করা এবং নির্দিষ্ট নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসার একটি পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর মান বৃদ্ধি পাবে, যুগোপযোগী চাহিদা পূরণ সহজ হবে ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হবে। ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলো বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে কোন হুমকি ও বিপদে ফেলবে না দাবি করে ইনু বলেন, বরং এর মাধ্যমে আমাদের সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উন্নততর প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সমস্যা জিইয়ে না রেখে তার সমাধানই শেখ হাসিনার লক্ষ্য জানিয়ে ইনু বলেন, গত আট বছরে শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে ৪৬টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিগন্ত উন্মোচন করা হয়। শেখ হাসিনার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে সাইবার নিরাপত্তা, পারমাণবিক বিদ্যুত, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট ও মহাকাশ গবেষণার মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র ও ঋণ সহায়তার বিষয়ে চুক্তির মাধ্যমে দুদেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরও একধাপ অগ্রগতি হলো, উন্নয়নের নতুন দিগন্ত সূচিত হলো। প্রধান তথ্য কর্মকর্তা কামরুন নাহান এবং সিনিয়র উপপ্রধান তথ্য অফিসার (প্রেস) আকতার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
×