ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস এবার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রতীক্ষা

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ১৩ মার্চ ২০১৭

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস এবার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রতীক্ষা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশের স্বীকৃতির পর এবার একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানীদের ভয়াল গণহত্যার বিষয়টি তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। একইসঙ্গে সিমলা চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক আদালতে একাত্তরের স্বীকৃত ১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়াও শুরু করতে চাওয়া হচ্ছে। জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাবটি সর্বসম্মত পাসের পর চলতি সপ্তাহেই সরকার থেকে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে দিবসটিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করা হবে বলে সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। সংসদে প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনার সময় সরকারী দল, বিরোধী দল, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মিলিয়ে অধিবেশনে উপস্থিত সকল সংসদ সদস্যই একাত্তরের মতোই একাট্টা, সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন। সবার কণ্ঠেই ছিল অভিন্ন দাবি- শুধু গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতিই নয়, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ সোচ্চার হতে হবে। একইসঙ্গে একাত্তরের পরাজিত শক্তি পাকিস্তানসহ তাদের এদেশীয় দোসর-দালালদের চিহ্নিত করে বিচার, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের ঘৃণা-ধিক্কার জানাতে এতটুকু দ্বিধা করেননি আইনপ্রণেতারা। অধিবেশনে উপস্থিত তিন শতাধিক সংসদ সদস্যদের মধ্যে একজনও বিরোধিতা করা তো দূরের কথা, বরং সবাই কণ্ঠভোটে প্রস্তাবটি সমর্থন জ্ঞাপনের পর বিজয়ের মহানন্দের মতোই টেবিল চাপড়ে যেভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা বলেও মনে করছেন প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ানরা। সংসদে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ার পর এখন কী হবে? এ নিয়ে একাধিক সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংসদে প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার পর এখন সরকার থেকে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই প্রতিবছর ২৫ মার্চ রাষ্ট্রীয়পর্যায়ে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সেখানে আলোচনার পর চলতি সপ্তাহেই গণহত্যা দিবসের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের পর পরই দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করবে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস প্রস্তাব পাসের প্রেক্ষিতে দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করবে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতির জন্য জাতিসংঘের কাছে সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘকে একাত্তরে পাকিস্তানের ভয়াল গণহত্যার ভয়াবহতা তথ্য-প্রমাণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। সেখানে গণহত্যা দিবসের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাবে সরকার। ইত্যেমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে বলেও সূত্রটি জানায়। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে দেশের প্রবীণ সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস হওয়ায় এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের পথ অনেকটাই প্রশস্ত হবে। ১৯৪৮ সালে জেনোসাইড নিয়ে জাতিসংঘে গৃহীত আন্তর্জাতিক কনভেনশনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সবাই সমর্থন দিয়েছিল। যারা ওই কনভেনশনে স্বাক্ষর দিয়েছিল সেসব দেশের দায়িত্বই হলো গণহত্যা বন্ধ করা, না পারলে দায়-দায়িত্ব স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর ওপরও বর্তায়। তিনি জানান, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর একাত্তরের গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু তখন অনেক দেশই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেয়ায় তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গণহত্যাকারীদের বিচারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তি করা হয়। আর আন্তর্জাতিক আদালতে একাত্তরের ১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিটিও ন্যায্য। আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি আদায় সম্ভব হলে আন্তর্জাতিক আদালতে পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করাও সহজ হবে। সংসদে সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর সরকার দ্রুতই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে পদক্ষেপ নেবে বলেই আমরা আশা করি। আরেক সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে ২৫ গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব পাস হওয়া একটি বিরাট মাইলফলক। এখন সংসদে পাস হওয়া প্রস্তাবটি সরকার থেকে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে দিবসটির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে। এই প্রজ্ঞাপন মন্ত্রিপরিষদ কিংবা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা হতে পারে। একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই দীর্ঘ ৪৭ বছরে ২৫ মার্চ কালরাত স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি, স্মরণসভা কিংবা আলোচনা সভার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের কোন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ছিল না। দীর্ঘদিন পর হলেও এই সরকারী স্বীকৃতির পথ খুলে দিয়েছে আর কেউ নয়, খোদ একাত্তরে পরাজিত শক্তি দেশ পাকিস্তান। সম্প্রতি একাত্তরের এ গণহত্যার দায় এড়িয়ে উল্টো মুক্তিবাহিনীর ওপর দায় চাপিয়ে পাকিস্তানের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় মিথ্যা তথ্য সংবলিত একটি বই ছাপিয়ে তা বিভিন্ন দেশে প্রচার করতে থাকে পাকিস্তান। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নেয়ার অমোঘ সত্যটি অস্বীকার করে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার আইএসআইর তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ওই বইটি সরকারের নজরে আসলে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবসের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। পাকিস্তানের এই বিকৃত বই ছাপানোর বিষয়টি সংসদের নজরে আনেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সংসদ অধিবেশনে দাঁড়িয়ে তিনি এ বিষয়টি উত্থাপন করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের প্রতি নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়ে ২৫ মার্চকে জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবেও দিবসটির স্বীকৃতি আদায়ে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর ঘোষণা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ অনুযায়ী ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব করে একটি সাধারণ আলোচনার নোটিস সংসদ সচিবালয়ে জমা দেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার। প্রস্তাবটির মুল শিরোনাম ছিল- ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে বর্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যাকে স্মরণ করে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হোক।’ সংসদে প্রস্তাবটি নিয়ে সম্প্রতি সংসদীয় ইতিহাসে সাড়ে ৬ ঘণ্টাব্যাপী দীর্ঘ আলোচনায় সরকার ও বিরোধী দলের ৫৬ জন আইনপ্রণেতা বক্তব্য রাখেন। পরে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতক্রমে গৃহীত হয়। প্রস্তাবটি সংসদে পাসের প্রক্রিয়া শুরু হলে অধিবেশনের পরিবেশ ছিল সত্যিই অন্যরকম। অধিবেশন কক্ষে পিনপতন নীরবতা। কক্ষের বড় পর্দায় একের পর এক ভেসে উঠছে একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনীর ভয়াল বর্বরতার ছবি। পানিতে ভাসছে অসংখ্য নারী-পুরুষের লাশ। ঢাকার রাজপথের অলি-গলিতে পরে রয়েছে হাজার হাজার নিরীহ বাঙালীর মরদেহ। একাত্তরের পাক হানাদারদের চরম নির্মমতা ও ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণিত গণহত্যার প্রামাণ্য ও স্থিরচিত্র দেখে অধিবেশনকক্ষের ভারি বাতাস কাতর করে তুলেছে সবাইকে। যাঁর প্রস্তাবে এই প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়, সেই সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বর্বরতার চিত্র দেখে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। অনেকেই বারবার চোখ মুছছেন, আবার বর্বরতার চিত্র দেখছেন, আবার কাঁদছেন। মাত্র ১৮ মিনিটের এই প্রামাণ্যচিত্রে সংসদ ভবনে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি করে। এমনই ছিল শনিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনের চিত্র। অধিবেশনে এই প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের পরপরই সকল সংসদ সদস্যরা বর্বর পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা, ধিক্কার ও প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। প্রদর্শনের আগে একাত্তরের ওই ভয়াল চিত্র সংসদে উপস্থাপনের জন্য স্পীকারের অনুমতি চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৫ মার্চ শুধু নয়, এই পথ ধরে দেশে যে গণহত্যা শুরু হয়েছিল... অনেক সংসদ সদস্য আছেন এখানে যাঁরা যুবক, একাত্তরের সেই ভয়াল চিত্র তাঁরা দেখেননি। আপনার অনুমতি নিয়ে ওই সময়কার কিছু ছবি-ভিডিও দেখাতে চাই, যেগুলো ওই সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছিল। এরপর অধিবেশনকক্ষে রাখা বড় পর্দায় একাত্তরের পাক হানাদারদের নির্মমতার বিভিন্ন চিত্র ও ভিডিও দেখানো হয়। প্রস্তাবটি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনাতেই উঠে আসে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসটিকে কীভাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করা সম্ভব হবে। সেখানে বলা হয়, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ দিবস হিবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। গণহত্যার স্মরণ দিবস হিসেবে জাতিসংঘ ৯ ডিসেম্বরকে ঘোষণা করলেও গণহত্যা দিবস হিসেবে কোন প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। যেহেতু পৃথিবীর ইতিহাসে এত জীবনের মূল্যে দিয়ে কোন দেশ স্বাধীন হয়নি, মাত্র ৯ মাসেই পাকহানাদার ও তাদের এদেশীয় দোসররা ৩০ লাখ বাঙালীকে হত্যা করেছে, পরিকল্পিতভাবে দেশের সূর্যসন্তান বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে নির্বিচারে হত্যা করেছে, তাই এসব তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণ জাতিসংঘ তুলে ধরে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে প্রস্তাব পাসের সম্ভাবনা রয়েছে। পরাজিত পাকিস্তানসহ তাদের মিত্র কিছু দেশ এর বিরোধিতা করার চেষ্টা করতে পারে, কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পরাজিত দেশটির এই নির্মম গণহত্যার বিষয়টি সঠিকভাবে জাতিসংঘসহ সদস্য সকল দেশের সামনে তুলতে ধরতে পারলে সমর্থন আদায়ে তেমন কোন অসুবিধা হবে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে আলোচনায় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা এবং এদেশীয় সহযোগীরা বাংলাদেশের ৩০ লাখ নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। যা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইন্যুনাল আইন ১৯৭৩-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী গণহত্যা। পাকহানাদাররা ২৫ মার্চ কাল রাত্রে যে নজিরবিহীন গণহত্যা সূচনা করে, যা পরবর্তীতে ৯ মাস অব্যাহত ছিল। যেহেতু আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে গণহত্যার সময় বিভিন্ন নৃশংসতা, হত্যাযজ্ঞ গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তাই ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস এবং এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ২৫ মার্চ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে বলেন, জেনোসাইড বা গণহত্যার সংজ্ঞাই হচ্ছে- সুচিন্তিতভাবে বিশাল সংখ্যেক মানুষ কিংবা জাতিকে হত্যা করাই হচ্ছে গণহত্যা। যা পাকিস্তানীরা ঘটিয়েছে। ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। সেদিক থেকে আমাদের সুযোগ রয়েছে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে আমরা গ্রহণ করতে পারি। আর পাকিস্তানী হানাদাররা যে গণহত্যা চালিয়েছে তার কোন প্রমাণ লাগে না। একাত্তরের গণহত্যার ঘটনা যারা ভুলে যায়, তাদের এ দেশে থাকার কোন অধিকার নেই। যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে যারা দহরম-মহরম করে, তাদের উচিত পাকিস্তানে চলে যাওয়া।
×