ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

গল টেস্টে চাপে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১০ মার্চ ২০১৭

গল টেস্টে চাপে বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একের পর এক বাজে শট। সেই শটে একের পর এক উইকেট যাওয়া। তাতেই গল টেস্টে বিপদে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহীম ও মেহেদী হাসান মিরাজ প্রতিরোধ না গড়লে ফলোঅন এড়াতেই পারত না বাংলাদেশ। সপ্তম উইকেটে এ দুইজনের গড়া ১০৬ রানের জুটিতেই শেষ পর্যন্ত ফলোঅন এড়িয়ে ৩১২ রানও করতে পেরেছে মুশফিকবাহিনী। তাতে মুশফিকেরই ৮৫ রান ও মিরাজের ৪১ রান আছে। তৃতীয়দিন শেষে বাংলাদেশ ১৮২ রানে পিছিয়ে রয়েছে। দ্বিতীয়দিনই শ্রীলঙ্কা অলআউট হয়ে গিয়েছিল। তবে ৪৯৪ রানের বড় স্কোরই গড়েছিল। এ রানের জবাব দিতে নেমে দ্বিতীয়দিন ২ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। ১৩৩ রানে দিন শেষ করে। সৌম্য সরকার ও মুশফিক ব্যাট হাতে থাকেন। তৃতীয়দিনের শুরুটা এ দুইজনই করেন। কিন্তু শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ভুল শট খেলে আগেরদিনের সঙ্গে আর ৫ রান যোগ করে আউট হয়ে যান সৌম্য (৭১)। শুরু হয় যেন ভুল শটের মহড়াও। এরপর সাকিব, মাহমুদুল্লাহ, লিটনও সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি করে যান। যে শট খেলার কথা নয়। সেই শটই খেলেন। টেস্ট মেজাজ বলতে কিছুই দেখাতে পারেননি তারা। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে তো এখন যেন ভাবার সময়ই হয়ে গেছে। সর্বশেষ ১১ টেস্টে একটিমাত্র হাফসেঞ্চুরি করেছেন তিনি। একে পর এক ম্যাচে ব্যর্থ হয়েই চলেছেন। সাকিব তো বারবার উল্টা পাল্টা শট খেলে আউট হচ্ছেন। মুশফিকের পরিবর্তে উইকেটরক্ষকের ভূমিকায় সুযোগ পান লিটন। কিন্তু দলে টিকে থাকতে হলে ব্যাটিংটাওতো দেখাতে হবে। লিটন সেটিই প্রথম ইনিংসে করতে পারলেন না। ১৯২ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ফলোঅন এড়াতে হলে বাংলাদেশকে ২৯৫ রান করতে হবে। ৬ উইকেট পড়ার পর আরও ১০৩ রান বাকি থাকে তখন। পারবে বাংলাদেশ ফলোঅনের লজ্জা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে? এ প্রশ্ন যখন উঠেছে, তখনই মুশফিক ও মিরাজ যেন ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। মিরাজ দেখান তিনি আসলেই অলরাউন্ডার। তাকে শুধু বোলার ভাবা ভুল ছাড়া আর কিছুই নয়। আর মুশফিক তো এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানই। এই ব্যাটিংটা যেন ভালভাবে করতে পারেন, তাই তো মুশফিককে উইকেটকিপিং থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। মুশফিক ব্যাটিংটা দুর্দান্তভাবেই করে দেখালেন। শুরুতে উইকেট আঁকড়ে থাকলেন। ৮৮ বল পর্যন্ত কোন বাউন্ডারি হাঁকালেন না। এরপর ৮৯তম বলটিতে গিয়ে হেরাথের বলে যে ছক্কা হাঁকালেন, শুরু হয়ে গেল মুশফিক দ্যুতি। এরপর সুযোগ পেলেই শুধু বাউন্ডারি হাঁকান। আর মিরাজও কম যান না। মুশফিকের এমন ‘জোশ’ দেখে তিনিও যেন ‘হোশ’ হারান। বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন। দু’জন মিলে দলকে ফলোঅন থেকে বাঁচিয়ে তোলেন। কিন্তু ২৯৮ রানে গিয়ে মিরাজ আউট হয়ে যান। সাজঘরে ফেরার আগেই দলকে ভাল অবস্থানে রেখে যান। মুমূর্ষু অবস্থা থেকে যে দলকে তিন শ’ রানের কাছাকাছি নিয়ে গেছেন, সঠিক সময়ে ব্যাট হাতে হাল ধরেছেন; সেটি কম ভাল অবস্থান নয় নিশ্চয়ই। মিরাজ আউটের পর অবশ্য বেশিদূর যেতে পারেনি বাংলাদেশ। আর ১৪ রান যোগ হতেই তিন উইকেটের পতন ঘটে যায়। অলআউট হয় বাংলাদেশ। দিনটিতে দুই সেশন দুই বল খেলে ৮ উইকেট হারিয়ে আরও ১৭৯ রান করতে পারে বাংলাদেশ। বৃষ্টি আসায় আরও এক সেশনের মতো খেলার সুযোগ থাকার পরও বল মাঠে গড়ায়নি। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হতেই তাই দিনও শেষ হয়ে যায়। দলের ৩০৮ রানের সময় মুশফিকও আউট হন। দলের সেরা বোলার প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট নেয়া হেরাথের বলে বোল্ড হয়ে যান। আউট হওয়ার আগে ১৬১ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৮৫ রান করেন। যা দলকে এতদূর নিয়ে আসে। আর ১৫টি রান হলে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাতেন মুশফিক। টানা তিন টেস্টেই সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়তেন। কিন্তু পারেননি। এরপরও মুশফিক যে হাল ধরে খেলেছেন, সিনিয়র ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার মিছিলে নিজেকে বিলিয়ে দেননি, সেটিই বাংলাদেশকে এতটা পথ এগিয়ে নিয়ে গেছে। না হলে পিছিয়ে থাকার ব্যবধান আরও বড় হত। তাতে বাংলাদেশের বিপদ আরও দ্রুত ঘনিয়ে আসত। এখন বাংলাদেশের সামনে টেস্ট বাঁচাতে হলে একটি পথই খোলা। দ্রুত শ্রীলঙ্কাকে অলআউট করে দিতে হবে। কম রানে বেঁধে রেখে ম্যাচ জেতার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। নয়ত শ্রীলঙ্কা যতদূর এগিয়ে যাবে, স্কোরবোর্ড যত মজবুত করবে ততই বিপত্তিতে পড়বে বাংলাদেশ। তিনদিন শেষ হতেই তো বিপদে পড়ে গেছে বাংলাদেশ।
×