ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো...

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো...

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান গঠনের পর পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরাই পাকিস্তান সরকারের প্রাধান্য পায়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাকিস্তান সরকার ঠিক করে উর্দু ভাষাকে সমগ্র পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা করা হবে। যদিও পূর্ব পাকিস্তানে উর্দু ভাষার চল ছিল খুবই কম। পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী মানুষ (যারা সংখ্যার বিচারে সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন) এ সিদ্ধান্তকে মোটেই মেনে নিতে চায়নি। পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষার সমমর্যাদার দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। ১৯৫০ সালে ৭ ডিসেম্বর মৌলানা আকরম খানের নেতৃত্বে গঠিত ১৬ সদস্যবিশিষ্ট ‘ইস্ট বেঙ্গল ল্যাংগুয়েজ কমিটি’ আরবী হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাবকে বাস্তবতা বিবর্জিত এবং উদ্ভট হিসেবে আখ্যায়িত করে চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করে। এই কমিটি রিপোর্টে পূর্ব পাকিস্তানের অফিস আদালত ও শিক্ষা ক্ষেত্রে সর্বত্তভাবে বাংলা ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছিল। একই সালের ১০ ডিসেম্বর মওলানা ভাসানী জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন। মুক্তির পরপরই ভাসানী এই রিপোর্ট (যাতে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করা হয়েছিল) প্রত্যাখ্যান করেন এবং গ্রান্ড ন্যাশনাল কনভেনশন এ গৃহীত প্রস্তাবগুলো অবিলম্বে মেনে নেয়ার জন্য পাকিস্তান সরকারকে আহ্বান জানান। ১৯৫১ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের জন্ম। এই যুবলীগ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার পাশাপাশি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া মুসলিম সংস্কৃতির পরিবর্তে পূর্ব বাংলার অধিবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতি যেমন, পহেলা বৈশাখ, নবান্ন ইত্যাদি চর্চার ব্যাপারে উচ্চকণ্ঠ ছিল। যুবলীগ মূলত পাকিস্তানের প্ল্যান-ইসলামিক মতবাদ থেকে বেরিয়ে এসে পূর্ব বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চার ক্ষেত্রে একটি কণ্ঠস্বর হিসেবে নিজেদের অল্পদিনের মধ্যে পরিচিত হয়ে ওঠে। ১৯৫১ সালের ১১ মার্চ দ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্ট্যাট ল্যাংগুয়েজ মুভমেন্ট কমিটি পূর্ব বাংলার সব পত্রপত্রিকায় এবং গণপরিষদের সদস্যদের মাঝে বাংলাকে উর্দুর পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার দাবিতে একটি স্মারকলিপি পাঠায়। একই সালের ২৭ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী পুনরায় গণপরিষদে আরবী হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাবটি পেশ করে। ১৯৫১ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর এ সময় ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল আব্দুল মতিনের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই, সেপ্টেম্বর, অক্টোবরে পৃথক পৃথক সমাবেশ করে বাংলাকে উর্দুর পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় সমাবেশগুলোতে কাজী গোলাম মাহবুব, অলি আহাদ, গাজীউল হক প্রমুখ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব পাকিস্তানের গবর্নর খাজা নাজিমুদ্দিন জানান, পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া হবে। এ ঘোষণার পর মাতৃভাষা আন্দোলন আরও জোরদার হয়ে ওঠে। পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে মিটিং-মিছিল ইত্যাদি বেআইনী ঘোষণা করে। কিন্তু শাসক গোষ্ঠীর কোন কিছুই সেদিন বাংলার ছাত্রজনতা মানেনি। মায়ের ভাষা রক্ষার দাবিতে রাস্তায় নেমে পড়েন।
×