ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সীতাকুণ্ড শিল্পাঞ্চলে পানির সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সীতাকুণ্ড শিল্পাঞ্চলে পানির সঙ্কট

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বৃষ্টিবহুল নদীমাতৃক বাংলাদেশে পানির অভাব! পানির দেশে পানি নেই। বর্ষার ভরা মৌসুমে টইটুম্বুর হয় মাঠ-ঘাট। কিন্তু পাহাড় থেকে নেমে আসা সেই পানি গড়িয়ে চলে যায় বঙ্গোপসাগরে। সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই। শিল্পায়ন ও গৃহস্থালির কাজে বিদ্যুতের জন্য যতটা উচ্চকণ্ঠ, পানির জন্য তেমন আওয়াজ নেই। সারফেস ওয়াটার ব্যবহার করতে না পারায় চাপ বাড়ছে ভূগর্ভের পানির ওপর। ফলে পানির স্তর নামছে গভীর থেকে গভীরে। হাজার ফুট গভীরে পাইপ পাঠিয়ে পানি মিলছে না। আর পানির অভাবে পরিত্যক্ত হওয়ার উপক্রম অনেক শিল্প এলাকা। তেমনই এক শিল্পাঞ্চল চট্টগ্রামের সীতাকু-। দেশের অন্যতম বৃহত্তম এই এলাকায় নতুন শিল্পায়ন ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুত সঙ্কটের চেয়ে পানি সঙ্কট মারাত্মক। অথচ, পাহাড়ে জলাধার সৃষ্টি করে শিল্প কারখানায় যোগান দেয়ার পাশাপাশি অব্যবহৃত জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ মহল। যোগাযোগ এবং বন্দর সুবিধার কারণে শিল্প স্থাপনের জন্য সীতাকু- একটি আকর্ষণীয় জায়গা। সেই বিবেচনায় শতবর্ষ আগেই সীতাকু-ে গড়ে উঠে শিল্প। পাট, টেক্সটাইল, কার্পেট, রেয়ন, কেমিক্যাল ও সিগারেটসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা পাকিস্তান আমলেই স্থাপিত হয়। তবে বিশেষভাবে এ শিল্পাঞ্চল পরিচিতি পায় ভারী শিল্প এলাকা হিসেবে। কালক্রমে পাট শিল্প বন্ধ কিংবা জৌলুস হারালেও সেখানে রয়েছে দেশের বৃহৎ শিল্প গ্রুপগুলোর বিনিয়োগ। সীতাকু-ে শিল্প স্থাপন করেছে বিএসআরএম গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ, জিপিএইচ ইস্পাত গ্রুপ, পিএইচপি গ্রুপ, কেএসআরএম, টি কে গ্রুপ, সানম্যান গ্রুপ, এস এ গ্রুপ, মোস্তফা হাকিম গ্রুপ, মোস্তফা গ্রুপ, কনফিডেন্স সিমেন্ট এবং আরও অনেক বৃহৎ শিল্প পরিবার। ১৯৭০ সালে আল আব্বাস নামের আটকে যাওয়া একটি জাহাজ কাটার মাধ্যমে সীতাকু-ে শুরু হয় শীপ ব্রেকিং শিল্প, যা বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায় বৃহৎ শীপ ব্রেকিং হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ বেল্টকে বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের লোহার খনি। সময়ের প্রয়োজনে শিল্প সম্প্রসারিত হচ্ছে মীরসরাই উপজেলা পর্যন্ত। সরকার বিদ্যুত উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়িয়েছে। কিন্তু পানি কই? শিল্পের অন্যতম এবং অপরিহার্য উপাদান পানি। সীতাকু-ের পশ্চিমে সমুদ্র এবং পূর্বে পাহাড়। জায়গাটা বেশ সরু। এখানে গড়ে উঠেছে অনেক শিল্প কারখানা। দু’দিকেই পানির উৎস। অথচ স্থলে পানির তীব্র সঙ্কট। শুষ্ক মৌসুমে গৃহস্থালির নলকূপগুলো পানি পায় না। এর প্রধান কারণ ভূগর্ভ থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি উত্তোলন শিল্প কারখানাগুলোর। সেই পাকিস্তান আমলে ১৯৬৮ থেকে ১৯৭০ সালে যে জিওলজিক্যাল সার্ভে হয়েছিল তাতেও দেখা যায় ভূগর্ভের পানির সংস্থান বড়ই নাজুক। এত শিল্প স্থাপনের পর বর্তমানে অবস্থা যে কোন পর্যায়ে ঠেকেছে তা সহজে অনুমেয়। শিল্পোদ্যোক্তাদের কাছ থেকে এত দিন শোনা গেছে বিদ্যুত সঙ্কট সুরাহার দাবি। এ খাতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। বিদ্যুত নিয়ে এখন আর অভিযোগ নেই। এলএনজি আমদানির মাধ্যমে গ্যাস সঙ্কটও সমাধানের কাছাকাছি। কিন্তু পানির অভাবে উৎপাদন চালু রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সীতাকু-ের শিল্প মালিকরা। ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন অনেক ব্যয়বহুল হলেও বাধ্য হয়ে শিল্প কারখানাগুলোকে তা-ই করতে হয়। কিন্তু অর্থ ব্যয় করেও প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি পাওয়া যায় না। সীতাকু-ে ২৪ ঘণ্টা উৎপাদনের চাকা সচল রাখা খুবই কঠিন বলে জানান শিল্প মালিকরা। পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব হতে পারে সুদূরপ্রসারী।
×