ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষাকে মুনাফা তৈরির হাতিয়ার বানাবেন না ॥ রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শিক্ষাকে মুনাফা তৈরির হাতিয়ার বানাবেন না ॥ রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শিক্ষাকে মুনাফা তৈরির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করে জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার বিকেলে রাজধানীর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ১৬তম সমাবর্তনে ভাষণের শুরুতে তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের সকল শহীদ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ইউনিভার্সিটির আচার্য আবদুল হামিদ প্রতিটি ইউনিভার্সিটিতে বিশ্বমান ও গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করে দেশপ্রেমিক ও শিক্ষিত মানবসম্পদ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। খবর বাসস’র। তিনি বলেন, শুধু সার্টিফিকেটমুখী শিক্ষা নয়, সৃজনশীল ও আলোকিত মানুষ তৈরির জন্য উচ্চশিক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবশ্যই মান নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন স্নাতকদের অভিনন্দন জানিয়ে পেশাগত কর্মকা-ের মাধ্যমে জাতি গঠনে নিজেদের উৎসর্গ করার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি নতুন স্নাতকদের এ দেশ এবং এ দেশের অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, পরিবার, সমাজ এবং দেশ এই অবস্থানে তাদের পৌঁছতে বিশাল অবদান রেখেছে। ছাত্রছাত্রীরা তাদের স্ব স্ব সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সততার, দক্ষতার ও দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন বলে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, শ্রেণীকক্ষে ছাত্রছাত্রীদের সিলেবাস অনুযায়ী শুধু শিক্ষাদানই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নয়, তাদের মানবিকতার প্রশিক্ষণ, সহিষ্ণুতা, সামাজিক দায়িত্ববোধ এবং মূল্যবোধও শিক্ষা দিতে হবে। রাষ্ট্রপতি সাম্প্রতিককালে দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের উত্থানে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এটি মানব সভ্যতার প্রতি একটি বড় হুমকি। রাষ্ট্রপতি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্যের প্রতি নিজ নিজ অবস্থান থেকে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করার আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ পিতা-মাতার প্রতি তাদের শিশুদের আরও সময় দিয়ে তাদের প্রতি যথাযথ মনোযোগ এবং ভালবাসা দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি নৈমিত্তিক সামাজিক চিন্তা-ভাবনার জন্য শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান এবং তাদের ক্লাস কোর্সের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ব ও সহিষ্ণুতার বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্যও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান সরকার দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের সময়েই বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ এবং তিনি আশা করেন যে, তরুণ প্রজন্ম এই ভিশন যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। দেশে শিক্ষা খাতে অর্জিত ব্যাপক সাফল্যের উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং এটি বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রোল মডেল হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু উন্নয়নের এই ধারাকে আরও এগিয়ে নিতে বেসরসকারী খাতের অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যক।’ রাষ্ট্রপতি উচ্চতর শিক্ষার বিকেন্দ্রীকরণকে বর্তমান সরকারের একটি বড় ধরনের সাফল্য উল্লেখ করে বলেন, দেশের সকল প্রান্তে বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কারণে সকল শিক্ষার্থীর জন্য উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ সহজ হয়ে পড়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশা করছি, সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজধানীর বাইরে বিনিয়োগ করবে।’ আবদুল হামিদ বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবন ও বিপ্লব প্রসঙ্গে বলেন, টেকনোলজির প্যাটার্ন দ্রুত বদলে যাচ্ছে এবং আমাদের উন্নয়ন কৌশলে এর ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশ অগ্রগতি অর্জন করছে এবং এই ধারা অব্যাহত থাকলে ইনশাআল্লাহ ২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য অর্জন করবে।’ তিনি তরুণ প্রজন্মের প্রতি বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনের ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের দক্ষ করে তোলার এবং দেশীয় উন্নয়ন কার্যক্রমে ওই অভিজ্ঞতার ব্যবহারের আহ্বান জানান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বর্তমানে আর আমাদের সামনে নেই, তবে তাঁর আদর্শ-নীতি ও উন্নয়ন চিন্তা এখনও দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’ রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ইতোপূর্বে দেখানো পথেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি ‘সোনার বাংলা’য় পরিণত হচ্ছে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এস এম শহীদুল হাসান, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহিদ হাসান বক্তৃতা করেন।
×