ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আবাসন সঙ্কটে ভোগান্তিতে শাবি শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

আবাসন সঙ্কটে ভোগান্তিতে শাবি শিক্ষার্থীরা

শাবি সংবাদদাতা ॥ তীব্র আবাসন সঙ্কটে ভোগান্তিতে রয়েছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সময়ের পরিক্রমায় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন ১০ হাজারের কাছাকাছি গেলেও আনুপাতিক হারে আবাসন সুবিধা না বাড়ায় মোট শিক্ষার্থীর ৭৫ শতাংশকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তীব্র আবাসন সঙ্কটে। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত স্কুলের অধীনে নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ আবাসিক হল ও তিনটি হোস্টেল মিলে সর্বমোট ২ হাজার ৪২৪ ছাত্রছাত্রীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থাৎ ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য কোন আবাসন ব্যবস্থা নেই। এদের মধ্যে যারা সিলেটের স্থানীয় বাসিন্দা তারা নিজের বাসা থেকেই ক্লাস করে থাকেন। আর বাকিদের বাড়তি টাকা খরচ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে বিভিন্ন মেস-হোস্টেলে থাকতে হচ্ছে। ছাত্রদের তিনটি, ছাত্রীদের দুটি আবাসিক হল রয়েছে। এছাড়া ছাত্রীদের দুইটি হলের অধীনে হোস্টেল রয়েছে তিনটি। যদিও মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৫ সালের মধ্যে ৯টি আবাসিক হল নির্মাণের কথা ছিল। তিনটি ছাত্র হলে আসন রয়েছে মাত্র ১০৫২টি। অর্থাৎ ৮৩ শতাংশ ছাত্রেরই আবাসন ব্যবস্থা নেই। ছেলেদের অনেকেই বিভিন্ন কারণে হলমুখী না হলেও এদিক থেকে উল্টো মেয়েরা। এ কারণে আসন সমস্যা বেশি পোহাতে হচ্ছে ছাত্রীদেরই। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী রয়েছেন ২৫১৮, কিন্তু দুটি ছাত্রী হল ও তিনটি হোস্টেলে সব মিলিয়ে ১৩৭২ আসন রয়েছে। শতকরা ৪৫ শতাংশ ছাত্রী আবাসন সুবিধা পাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেখানে হলে ভর্তি হতে বছরে প্রতি শিক্ষার্র্থীর ২০০০ টাকা পরিশোধ করতে হয় সেখানে প্রথম ছাত্রী হলের অধীন আমির কমপ্লেক্স হোস্টেলে বছরে ২১ হাজার ছয় শ’ টাকা, বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের অধীন ফজল কমপ্লেক্স হোস্টেলে ১৮ ছয় শ’ টাকা এবং সামাদ হাউসে প্রতি শিক্ষার্থীকে ১৮ হাজার টাকা দিতে হয়। শুধু হলে আসন না পাওয়ার কারণে বছরে ১০ গুণ বেশি টাকা দিলেও হোস্টেলগুলোতে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। হলগুলোতে থাকলেও এর তিনটির কোনটিতেই নেই কোন ডাইনিং-ক্যান্টিন কিংবা রিডিং রুমের সুবিধা। নেই টিভি রুমও। দুটির বেশি পত্রিকাও আসে না কোন কোনটিতে। এছাড়া আয়রনযুক্ত পানি, সাপের উপদ্রব, মশায় ভরপুর, খাবারের নিম্নমানসহ বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে হলগুলো। এছাড়া প্রতিবছর নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পর ছাত্রীদের দুই আবাসিক হলে গড়ে ওঠে গণরুম। রিডিং রুম, কমন রুমগুলোকে গণরুমে পরিণত করা হয়। তখন এ দুই হলের প্রতিটি গণরুমে প্রায় ৩০ জন করে শিক্ষার্থীকে থাকতে হয়। প্রথম ছাত্রী হলের গণরুমের বাসিন্দা রুমা আক্তার বলেন, ‘গণরুমে কোনরকমে মাথার কাছে, পায়ের কাছে জিনিসপত্র রেখে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। এক রুমে এত ছাত্রীর একসঙ্গে পড়াশোনা করার জায়গা নেই। ফলে এভাবে হলে অবস্থান করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক এবং লেখাপড়ার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নিশাত আক্তার বলেন, আমরা তৃতীয় বর্ষে ওঠার পরও আমাদের হলে সিট দেয়া হয় না। আমাদের ডাবলিং করে থাকতে বাধ্য করা হয়। এসব বিষয়ে প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলেও কোন কাজ হয়নি। উল্টো আমাদের উপর ক্ষেপে যান। প্রথম ছাত্রী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আমিনা পারভীন জানান, নানাবিধ সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ছাত্রীদের সমস্যা নিরসনে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। আমরা প্রথম ছাত্রী হলের নিচে দুইটি কমন রুমে ছাত্রীদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া আমরা নেহারীপাড়ায় ছাত্রীদের জন্য ১২০ সিট বিশিষ্ট একটি মেস ভাড়া করেছি। সেখানে ছাত্রীরা থাকতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আমিনুল হক ভূইয়া বলেন, নানাবিধ কারণে আমরা মহাপরিকল্পনার দিকে খুব ভালভাবে এগিয়ে না যেতে পারলেও দুই যুগ পার হয়ে আমরা একটি ভাল অবস্থানে দাঁড়িয়েছি। আবাসন সঙ্কট নিরসনে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
×