ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

খোলার অপেক্ষায় সাগরভিত্তিক অর্থনীতির দুয়ার

‘মিন সন্ধানী’ দিয়ে অনুসন্ধান শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৮ জানুয়ারি ২০১৭

‘মিন সন্ধানী’ দিয়ে অনুসন্ধান শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশের বিশাল সমুদ্রসীমায় সামুদ্রিক মৎস্যসহ মূল্যবান অন্যান্য সম্পদের অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় তিন দশকের বন্ধ্যত্ব কাটিয়ে বর্তমান সরকার আমলে বিদেশ থেকে আনা হয়েছে অনুসন্ধানী জাহাজ ‘মিন সন্ধানী’। মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানানো হয়েছে, অনুসন্ধানের এ কার্যক্রম চলবে সমুদ্রের প্রায় ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে। বর্তমানে গভীর সমুদ্রে যেসব ফিশিং গ্রাউন্ড রয়েছের বাইরে নতুন মজুদ ও ফিশিং গ্রাউন্ড আবিষ্কৃত হবে বলে বিশেষজ্ঞদের মত রয়েছে। এ গবেষণায় চিহ্নিত করা হবে মৎস্য শিকারের নতুন নতুন এলাকা। নির্ণয় হবে নতুন প্রজাতির মাছের পরিমাণ। এর পাশাপাশি খনিজ, জ্বালানি তেল এবং গ্যাসের মজুদ নিয়েও অনুসন্ধান কার্যক্রম চলবে। মৎস্য অধিদফতরের মেশিন ফিশারিজ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রজেক্ট পরিচালক এবিএম আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত নবেম্বর মাস থেকে মৎস্য অধিদফতর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চবির মেরিন সায়েন্স বিভাগ ও মৎস্য ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এক ডজনেরও বেশি গবেষক জরিপ কাজে অংশ নিচ্ছেন। ২০১৯ সালের জুন মাসে জরিপের একটি মাস্টার প্লান্ট সরকারের কাছে পেশ করার কথা রয়েছে। মৎস্য অধিদফতরের মতে, আমদানিকৃত মিন সন্ধানী অনুসন্ধান জাহাজ আগামী ৩৫ বছরে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সক্ষম। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, এই জরিপ কার্যক্রমের আগে তিন দশক পূর্বে জরিপের ফল রয়েছে। সে অনুসারে সাগরের তলদেশে চিংড়িসহ ৪৭৫ প্রজাতির মাছের কথা উল্লেখ রয়েছে। চিহ্নিত রয়েছে ৫টি ফিশিং গ্রাউন্ড। এসব গ্রাউন্ডের মধ্যে এলিফ্যান্ট গ্রাউন্ডে আহরিত হতো প্রচুর চিংড়ি মাছ। এছাড়া সেন্টমার্টিনের সাউথ প্যাসেজ, মিডলিং গ্রাউন্ড ও সোয়াচ গ্রাউন্ডে সমুদ্র তলদেশ থেকে আহরিত হয়ে আসছে বিপুল পরিমাণ মৎস্য। উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে প্রলঙ্করি ঘূর্ণিঝড়ের পর ফিশিং গ্রাউন্ডগুলো পরিবর্তিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এর পাশাপাশি প্রজনন স্থানও অন্যত্র চলে যায়। মৎস্য বিভাগের মাছরাঙা ও অনুসন্ধানী নামের দুটি গবেষণা জাহাজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে গত তিন দশক ধরে সমুদ্রে মৎস্য ও অন্যান্য সম্পদ নিয়ে কোন জরিপ কাজ চলেনি। বর্তমান সরকার আমলে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে রায় অনুকূলে আসার পর বাংলাদেশের জলসীমার পরিমাণ দ্বিগুণে উন্নীত হয়েছে। ফলে মৎস্য গ্রাউন্ড ও খনিজ সম্পদ মজুদ ও আহরণের ক্ষেত্রও অধিকতর বৃদ্ধি পেয়েছে। মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে শনিবার বলা হয়েছে,নতুন এ অনুসন্ধানী জাহাজের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর তারা ব্যাপকভাবে আশাবাদী। কেননা, সমুদ্রসীমানা বেড়ে যাওয়ার ফলে সেখান থেকে অনাহরিত মৎস্য গ্রাউন্ডের সন্ধান মিলবে নিঃসন্দেহে। এছাড়া ইতোমধ্যে বেড়ে যাওয়া সীমানায় সরকার নৌবাহিনীর মাধ্যমে পাহারা জোরদার করেছে। ইতোপূর্বে বাংলাদেশের জলসীমা থেকে পার্শ্ববর্তী দুই দেশের ফিশিং বোট ও ট্রলারের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক মৎস্য চুরি হয়ে যেত। এখন তা অনেকাংশে রোধ হয়েছে, তবে তা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। ফলে মৎস্য আহরণ মৌসুমে দুই প্রতিবেশী দেশের মাঝিমাল্লারা বোটসহ ধরা পড়ার ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে মৎস্য আহরণ ও খনিজ সম্পদ মজুদ থাকার স্থানসমূহ কঠোর নজরদারিতে রাখতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করার চিন্তা ভাবনা করছে সরকার। সূত্রমতে, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের মতে, বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশী জলসীমায় সামুদ্রিক মৎস্যের যে ভা-ার রয়েছে এবং অনাবিষ্কৃত খনিজ সম্পদের যে মজুদ রয়েছে তা কাজে লাগাতে পারলে দেশের ব্লু ইকোনোমিতে ব্যাপক অবদান রাখবে। এই ব্লু ইকোনোমি নিয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের তৎপরতা চলছে ব্যাপকভাবে। সেদিন হয় তো বেশি দূরে নয়, যেদিন সাগরভিত্তিক অর্থনীতির সমৃদ্ধির দুয়ার খুলে যাবে।
×