ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ

ইসি প্রতিষ্ঠার আইন তৈরিসহ ৮ দফা প্রস্তাব ওয়ার্কার্স পার্টির

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬

ইসি প্রতিষ্ঠার আইন তৈরিসহ ৮ দফা প্রস্তাব ওয়ার্কার্স পার্টির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত আইন তৈরি ও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। মঙ্গলবার বঙ্গভবনে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এ সময় আটদফা প্রস্তাব তুলে ধরা হয় রাষ্ট্রপতির কাছে। এদিকে, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সংলাপে আসা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবে ‘কিছু বিষয়ে মিল’ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। বঙ্গভবনের দরবার হলে এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের সামনে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন। তবে কোন্ কোন্ বিষয়ে দলগুলোর কাছ থেকে একই ধরনের প্রস্তাব এসেছে সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত বলেননি। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষে আগামী ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেবে নতুন ইসি। ওই কমিশনের অধীনেই ২০১৯ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করেছেন রাষ্ট্রপতি। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সর্বসম্মত মতামত গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে দেয়া প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাই এর প্রতি তদ্রƒপ মান্যতা ও মর্যাদা থাকতে হবে, যাতে নির্বাচন পরিচালনা, তত্ত্বাবধানে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন পরিবেশে কাজ করতে পারে। এছাড়া সংবিধানের ১১৮ বিধি বাস্তবায়নার্থে আইনের বিধানাবলী অনুসারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য একটি আইন তৈরি করা। রাষ্ট্রপতি জরুরীভিত্তিতে সংসদ অধিবেশন ডেকে বা অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে আইন প্রণয়ন করতে পারেন। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫ দিন থেকে এক মাস সময় লাগতে পারে। এ আইন অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারগণ নিয়োগের জন্য নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল থাকবে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, স্পীকার, প্রধান বিচারপতি ও এ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে এ সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠিত হবে। এ সাংবিধানিক কাউন্সিল রাষ্ট্রপতির নিকট প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য নাম প্রস্তাব করবেন। রাষ্ট্রপতি তাদের পরামর্শমতো প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নিয়োগ করবেন। বিকল্প হিসেবে নির্বাচন কমিশন নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতি একটি সার্চ কমিটি গঠন করবেন। প্রধান বিচারপতি, দুদক চেয়ারম্যান, মহাহিসাবরক্ষক ও নিয়ন্ত্রক ও এ্যাটর্নি জেনারেলসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের নিয়ে এ সার্চ কমিটি গঠন হতে পারে। এ কমিটি কমিশনের প্রতিটি পদের বিপরীতে তিনজনের নাম প্রস্তাব করবে। সার্চ কমিটির দেয়া নামের তালিকা সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটি যাচাই-বাছাই করবে। সেখান থেকে সংক্ষিপ্ত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। রাষ্ট্রপতি এ তালিকা থেকে নিয়োগ দেবেন। অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছেÑ নির্বাচন কমিশনের সদস্য হবে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট, যার মধ্যে দুজন নারী সদস্য থাকবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার যে প্রস্তাব বিএনপি বা অন্য দলসমূহ করেছে তা কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত বা দ-িত হয়েছেন বা কোন সাম্প্রদায়িক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন এমন ব্যক্তিবর্গ যে কোন পর্যায়ে নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ প্রস্তাবিত আইনে নিষিদ্ধ করতে হবে। এছাড়াও নির্বাচনে টাকার খেলা, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হস্তক্ষেপ আইনে নিষিদ্ধ থাকতে হবে। সংলাপে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপির নেতৃত্বে পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, পলিটব্যুরো সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক, নুরুল হাসান, মাহমুদুল হাসান মানিক, নুর আহমদ বকুল, ইকবাল কবির জাহিদ, হাজেরা সুলতানা এমপি, কামরুল আহসান, এ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি অংশ নেন। বৈঠকে ইসি গঠন নিয়ে আটদফা প্রস্তাব তুলে ধরেন সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বলেন, ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিনিধি দলকে বঙ্গভবনে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে তাতে কিছু কিছু ব্যাপারে ঐকমত্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, গণতন্ত্রে পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থা খুবই জরুরী। নির্বাচনকে ‘স্পোর্টসম্যানশিপ স্পিরিট’ থেকে দেখা উচিত।” গত ১৮ ডিসেম্বর ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন আবদুল হামিদ। সোমবার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রথম দফায় আমন্ত্রিত পাঁচটি দলের সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়। ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে আলোচনা মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের আমন্ত্রিত দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করলেন রাষ্ট্রপ্রধান। প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বলেন, সাক্ষাতের সময় প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। তারা আশা প্রকাশ করেন, রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন, যা ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।
×