ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ঠাকুরবাড়ির গানের আসর ‘এমন সুন্দর বিশ্বছবি’

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৩ নভেম্বর ২০১৬

ঠাকুরবাড়ির গানের আসর ‘এমন সুন্দর বিশ্বছবি’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সঙ্গীতের দেবালয় বলে পরিচিত কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি। যশোর থেকে উঠে এসে কলকাতায় প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্ত ঠাকুর পরিবারের গৃহটি পরিণত হয়েছিল সঙ্গীতের তীর্থভূমিতে। এই পরিবারের নারী-পুরুষ সবাই ছিলেন কম-বেশি সঙ্গীতের অনুরাগী। গানের রচনা কিংবা পরিবেশনা- সব কিছুতেই পরিবারের সদস্যরা ছিলেন সমান দক্ষ। যদিও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঔজ্জ্বল্যে পরিবারের অন্যদের প্রতিভার প্রচার কিছুটা কম ছিল। ঠাকুরবাড়িতে যত প্রকার গান তৈরি হয়েছে সেগুলোর মেজাজ কিংবা চলন ছিল ধ্রুপদী আঙ্গিকের। মঙ্গলবার হেমন্ত সন্ধ্যায় ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের গানগুলো শোনার সুযোগ হলো রাজধানীবাসীর। পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক সংগঠন রক্তকরবী ও ইন্দিরার যৌথ আয়োজনে ঠাকুরবাড়ির গান নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ‘এমন সুন্দর বিশ্বছবি’ শীর্ষক গানের আসর। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুুষ্ঠিত এ আয়োজেন অতিথি ছিলেন কবিগুরুর মেজ ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় ছেলের বড় মেয়ে সুপূর্ণা ঠাকুর। গানের আসর শুরুর আগে তিনি বললেন, আজকে খুব আনন্দ লাগছে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে পুরো ঠাকুর পরিবারের গান পরিবেশন করা হবে। সবার যদি ভাল লাগে, তাহলেই এ আয়োজনের সার্থকতা আসবে। সুপর্ণা ঠাকুরের শৈশব কেটেছে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে। শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, মায়ের কাছে শুনেছি, আমার জন্মের পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোলে আমাকে দেয়া হলো। তিনি আমার নাম রাখলেন ‘স-লীলা’। পরে অন্নপ্রাশনে আমার নাম রাখা হয় সুপূর্ণা। স্বাগত বক্তব্যে কবি আবুল মোমেন বলেন, ঠাকুরবাড়ির গানগুলো সব ধ্রুপদাঙ্গের গান। নিরাকার ব্রহ্ম উপাসনার জন্য রচিত গানগুলোতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যোগ করলেন নতুন ব্যঞ্জনা। তাতে বৃহৎ এর প্রতি ভালবাসার যে আকুতি, তা সংসারের মধ্য থেকেও খুব সহজে উপলব্ধি করা যায়। সঙ্গীতায়োজনের শুরুতেই সম্মেলক কণ্ঠে গীত হয় দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দেহজ্ঞান দিব্য জ্ঞান’ ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জানি তুমি মঙ্গলময়’ গান দুটি। এরপর পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী প্রতীম চক্রবর্তীর কণ্ঠে শোনা গেলো দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আজি কি হরষে’, বাংলাদেশের টিংকু শীল গেয়ে শোনান সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কে রচে এমন সুন্দর বিশ্বছবি’, পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী শ্রীনন্দা মল্লিক সতেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কেন ভোল চির’ ও অপূর্ব তরফদার শোনান সৌদামিনী দেবীর ‘প্রভু পূজিব তোমারে’ গান। এরপর সম্মেলক কণ্ঠে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আহ্ কি চাঁদনী রাত’ গানটি। এর পর বাংলাদেশের শিল্পী সত্যজিৎ ঘোষের কণ্ঠে শোনা যায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঐ যে দেখা যায় আনন্দধাম’। এর পর দুটি সম্মেলক গান- জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ধন্য তুমি ধন্য’ ও ‘প্রণমামি’। পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী প্রবীর ঘোষের কণ্ঠে শোনা যায় স্বর্ণকুমারী দেবীর ‘দীন দয়াময়’ গানটি। সম্মেলক কণ্ঠে প্রতিভা দেবীর ‘হরি তোমা বীণে’ গান শেষে বাংলাদেশের শমী সুহৃদের কণ্ঠে শোনা যায় বলেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অসীম রহস্য মাঝে’, শুভ্রতা দাস ও শ্রাবন্তি ধরের যৌথকণ্ঠে ছিল সরলা দেবীর ‘হে বিজন অতিথি’ ও পূরবী বড়ুয়া কণ্ঠে গীত হয় ইন্দিরা দেবীর ‘তারে রেখো রেখো তব পায়’। সম্মেলক কণ্ঠে ইন্দিরা দেবীর ‘আয় বীণা কোলে’ গানের পর বাংলাদেশের নীলোৎপল সাধ্য ইন্দিরা দেবীর ‘এসো দয়া গলে যাক’, অথৈ দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পথ পাশে মোর রচিনু দেউল’, পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী শ্রীনন্দা মুখ্যোপাধ্যায় ‘পলাশ রাঙ্গা বাসনাগুলি’, শ্রীমন্তী মুখোপাধ্যায় হেমলতা দেবীর ‘বালক প্রাণে আলোক জ্বালি’ গানটি গীত হয়। আয়োজনের শেষ লগ্নে ছিল কবিগুরুর গানের পরিবেশনা। একক কণ্ঠে বাংলাদেশের শীলা মোমেন ‘কিছুই তো হলো না’ গানটি গেয়ে শোনান। সম্মেলক কণ্ঠে কবিগুরুর ‘ধূসর জীবনের গৌধূলীতে’ গানটির মধ্য দিয়ে শেষ ঠাকুর পরিবারের চার প্রজন্মের গানের এ আয়োজন। হাসান মাহমুদের ‘যে দিকে তাকাই উপকূল’ গ্রন্থের প্রকাশনা ॥ প্রকাশিত হলো হাসান মাহমুদের নতুন কাব্যগ্রন্থ ‘যে দিকে তাকাই উপকূল’। বইটি প্রকাশ করেছে মাটিয়া মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিকেশন। মঙ্গলবার জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী, কবি নাসির আহমেদ, কবি ঝর্ণা রহমান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা শেষে বইটির লেখক হাসান মাহমুদ গেয়ে শোনান দেশের গান, হারানো দিনের গান ও নিজের লেখা গান। নৃত্যনাট্য উৎসবের সমাপনী ॥ মঞ্চ থেকে তাল-লয় আর মুদ্রার শৈল্পিকতায় মিলনায়তনে নাচের আলো ছড়িয়ে দিয়েছিলেন শিল্পীরা। শিল্পীদের তাক ধিনা ধিন দোলায় দোলায়িত মিলনায়তনে উপস্থিত নৃত্যপিয়াসী দর্শকরা। সুরের মিশ্রণে নৃত্য পটিয়সীদের নান্দনিকতায় বিমোহিত শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে আগতরা। পিনপতন নীরবতায় তন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করেছিলেন দর্শকরা। উপভোগের পাশাপাশি শাস্ত্রীয় নাচের এই আয়োজন ধ্যানমগ্ন করে তোলে নৃত্যানুরাগীদের। বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা ও শিল্পকলা একাডেমির যৌথ আয়োজনের দ্বিতীয় জাতীয় নৃত্যনাট্য উৎসব ২০১৬ এর সমাপনী সন্ধ্যায় নৃত্যালোকের যাদুতে এভাবেই দর্শকদের সম্মোহিত করেন কত্থক নৃত্য সম্প্রদায় ও বেনুকা ললিতকলা কেন্দ্রের শিল্পীরা। এই আয়োজের সহযোগিতায় রয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় আট দিনব্যাপী এই নৃত্যনাট্য উৎসবের সমাপনী। সাজু আহমেদের পরিচালনায় কত্থক নৃত্য সম্প্রদায় পরিবেশন করেন নৃত্যনাট্য ‘প্রসঙ্গ ৪৭’ ও মোঃ গোলাম মোস্তফা খানের পরিচালনায় ‘রক্ত লাল অহংকার’ নামের একটি নৃত্যনাট্য পরিবেশন করে বেনুকা ললিতকলা কেন্দ্র। এর আগে প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে সমাপনী সন্ধ্যার উদ্বোধন করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার উপদেষ্টা লায়লা হাসান, নাট্যাভিনেতা আ ম ম হাসানুজ্জামান, নাট্য সংগঠক জাহিদ রিপন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্থার সভাপতি মিনু হক, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান খান, নৃত্য শিল্পী দীপা খন্দকার, গোলাম মোস্তফা খান, সাজু আহমেদ প্রমুখ। উদ্বোধন পর্ব শেষে গোলাম কুদ্দুছকে উত্তরীয় পরিয়ে দিয়ে তার হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মিনু হক, লায়লা হাসানকে উত্তরীয় পরিয়ে দিয়ে তার হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন নৃত্যশিল্পী সাজু আহমেদ, নাট্য নির্দেশক আ ম ম হাসানুজ্জামানকে উত্তরীয় পরিয়ে দিয়ে তার হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন নৃত্যশিল্পী গোলাম মোস্তফা খান, জাহিদ রিপনকে উত্তরীয় পরিয়ে দিয়ে তার হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান খান। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, দেশে যখন আতঙ্ক ও ভয়ের সংস্কৃতি বিরাজ করছে সেই দুঃসময়ে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে এগিয়ে এসেছেন নৃত্যশিল্পীরা। শেকড়ের সন্ধানে ও আত্মপরিচয়ের উন্নয়নের জন্য নিজস্ব সংস্কৃতিচর্চার কোন বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, সংস্কৃতির অন্যতম একটি ধারা হচ্ছে নাচ। কিন্তু নাচের চর্চাটা খুবই কম হচ্ছে। এ সময় তিনি তরুণদের মাঝে নৃত্যের চর্চা বেশি বেশি করে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান। বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা ও শিল্পকলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে গত ১৪ নবেম্বর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে শুরু হয় আট দিনের এই নৃত্যনাট্যোৎসব। আট দিনব্যাপী এই উৎসবে মোট ১৫টি নৃত্য সংগঠনের ১৫টি নৃত্যনাট্য পরিবেশিত হয়।
×