ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু সম্মেলন

বাংলাদেশ ৬৭০০ কোটি ডলার দাবি করেছে

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৮ নভেম্বর ২০১৬

বাংলাদেশ ৬৭০০ কোটি ডলার দাবি করেছে

কাওসার রহমান, মারাকেশ, মরক্কো থেকে ॥ জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অভিযোজন কার্যক্রমের জন্য বাংলাদেশ ২০২০ সাল নাগাদ ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার দাবি করেছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ একটি নতুন রোডম্যাপ চেয়েছে। এই রোডম্যাপে পর্যাপ্ত অর্থ যোগান এবং তা সময়মতো প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। মারাকেশ জলবাযু সম্মেলনের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে এক পর্যালোচনায় বাংলাদেশ বলছে, সবুজ জলবায়ু তহবিল থেকে অর্থ প্রাপ্তি স্বল্পন্নোত দেশগুলোর জন্য একটি জটিল প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো এই তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ পাচ্ছে না। ভবিষ্যত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অর্থায়ন বাড়াতে হলে সবুজ জলবায়ু তহবিলকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে- এমনটাই মনে করছে বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিযোজন প্রকল্পে অর্থায়নে এ্যাডাপটেশন ফান্ড একটি কার্যকরী তহবিল। এই তহবিল নিয়ে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্য বিভক্তি দেখা গেলেও বাংলাদেশ চাইছে এই তহবেিলর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক। উন্নয়নশীল দেশগুলোরও একই অভিমত। তবে উন্নত দেশগুলো এর বিরোধিতা করে বলছে, সবুজ জলবায়ু তহবিল বা গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড কার্যকর হওয়ার পর এ্যাডাপটেশন ফান্ডের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। বাংলাদেশ অবশ্য এলডিসি ফান্ডেও পর্যাপ্ত অর্থ যোগানের দাবি জানিয়েছে। এবারের জলবায়ু সম্মেলনে অর্থায়নের বিষয়টি দরকষাকষির কেন্দ্রবিন্দুতে। বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা। জলবায়ু অভিযোজনের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশেরও পর্যাপ্ত অর্থের প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয় ও ক্ষতির (লস এন্ড ড্যামেজ) ইস্যুতে মারাকেশ সম্মেলনে অগ্রগতি নিয়ে বাংলাদেশ অসন্তোষ প্রকাশ করছে। বাংলাদেশ মনে করছে, ক্ষয় ও ক্ষতির ইস্যুটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা। এই ইস্যু নিয়ে লস এন্ড ড্যামেজের নির্বাহী কমিটি কাজ করছে। কমিটি দুই বছরের একটি কর্মপরিকল্পনা এবং পাঁচ বছর মেয়াদী ধারাবাহিক পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয় ও ক্ষতির ব্যাপারে ঝুঁকি হস্তান্তর এবং অভিবাসীদের ব্যাপারে টাস্কফোর্সৃ গঠনের বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ওয়ারসো ইন্টারন্যাশনাল মেকানিজমের পর্যালোচনা তিন বছর পিছিয়ে এখন ২০১৯ সালে স্থানান্তর হয়েছে। অথচ মারাকেশ সম্মেলনেই এই ওয়ারসো মেকানিজমের পর্যালোচন সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। এদিকে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা) বাংলাদেশের এক নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। এতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন, ড. আইনুন নিশাত প্রমূখ। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করছে। বিশেষ করে ২০১৬ সাল বাংলাদেশের জন্য খুবই খারাপ বছর। দেশের প্রধান নদী ব্রহ্মপুত্র বেসিনে এ বছর বন্যা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ধরলা বেসিনেও এবার বন্যার তীব্রতা লক্ষা করা গেছে। অন্যদিকে বর্ষার পিক মৌসুমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল খুবই কম। দেশের উত্তরাঞ্চলে খরা অবস্থা বিরাজ করেছে। ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলও বিপর্যস্ত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানোতে। এসব লক্ষণ প্রমাণ করে জলবায়ুর দুর্যোগ ক্রমেই বাড়ছে। বাংলাদেশ মনে করে, প্যারিস চুক্তির কার্যকর বাস্তবায়নই এই দুর্যোগ রুখতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্যারিস চুক্তি অনুমোদন করেছে। এই চুক্তি অনুমোদনে সদস্য দেশগুলোর স্বতঃস্ফূর্ততায় বাংলাদেশ খুবই খুশি। এই পর্যন্ত ১৯৭টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৯১টি দেশ প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এবং ১১০টি দেশ তা অনুমোদন করেছে। আমরা আশা করছি, খুব শীঘ্রই সকল দেশ এই চুক্তি অনুমোদন করবে। যা চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়নে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উপর চাপ সৃষ্টি করবে। মন্ত্রী বলেন, প্যারিস চুক্তিতে বিভিন্ন কর্মকা-ের জন্য নির্দিষ্ট সময় সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। আমরা চাই জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নে “প্যারিস রুল বুক” তৈরির ব্যাপারে বাস্তব অগ্রগতি। এ ব্যাপারে সমঝোতাকারীদের মধ্যে তাগিদ থাকা প্রয়োজন। আমাদের আগামী দুই বছরের মধ্যে অভিযোজনের রুলবুকও তৈরির কাজ শেষ করতে হবে। তাই এই রুলবুক তৈরির কাজ দ্রুততর করা উচিত।
×