ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১১ নভেম্বর ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ সাত সমুদ্র তেরো নদীর দূরত্ব। তাতে কী? যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বিপুল আগ্রহ দেখা গেল বাংলাদেশে। রাজধানী শহর ঢাকায় সঙ্গত কারণেই উত্তাপ উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। একেবারে সাধারণ মানুষের মুখেও ছিলেন হিলারি আর ট্রাম্প। শেষতক কে হচ্ছেন বিশ্বমোড়ল? জানতে দারুণ কৌতূহলী ছিলেন ঢাকাবাসী। এবং অতঃপর বুধবার সকালে পাওয়া গেল উত্তর। আমেরিকার প্রভাবশালী সব মিডিয়াকে ভুল প্রমাণ করে সামনে এলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আলোচিত সমালোচিত রিপাবলিকান প্রার্থী পেলেন ওভাল অফিসের দায়িত্ব। নির্বাচন গত হয়েছে। কিন্তু রেশ কাটেনি। এখন ঢাকার সব কাগজে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশাল বিশাল ছবি। দীর্ঘ জীবনের রটনা ঘটনার শেষ নেই। সেগুলো খুঁটিয়ে পড়ছেন পাঠক। চলছে নানামুখী বিশ্লেষণ। অভিজ্ঞরা বেশ সতর্ক হয়েই মন্তব্য করছেন। তবে রাজধানীর সাধারণ মানুষের কথাগুলোও কম উপভোগ্য নয়। অনেকেরই আলোচনায় অনিবার্য হয়ে আসছে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের নাম। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা যে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করেন তা গোপনে ক্লিনটন ফাউন্ডেশন পর্যন্ত পৌঁছেছিল! হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী তহবিলে ২০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছিলেন এই ‘গরিবের ব্যাংকার।’ কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের একটি চায়ের দোকানে কান পাততেই শোনা গেল সেই আলোচনা। একজন বেশ মজা করেই বললেন, ‘ইউনূস ডাক্তারের ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে বাংলাদেশের অনেক সাধারণ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছেন। এবার সব হারালেন হিলারি ক্লিনটন!’ কথা শেষ হতে না হতেই অন্যজন ছোঁ মেরে নিলেন। বললেন, ‘বিএনপির অবস্থাটা দেখেন, হিলারি জিতলে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে যাবে। এই আশায় আমেরিকাতেও তারা লোক পাঠাইছে হিলারির ইলেকশন করতে। এখন কী হইলো?’ একই প্রসঙ্গে নীলক্ষেত থেকে রিকশায় টিএসসি আসতে আসতে কথা হচ্ছিল চালকের সঙ্গে। তরুণ চালক আশিকুর বললেন, ‘টাম্পে জিতছে শুনছি। হেয় মুসলমানরে যদি আমেরিকা থাইকা বাইর কইরা দেয় তাইলে তো সমস্যা, না?’ হিলারির পরাজয়ে বেদনাহত হয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় আলোচনা হচ্ছিল বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে। আড্ডারত তরুণদের অনেকের মতে, ট্রাম্প মন্দ লোক। যারপরনাই অশ্লীল। উগ্রবাদী। এমন একজন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ায় হুমকির মুখে পড়বে বিশ্ব। আবার কেউ কেউ বলছিলেন, আমেরিকার নেতা পরিবর্তন হয়। পররাষ্ট্রনীতি একই থাকে। নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে ট্রাম্প যেসব আপত্তিজনক কথা বলেছেন, কাজের বেলায় তা হবে না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় এখনও ক্ষুব্ধ প্রতিবাদী সাধারণ মানুষ। রাজধানী শহর ঢাকায় প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হচ্ছে। শাহবাগ এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে চলছে প্রতিবাদ। মন্দিরে আক্রমণ, প্রতিমা ভাংচুর, বাড়িঘর লুটের মতো বর্বর কর্মকা-ের সঙ্গে যারা জড়িত, যারা মদদদাতা প্রত্যেকের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হচ্ছে সভা সমাবেশ মানববন্ধন থেকে। বৃহস্পতিবার অভিনব কায়দায় সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা। ‘আমি মালাউন বলছি’ লেখা দীর্ঘ ব্যানার নিয়ে রাস্তায় নামেন তারা। সকলের গায়ে ছিল কালো পোশাক। মুখেও নিজ হাতে কালো রং মেখে নেন তারা। পুজোর তুলসীতলা ল-ভ- করার প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে তাদের হাতে ছিল একটি করে তুলসীগাছ। প্রতিবাদী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগÑ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই ব্যর্থতা ঢাকতে উল্টো তিনি হিন্দুদের ‘মালাউন’ বলে গালমন্দ করেছেন। মন্ত্রীকে ‘কিল মারার গোঁসাই’ আখ্যা দিয়ে তারা বলেন, আমরা তার অপসারণ চাই। দায়িত্ব পালনে ইউএনও একইরকম ব্যর্থ হয়েছেন জানিয়ে তারা বলেন, প্রশাসনের ওই ব্যক্তি কাজের কাজ কিছু করতে পারেনি। এরপরও তার কোন অনুতাপ নেই। বরং তার ঔদ্ধত্য দেখে মনে হয়েছে এটা অন্য কোন দেশ। ইউএনওকে প্রত্যাহার করা যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে তারা বলেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাবির থিয়েটার এ্যান্ড পারফর্মেন্স স্টাডিজ বিভাগের একটি পরিবেশনার মধ্য দিয়েও নিন্দা জানানো হয় ঘটনার। আবারও আলোচনায় বিজিএমইএ ভবন। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারী ও রফতানিকারক সংগঠন বিজিএমইএ’র ১৮তলা ভবনটিকে বহু আগেই অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়া শেষে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য বিনষ্ট করে নির্মিত ভবন গুঁড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। এরপরও আইনী মারপ্যাঁচ। কালক্ষেপণ। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখে আপীল বিভাগ। সম্প্রতি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাসহ আপীল বিভাগের চার বিচারপতির স্বাক্ষরের পর এই রায় প্রকাশ করা হয়। এখন ভবন ভাঙ্গার ক্ষেত্রে আর কোন বাধা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। আর তাহলে এটি হবে আরও একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত। জায়গা দখল করে অবৈধ ভবন নির্মাণে অনুৎসাহিত হবেন ক্ষমতাধররাও। এখন অপেক্ষা, কবে, কখন শুরু হয় ভাঙ্গার কাজ।
×