ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সহজিয়া সুরে ঝলমলে আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসব শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১১ নভেম্বর ২০১৬

সহজিয়া সুরে ঝলমলে আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসব শুরু

মনোয়ার হোসেন ॥ শহরে ভেসে বেড়াল সহজিয়া গানের সুর। শেকড়সংলগ্ন সেই মায়াবি সুরের টানে অগণন শ্রোতা হাজির হলো উৎসব আঙিনায়। মাটির গানে পুলকিত হলো সঙ্গীতানুরাগীদের অন্তর আত্মা। দেশ-বিদেশের শ্রোতানন্দিত লোকসঙ্গীত শিল্পীদের পরিবেশনায় মোহাবিষ্ট হলো নগরের গানপ্রেমীরা। আর এভাবেই সূচনার দিনে ঝলমলে হয়ে উঠে ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসব। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হলো তিনদিনের এই লোকগানের উৎসব। এদিন গান শোনান বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাজ্য ও পাকিস্তানের শিল্পীবৃন্দ। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত চলে লোকজ গানে সাজানো এ সঙ্গীতাসর। হেমন্ত সন্ধ্যায় উৎসবের শুরু হয় লোকগানের সুরে লোকনৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে। বর্ণিল পোশাকে মঞ্চে আসে এক ঝাঁক নৃত্যশিল্পী। হেইয়া রে হেইয়া জোরে মারো টান, বকুল ফুল বকুল ফুল সোনা দিয়ে হাত কেন হাত কেন বান্ধাইলিসহ কয়েকটি গানের আশ্রয়ে নাচ করে পল্লবী ড্যান্স গ্রুপ। আন্তর্জাতিক এ লোকগীতির আসরে প্রথম গান শোনান হবিগঞ্জের আবদুর রহমান বাউল। প্রকৃতির প্রেরণাদীপ্ত শিল্পীর কণ্ঠে শুরুতেই গীত হয় ‘আমি তোমার হইতে পারলাম না’। দেহতত্ত্ব ও ভাবতত্ত্বের মাঝে জীবনের অর্থ খুঁজে ফেরা বাউল পরের গানে বলে যান ‘তুমিও মানুষ আমিও মানুষ’। এরপর গেয়ে শোনান বাউলসাধক শাহ আবদুল করিমের গান ‘কি জাদু করিয়া বন্দে মায়া লাগাইছে’। পরের গানে বলে যান সম্প্রীতির কথা ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম/আমরা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম/গ্রামের নওজোযান হিন্দু মুসলমান মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদী গাইতাম’। প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান সান ইভেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী। এছাড়া বক্তব্য রাখেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, গ্রামীণফোনের চিফ মার্কেটিং অফিসার ইয়াসির আযমান, ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ও মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোনিয়া বশির কবির। উদ্বোধনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুর মাল আবদুল মুহিত বলেন, আমাদের সাধারণ মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নাচ ও গান। সে কারণেই আমাদের সংস্কৃতিটাও স্বভাবজাত। তাই আমরা যতই অশিক্ষিত হই আমাদের রুচি যথেষ্ট পরিশীলিত। এটা আমাদের গর্ব। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঞ্চে আসেন কুষ্টিয়ার শিল্পী টুনটুন বাউল। লালনের অনুসারী এ শিল্পীর কণ্ঠে শোনা যায় লালনের বিখ্যাত সব গানগুলো। যুক্তরাজ্যের সাইমন থ্যাকার্স সাভারা কান্তির সঙ্গে ভারতের রাজু দাস বাউল ও বাংলাদেশের ফরিদা ইয়াসমিনের পরিবশেনাটি ছিল অনবদ্য। একেবারে পাশ্চাত্যের লোকসঙ্গীতের সঙ্গে প্রাচ্যের খাঁটি লোকসঙ্গীতের অপূূর্ব সংমিশ্রণ বলা যায়। এরপর মঞ্চে আসেন পাকিস্তানের শিল্পী জাভেদ বশির। হিন্দুস্তানি ক্ল্যাসিকাল ঘরানার এ শিল্পী বাংলাদেশে অধিক পরিচিতি লাভ করেন বলিউডের ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বাই দোবারা’ চলচ্চিত্রে ‘ইয়ে তুনে ক্যায়া কিয়া’ গানের মধ্য দিয়ে। সে সঙ্গে ইউটিউবে ‘কোক স্টুডিও পাকিস্তান’ দেখেও যে তার বড় ধরনের ভক্ত এ দেশে তৈরি হয়েছে, তার প্রমাণ মিলল তার নাম ঘোষণা হতেই। প্রথম দিনের অন্তিমলগ্নে উৎসবের সবটুকু আলো যেন নিজের দিকে টেনে নেন লোকগানে বাংলার অহঙ্কার মমতাজ বেগম। এই শিল্পী মঞ্চে হাজির হতেই করতালির মাধ্যমে শ্রোতারা জানিয়ে দেন তাঁর প্রতি অনুরাগের কথা। সব মিলিয়ে তিনদিনের এ উৎসবের প্রথম দিনেই সুরের কাছে সমর্পিত সঙ্গীতানুরাগীদের আগমনে প্রাণবন্ত হয়ে লোকগানের এই মহাসঙ্গীতযজ্ঞে। তারুণ্যের প্রাধান্য থাকলেও নানা বয়সী মানুষের প্রাধান্য তরুণ থেকে মধ্যবয়সী পেরিয়ে বয়স্ক সঙ্গীতানুরাগীর মাঝেও সুরের এই বৈভব বয়ে যায়। এবারের উৎসবের বাংলাদেশসহ ছয় দেশের শতাধিক শিল্পী অংশ নিচ্ছেন। দ্বিতীয়বারের মতো এ উৎসবের আয়োজন করছে সান ইভেন্টস। মেরিল নিবেদিত উৎসবে সহযোগিতায় রয়েছে জিপি মিউজিক, ঢাকা ব্যাংক ও মাইক্রোসফট বাংলাদেশ। আজকের আয়োজন ॥ আজ শুক্রবার ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসবের দ্বিতীয় দিন। বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে এদিন পরিবেশনায় অংশ নেবেন জালাল ও লতিফ সরকার। আরও থাকছে বাউল শফি মফ্ফল আর লাবিক কামাল গৌরবের যুগলবন্ধী। এদিনের বিশেষভাবে শ্রোতাদের নজর কাড়বেন ভারতের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কৈলাশ খের। নিজেদের গান নিয়ে আসবেন ভারতের লোকব্যান্ড দল ইন্ডিয়ান ওশেন। লোকজ সুরের সঙ্গে ফ্লামেঙ্কো নাচের যূথবদ্ধ পরিবেশনায় থাকবে স্পেনের কারেন লুগো ও রিকার্ডো মোরো।
×