ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

অবকাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যয় হবে

পাঁচ বছরে এডিবি দেবে ৬৪ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩ নভেম্বর ২০১৬

পাঁচ বছরে এডিবি দেবে ৬৪ হাজার কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য আগামী পাঁচ বছরের অংশীদারিত্ব কৌশল (সিপিএস) ঘোষণা করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল মেয়াদে এ কৌশলপত্রের আওতায় বাংলাদেশকে ৮০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেবে সংস্থাটি। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ৮০ টাকা) অনুযায়ী এর পরিমাণ প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা। দেশের অবকাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়নে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এডিবির আবাসিক প্রতিনিধি কাজুহিকো হিগুচি সংস্থাটির ‘বাংলাদেশ কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্র্যাটেজি (সিপিএস) ২০১৬-২০২০’ শীর্ষক কৌশলপত্র তুলে ধরেন। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন। এছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি এবং সরকারী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন এ অনুষ্ঠানে। প্রতি পাঁচ বছরে বাংলাদেশ কী পরিমাণ সহায়তা পাবে তা কৌশলপত্রে বলা থাকে। এতে এডিবি কোন ধরনের প্রকল্পে অগ্রাধিকারভিত্তিতে অর্থ দেবে, তাও উল্লেখ থাকে। সর্বশেষ কৌশলপত্রে ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল মেয়াদে ৫০০ কোটি ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এডিবি। সে হিসেবে, আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশকে আগের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি (৩০০ কোটি ডলার) ঋণ ও অনুদান দেবে সংস্থাটি। সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ কৌশলপত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন কৌশলে মোটা দাগে দুটি উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে। এক. অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশিতে রাখা এবং শহরে ও গ্রামে আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। দুই. প্রবৃদ্ধিকে আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক করার মাধ্যমে গ্রামীণ ও সুষম আঞ্চলিক উন্নয়ন দ্রুততর করা। এক্ষেত্রে পরিবেশগত প্রভাবের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে। বুধবার জানানো হয়, সরকারী ও বেসরকারী খাতের জন্য এডিবির নতুন ঋণের মধ্যে সহজশর্তে ৫০০ কোটি ডলার ও কিছুটা কঠিন শর্তে ৩০০ কোটি ডলার ঋণ রয়েছে। জানা গেছে, আগামী বছরগুলোতে এডিবি যে ধরনের প্রকল্পে সহায়তা দেবে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- রেল ও সড়ক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়ন, রাজধানীর গণপরিবহনব্যবস্থার উন্নয়ন, গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ; আন্তঃদেশীয় জ্বালানি বাণিজ্য ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন। এছাড়া বিভিন্ন খাতে ইকোনমিক করিডর উন্নয়ন; পানিসম্পদ ব্যবস্থা ও বন্যানিয়ন্ত্রণ, পল্লী এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে অবকাঠামো নির্মাণ; শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নেও সহায়তা দেয়া হবে। সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্ব (পিপিপি) ব্যবস্থাকে কার্যকর করতেও সহায়তা করবে এডিবি। বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতির প্রশংসা করে এডিবির আবাসিক প্রতিনিধি কাজুহিকো হিগুচি বলেন, ২০১১ থেকে ২০১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ গড়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হারে শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত অর্থবছর ৭ শতাংশ পেরিয়ে গেছে। এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হবে। এডিবির এই কর্মকর্তা সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচনে ধারাবাহিক সাফল্য, এবং কর্মক্ষম তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধিকে বাংলাদেশের শক্তির জায়গা হিসেবে তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে রফতানি বাণিজ্যে তৈরি পোশাক খাতের ওপর অতি নির্ভরশীলতা, বেসরকারী খাতে বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতা, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীর অভাব, গ্রামীণ দারিদ্র্য এবং জলবায়ু ঝুঁকির বিষয়গুলোকে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন। কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কৌশলপত্রে বেসরকারী খাতে সরাসরি বিনিয়োগে গুরুত্ব দিয়েছে এডিবি। জানা গেছে, ৮০০ কোটি ডলার সহায়তার মধ্যে বেসরকারী খাতের জন্য থাকছে ২০০ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী এর পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। পরিবহন, জ্বালানি, তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, কৃষি, স্বাস্থ্য এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারী খাতের ঋণ পাবে। কিছুটা কঠিন শর্তের এ ঋণের সুদহার হবে প্রায় ৪ শতাংশ। পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৫ বছরের মধ্যে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। গত কয়েক বছরে বেসরকারী খাতে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে এডিবি। সামিট গ্রুপ, গ্রামীণফোন, প্রাণ গ্রুপ, ব্র্যাক ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক এবং পূবালী ব্যাংক এডিবির ঋণ নিয়েছে। জানা গেছে, সরকারী প্রকল্পে এডিবি দেবে ৬০০ কোটি ডলার। বিনিময় হার অনুযায়ী এর পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা। নতুন কৌশলপত্রে বাংলাদেশের বিদ্যুত খাতের উন্নয়ন, আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও সংযোগকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, এডিবি নতুন অংশীদারিত্ব কৌশলের আওতায় বেশ কয়েকটি প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহ দেখিয়েছে। এর মধ্যে জ্বালানি সক্ষমতা, সরবরাহ বৃদ্ধি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, আঞ্চলিক বিদ্যুত গ্রিড স্থাপন এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলরুটের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (সাসেক) সংযোগ স্থাপন কর্মসূচীর আওতায় মোট পাঁচ প্রকল্পে এডিবি ঋণ দিতে চায়। এডিবির সহজ শর্তের এ ঋণের সুদ হার ২ শতাংশ। পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৫ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। অনুষ্ঠানে ইআরডি সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, অর্থছাড়ে দীর্ঘসূত্রতা দূর করতে কিছু উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। জমি অধিগ্রহণ, পরামর্শক নিয়োগ ও টেন্ডার তৈরির মতো কাজগুলো একনেকে উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন পাওয়ার পর করতে হয়। এতে মূল প্রকল্পের কাজ শুরু করতেই অনেক দেরি হয়ে যায়। প্রকল্প অনুমোদনের আগে এসব কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের পরামর্শ ও সহযোগিতা নেয়া হবে। অর্থছাড়ের প্রক্রিয়া যাতে যৌক্তিক সময়ে সম্পন্ন হয় এজন্য তিনি সরকারের সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগীদের আরও বেশি সমন্বয়ের ওপর জোর দেন।
×