ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

গড়ে তোলা হয়েছে শতাধিক ভবন ও মার্কেট

ভূমিদস্যুর দখলে সিংহ নদী

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২২ অক্টোবর ২০১৬

ভূমিদস্যুর দখলে সিংহ নদী

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ২১ অক্টোবর ॥ কেরানীগঞ্জের সিংহ নদীটি দখল করে নিয়েছে ভূমিদস্যুরা। অবৈধ দখলের ফলে দিনে দিনে সিংহভাগ মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। বিগত চার দশকে নদীর ত্রিশ কিলোমিটার জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে শতাধিক ভবন ও মার্কেট। নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফসলি জমিতে সেচ ও নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। সরেজমিন দেখা গেছে, নদী ক্রমাগত ভরাট করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন ও মার্কেট। ভূমিদস্যুরা দুই হাতে কামিয়ে নিচ্ছে কালো টাকা। ইতোমধ্যে তারা মাঝ নদীতে বালু ভরাট করে নির্মাণ করছে বহুতল ভবন। এ অপকর্মে জড়িত উপজেলা ভূমি ও রাজস্ব বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। ভূমিদস্যুরা ভুয়া ও জাল কাগজপত্র দেখিয়ে কেউবা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে, কেউবা কোন প্রকার কাগজপত্র না দেখিয়েই দখল করে নিয়েছে সিংহ নদী। অথচ কোন এক সময় লোকজন এই নদী দিয়ে বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীতে নৌপথে যাতায়াত করত। তাছাড়া ব্যবসায়ীরা রাজেন্দ্রপুর, বিক্রমপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, খুলনা এমনকি ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ ক্ষেত্রেও এই নদী ব্যবহার করত। সিংহ নদীটি ধলেশ্বরীর আকশাইল এলাকা দিয়ে রামেরকান্দা, অগ্রখোলা, শিকারীটোলা ও খাড়াকান্দি এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পুনরায় ধলেশ্বরীর সাথে মিশেছে। অপরদিকে নদীটি রামেরকান্দা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বেলনা, আকশাইল ও কলাতিয়া হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর সাথে মিশেছে। ভারতবর্ষের সময় এই খরস্রোতা নদী দিয়ে শত শত মণের ধান-পাটবোঝাই নৌকা পাল তুলে যাতায়াত করত। সিংহের মতো এই নদীর আওয়াজ ছিল। এজন্য লোকেরা এই নদীকে সিংহ নদী বলে আখ্যায়িত করেছে। ভূমিদস্যুদের দখলের কারণে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে নদীটি এখন খালে পরিণত হয়েছে। অথচ দেখার কেউ নেই। এ ব্যাপারে আব্দুল্লাপুর এলাকার শুক্কুর আলী (৭০) বলেন, ছোটবেলায় এই নদীতে নৌকাবাইচ করেছি। তখন বড় বড় নৌকা পাল তুলে চলত। কে বা কার নদীটি ভরাট করেছে তা জানি না। বাস্তা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসকর আলী বলেন, সিংহ নদীর সিংহের মতোই গর্জন ছিল। বাল্যকালে নদী পার হতে ভয় পেতাম। ভূমিদস্যুরা নদীর দুইপাড় দখল করে নিয়েছে। আমরা জানি কেরানীগঞ্জ অচিরেই একটি উন্নত শহরে পরিণত হতে যাচ্ছে। নৌপথে যাতায়াত ও পানি নিষ্কাশনের জন্য সিংহ নদীর প্রয়োজন আছে। কিন্তু সিংহ নদীর পানিপ্রবাহ ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা ভূমি রাজস্ব কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, সারাদেশের নদ-নদী দখল করে নিচ্ছে ভূমিদস্যুরা। ঢাকার কাছে কেরানীগঞ্জের জমির মূল্য অনেক বেশি। এজন্য কেরানীগঞ্জের খাল ও নদীগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। অতি শীঘ্রই বুড়িগঙ্গা ও সিংহ নদী আগে যেমন ছিল, তা উদ্ধার করার জন্য তৎপর আছি। ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, অতি শীঘ্রই তারা সিংহ নদীতে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান চালাবে। এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক ব্যক্তি জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সিংহ নদী দখল করেছে। দখলকারীরা হলোÑ সালাহ্উদ্দিন, আবুল কালাম, শওকত আলী, ফজলু মিয়া, সিদ্দিক মিয়া, নজরুল ইসলাম, লাল মিয়া, মোনা মিয়া, হাফিজউদ্দিন, আব্দুল জব্বার, আব্দুল মালেক, আব্দুল হামিদ, আব্দুল মন্নাফ, নুরুজ্জামান, খাসি বাবুল, মনির হোসেন, বোরহানউদ্দিন প্রমুখ। এই সকল দখলকারীর বাড়ি হলো উপজেলার কান্দাপাড়া হতে কলাকান্দি ও রামেরকান্দা এলাকায়।
×